পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৬০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২০৬ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত চতুর্থ ভাগ অনেক কথাই শুনা যায়; তন্মধ্যে গোবিন্দচন্দ্র মহারাজের অস্ত্রাঘাতে মৃত্যু বিষয়ক তদীয় ভবিষ্যদ্বাণীর সফলতা ইতিহাসে প্রমাণিত হইয়াছে। গুলুমিয়া কাছাড় রাজ্যে উপনিবিষ্ট মোসলমানগণের মধ্যে এক অতি প্রবল পরাক্রান্ত ব্যক্তি ছিলেন,—“নবাব” এই উপাধিতে তাহার প্রতিপত্তি প্রকটিত হইয়াছিল। মহারাজ গোবিন্দ চন্দ্রের বিষদৃষ্টিতে পড়িয়া অবশেষে ইহাকে কারারুদ্ধ হইয়া অনশনে প্রাণত্যাগ করিতে হয়। কবি ভুবনেশ্বর বাচস্পতি মহারাজ সুরদপের মাতা মহারাণী চন্দ্রপ্রভাব আদেশে “নারদী রসামৃত,” নামক গ্রন্থ লিখিয়া চিরস্মরণী হইয়া গিয়াছেন। এই গ্রন্থের রচনা ১৬৫২ শকে (১৭৩০ খৃঃ) শেষ হয়। “হরিধ্বনি কর গ্রন্থ হৈল সমাপন। ষোলশত বায়ান্ন শাকেতে হৈল লিখন॥ তাম্ৰধ্বজ মহারাজ ছিলা মহাভাগ । সৰ্ব্বলোকে সদ যারে করে অনুরাগ॥ তান পুত্র রাজা শুরদর্প মহাশয় । চন্দ্রপ্রভা নামে দেবী তান মাতা হয়৷ কবি বাচস্পতি তান বাক্য অনুসারে । শ্রীনারদী রসামৃত রচিলা পয়ারে৷ উপসংহার আমরা উত্তরাংশে কাছাড়ের কথা অতি সংক্ষেপেই সমাপ্ত করিলাম; কিন্তু বিবেচনা করিয়া দেখিলে এই অংশই শ্রীহট্টের ইতিবৃত্তের পক্ষে বিশেষ প্রয়োজনীয়;—কেননা, কাছাড়ে উপনিবিষ্ট বাঙ্গালী ব্রাহ্মণ ভদ্র হিন্দু মোসলমান প্রায় সমস্তই শ্রীহট্ট হইতে গিয়াছেন। ফলতঃ "বৃহত্তর" শ্রীহট্টের এই পূৰ্ব্বাঞ্চলের কাহিনী শ্রীহট্টের গৌরবসূচক। তথাপি বরং কাছাড়ের কিঞ্চিৎ বিবরণ দিতে পারা গিয়াছে, কিন্তু বৃহত্তর শ্রীহট্টের পশ্চিম ও দক্ষিণাংশ–বৰ্ত্তমান ময়মনসিংহের পূৰ্ব্বাংশ ও ত্রিপুরার উত্তরাংশ—আমরা স্পর্শ করিতেও পারি নাই। ইতিহাস কখনও কেহ চূড়ান্ত করিয়া লিখিয়া যাইতে পারেনা—ভবিষ্যত ইতিহাসের গবেষণার অবকাশ যথেষ্ট থাকিয়া যায়; বিশেষত বৃহত্তর শ্রীহট্টের ইতিহাস সংকলন আমাদের অসাধ্য। মহত্তর ব্যক্তির কাজ তাই ভবিষ্য ঐতিহাসিকের উপর সে ভার অর্পণ পূৰ্ব্বক আমরা ক্ষুদ্র লেখনী এই স্থলেই উপসংহ্যাধ করিলাম ।