পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৬১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরিশিষ্ট শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ২১৩ চীন পৰ্য্যটক ইউয়ান চেয়াঙ্গের অন্যায় করিয়া একটু দিকভ্ৰম কল্পনা করিয়া লইয়া তাহার ভ্রমণকাহিনী হইতে অতি সহজেই পাজটি "–" বিহার বলিয়া প্রমাণ করি। আদিশূর বল্লালসেন প্রভৃতির স্থানীয় রাজধানীও এইরূপ কাল্পনিক। সাধুদের বিষয়ে উন্মাদ অৰ্দ্ধবিস্তৃত জনশ্রুতিও এইরূপে বিচার বিবেচনা না করিয়া জেলার ইতিহাসের অন্তর্গত করা হয়। কিন্তু সাহিত্যের জুরীগণ নিশ্চয়ই এগুলিকে “সাধু শোনাক্ত honest identification" নহে বলিয়া অগ্রাহ্য করিবেন, এবং কিছুদিন পরে জেলার ইতিহাসের সেই অংশও আরব্য উপন্যাসের শ্রেণীতে যোগ দিবে। দ্বিতীয় মারাত্মক দোষটি একটা ব্যবসাদারী চালের ফল । লিখিবার মত উপকরণ একেবারেই নাই, অথচ বই বড় করিতে হইবে। কাজেই বৃথা বাগাড়ম্বর এবং অল্প কথা ফেনাইয়া তুলিবার প্রলোভন হইয়া উঠে। বিশেষতঃ বাঙ্গালা সাহিত্যে সমালোচনা এখনও এত নিম্নস্তরে আছে যে ভাবের দৈন্য অলঙ্কারের আড়ম্বরে এবং ভাষার ঝঙ্কারে লুকাইয়া ফেলিলে লেখক বাহবা পান। সুখের বিষয় “শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত”–লেখক এ লোভ কটাইতে পারিয়াছেন। ইহার বিশুদ্ধ সংবাদ ঠিক তারিখ ও সংখ্যা, চিত্র, দলিলের প্রতিলিপি, বংশাবলী প্রভৃতির প্রথম শ্রেণীর উপকরণ বলিয়া গণ্য হইবে। এইরূপ বিশুদ্ধ ও সূক্ষ্ম তথ্যের ভিত্তি না পাইলে কোন ইতিহাস স্থায়ী হইতে পারে না। সমাজের ইতিহাস লিখিবার পক্ষেও গ্রন্থখানি এক অত্যাবশ্যক খনি। - আমরা ভরসা করি যে “শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত" বঙ্গভাষীদের মধ্যে যথেষ্ট সম্মান পাইবে, এবং _্যতবাবু এইরূপ প্রণালী ও উৎকর্ষের সহিত দ্বিতীয় বালুম লিখিয়া তাহার কীৰ্ত্তি সম্পূর্ণ করিবেন।” সাহিত্য সংবাদ—চৈত্র ১৩১৮ বাং (১ম বর্ষ ৩১৫ পৃঃ) পণ্ডিত শ্রীযুক্ত অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি মহাশয় "শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত” প্রণয়ন করিয়াছেন। একটি প্রদেশের বা একটি জেলার ইতিহাস হইলেও এই গ্রন্থ প্রণয়নে অমানুষিক পরিশ্রমের, বিপুল অর্থব্যয়ের এবং গভীর গবেষণার পরিচয় পাওয়া যায়; আর একমাত্র শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত প্রণয়নেই সাহিত্য সংসারে চৌধুরী মহাশয়ের কীৰ্ত্তি ও যশঃপ্রভা চিরসমুজ্জ্বল থাকিবে বলিয়া মনে করিতে পারি। শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত প্রণয়নে চৌধুরী মহাশয়ের নামের সঙ্গে পণ্ডিত শ্ৰীযুক্ত পদ্মনাথ ভট্টাচাৰ্য্য বিদ্যাবিনোদ এম, এ মহাশয়ের নামও চিরস্মরণীয় হইয়া রহিল। শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত প্রণয়নের কল্পনা ইহাদের দুই জনের মনে যুগপৎ উদয় হইয়াছিল। ১৩০৯ সালের আশ্বিন মাসে শ্রীযুক্ত পদ্মনাথ ভট্টাচাৰ্য্য প্রোক্ত ইতিহাস সঙ্কলনের উপযোগী উপাদান সমূহ সংগ্রহের জন্য বিজ্ঞাপন পত্র প্রচার করেন। সেই সময়, চৌধুরী মহাশয় “শ্রীহট্টাদীপিকা” নামক শ্রীহট্টের ইতিহাস বিষয়ক গ্রন্থ মুদ্রণ জন্য মুদ্রাযন্ত্রে প্রেরণ করিয়াছিলেন। ভট্টাচাৰ্য মহাশয়ের বিজ্ঞাপন পত্র পাইয়া চৌধুরী মহাশয় তাহাকে আপনার গ্রন্থের বিষয় লিখিয়া পাঠান। ইহার পর ভট্টাচাৰ্য মহাশয় আপনার সংগৃহীত সমস্ত উপাদান চৌধুরী মহাশয়কে প্রদান করেন। তখন চৌধুরী মহাশয় শ্রীহট্টের এই বিস্তৃত ইতিবৃত্ত প্রণয়নে প্রবৃত্ত হন। পণ্ডিত শ্রীযুক্ত পদ্মনাথ ভট্টাচার্যের আর এক মহত্ত্ব—তিনি এই সুবৃহৎ গ্রন্থের মুদ্রণব্যয় বহন করিয়াছেন। তিনি রাজা নহেন, জমিদার নহেন, ধনবান নহেন; অথচ তিনি আপন জেলার ইতিবৃত্ত প্রকাশের এই ব্যয়