পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৬১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরিশিষ্ট শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ২১৯ পরিদর্শক—২৭শে আগষ্ট ১৯১১ ইং “শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত—পূৰ্ব্বাংশ।" “যাহারা বৈষ্ণব সাহিত্যের সন্ধান রাখেন, যাহারা বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ হইতে প্রকাশিত গৌরপদ তরঙ্গিনী প্রভৃতি গ্রন্থ অধ্যয়ন করিয়াছেন, তাহারা জানেন যে বৰ্ত্তমান যুগে বৈষ্ণব সাহিত্য সম্বন্ধে বিশিষ্ট মত প্রকাশ করিতে যাহারা সক্ষম, শ্রীহট্টের পণ্ডিত অচ্যুতচরণ তাহাদের মধ্যে সৰ্ব্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি। জীবিত ব্যক্তিদের মধ্যে তাহার স্থান সৰ্ব্বপ্রথম। শ্রীহট্ট জানে না, যে এমন রত্ন তাহার গর্ভে আছে। কিন্তু বাংলাদেশ তাহা বিশেষ ভাবেই অবগত আছে। শ্রীযুক্ত দীনেশচন্দ্র সেন প্রণীত “বাংলাভাষা ও সাহিত্য” গ্রন্থের সুদীর্ঘ ভূমিকায় কৃতি লেখক তত্ত্বনিধি মহাশয়ের কিরূপ গুণগান করিয়াছেন, তাহা কাহারো অবিদিত নাই। বৈষ্ণব পদকৰ্ত্তা ও বৈষ্ণবাচাৰ্য্যগণের পদরজঃ শোভিত দেশে অচ্যুতচরণ জন্ম গ্রহণ করিয়াছেন, দশবৎসরের অক্লান্ত পরিশ্রমে সেই দেশের ইতিবৃত্ত লিখিয়া বঙ্গীয় সাহিত্যে আজ তিনি স্বার্থকনামা হইয়াছেন। তারপর যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় আপনার নাম এক সময়ে উজ্জ্বল করিয়াছিলেন, যিনি সাহিত্য সাধনার ব্রত গ্রহণ করিয়া উত্তর বঙ্গের সাহিত্য সম্মিলনীতে কর্ণধারের কার্য্য করিয়াছিলেন, আজ যিনি বঙ্গীয় সাহিত্যসম্মিলনীর “পরিচালনা সমিতি"র সভ্য, সেই অধ্যাপক পদ্মনাথ বিদ্যাবিনোদ মহাশয়ও ধন্য! তিনি দুই সহস্রাধিক মুদ্রা ব্যয় করিয়াছেন, দশবৎসর ব্যাপিয়া গুরু পরিশ্রমে উপকরণ সংগ্ৰহ করিয়াছেন এবং যোগ্যব্যক্তির সন্ধান করিয়া স্বয়ং গ্রন্থকার যশোপ্রার্থী না হইয়া আপন জন্মভূমিখণ্ডের, শ্রীহট্ট প্রদেশের পুরাবৃত্ত সঙ্কলিত করিয়াছেন, ইহা তাহার পক্ষে কম গৌরবের বিষয় নহে। ব্যক্তি বিশেষের চেষ্টায় এইরূপ বিরাট সাহিত্যানুষ্ঠান বঙ্গদেশে বড়ই বিরল; বিশেষতঃ আমরা জানি বিদ্যাবিনোদ মহাশয় এই গুরুকার্য্য সম্পাদনের জন্য কাহারো দ্বারস্থ হন নাই, অথচ ভগবানও তাহাকে অজস্র ধনরত্নের অধিকারী করেন নাই । পুস্তকের সঙ্কলন প্রণালী অভিনব ও আধুনিক। বিজ্ঞাপন দিয়া দশ বৎসর ব্যাপিয়া সমস্ত জিলার সম্ভ্রান্ত ও বিদ্যান ব্যক্তিদিগের আনুকূল্যে তথ্য সংগৃহীত হইয়াছে। স্তুপাকার তথ্য, সংবাদ, গুজব, কাহিনী, সত্য ও মিথ্যার পর্বত প্রমাণ কাগজের রাশি আলোড়িত করিয়া আজ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত যুগান্তের তিমির দূর করিয়া লোকলোচনের সমক্ষে বাহির হইয়াছে। বাংলাদেশে এই প্রণালীতে আজ পর্যন্ত এত বৃহৎ একখানি ইতিবৃত্তও বাহির হয় নাই। অন্যান্য ইতিবৃত্তের সহিত তুলনায় শ্রীহট্টের ইতিবৃত্তের কিছু বিশেষত্ব আছে; শ্রীহট্ট প্রাচীন কালে এক রাজার রাজ্যধীন ছিল না। বহুতর নৃপতিপুঞ্জে ও স্বাধীনরাজ্যে এই প্রদেশ গঠিত ছিল। এক রাজ্যের কাহিনী, অন্যরাজ্যের উপকথার সহিত জড়িত হওয়ায় ঐতিহাসিক গবেষণার পথ কত যে কণ্টকাকীর্ণ, তাহা ঐতিহাসিক অনুসন্ধানলিন্সু ব্যক্তিমাত্রের অবিদিত নহে। তারপর শ্রীহট্ট অতি প্রাচীন দেশ, বাংলাদেশ যখন অসভ্যসেবিত, নদনদী প্লাবিত, শ্রীহট্ট তখনও আৰ্য-কিরণগরিমায় উদ্ভাসিত। অচ্যুতচরণের সুললিত ভাষায় সেই শ্রীহট্টের প্রাচীন কাহিনী পাঠ করিলে সেই দূর অতীতের শোভন চিত্র, সেই রাজ্যজ্ঞের পবিত্র হোমশিখা, সেই যজ্ঞকুণ্ড, সেই গিরিপ্রাকারবেষ্টিত, “সাগর" রাজি-পরিশোভিত রণতরী ও বাণিজ্যপোত সমাকীর্ণ বরবক্র ও তপোবন-সমাচ্ছন্নতটা মনুনদের জলরাশি সেবিত, মহাপীঠের পূণ্যনিকেতন শ্রীহট্টের পরম রমণীর চিত্ৰ যেন স্বতঃই নয়নপথে ভাসিয়া উঠে। শ্রীহট্টবাসী এই পুণ্যগাথা পরিপূর্ণ ইতিবৃত্ত পাঠ করুন, হৃদয়ঙ্গম হইবে, আপনারা কোথায় জনিয়াছেন। আধুনিক যুগে শ্রীহট্ট যতই পতিত হৌক না কেন, আপনারা বুঝিবেন যে বাঙ্গালী