পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃতীয় অধ্যায় ; উপেন্দ্র বংশ বর্ণন শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ৬৩ শ্ৰীগৌরাঙ্গ শ্রীহট্টে শ্ৰীগৌরাঙ্গের পিতামহী দীর্ঘকাল জীবিতা ছিলেন; তাহার পৌত্রের পাণ্ডিত্য যশে চতুৰ্দ্দিক প্রপূরিত, তৎকালে এবং তাহার পরেও বৃদ্ধা জীবিতা ছিলেন। শ্ৰীগৌরাঙ্গ পিতৃদেশ দর্শন উদ্দেশ্যে যদিও একবার পূৰ্ব্ববঙ্গ ভ্রমণে বহির্গত হইয়াছিলেন, কিন্তু তৎকালে তিনি পিতামহীগৃহ-ঢাকাদক্ষিণ পর্যন্ত যাইতে পারেন নাই, কারণ বশতঃ পথ হইতেই ফিরিয়া গিয়াছিলেন।২০ শ্ৰীগৌরাঙ্গ পিতামহী-গৃহে না গিয়া নবদ্বীপে ফিরিয়া গেলেও বৃদ্ধার ধ্রুব ধারণা যে তাহার বধূ অবশ্যই তাঁহাকে পাঠাইবেন, তাই শ্ৰীগৌরাঙ্গের আগমন অপেক্ষায় বৃদ্ধার প্রাণ বাহির হইতেছে না। ১৪৮৫ খৃষ্টাব্দে শ্রীগৌরাঙ্গের জন্ম হয়; তাহার বয়ঃক্রম চব্বিশ বৎসর পূর্ণ হইতেই তিনি সন্ন্যাস গ্রহণ করেন। সন্ন্যাস গ্রহণের পরে শান্তিপুরে তাহার আগমন ঘটে। এই সময় ভক্তবর্গ শচীদেবীকে শান্তিপুর লইয়া গিয়াছিলেন। শচী হারানিধি নিমাইকে পাইয়া; মনের সাধে কয়েক দিন স্বয়ং পাক করিয়া আহার করাইয়া ছিলেন। ইত্যবসরে মাতৃভক্তশিরোমণি গৌরহরি বলিয়াছিলেন, হে কৃষ্ণপ্রেমে বিহবল হইয়া সন্ন্যাস গ্রহণ করায়, জননীর মনে তিনি বড়ই দুঃখ দিয়াছেন, এখন জননীর আজ্ঞানুসারেই তিনি যে কোন স্থানে অবস্থিতি করিবেন,২১ তদনুসারে শচীদেবী তাহাকে শ্ৰীক্ষেত্রে থাকিবার অনুমতি দেন; এবং তিনি চলিয়া যাইতে প্রস্তুত হন। এই সময় শচীদেবী তাহাকে সংগোপনে আর একটি কথা বলিয়া ছিলেন; প্রদ্যুম্ন মিশ্রের গ্রন্থ হইতে তাহা জানিতে পারা যায়। শচীদেবীর মনে হইয়াছিল—“যে নিমাইকে মুহূৰ্ত্ত-তরে নয়নের অন্তর করিতে পারি নাই, আজ তাঁহাকে শত যোজন দূরে বাস করিতে বলিলাম। শ্বাশুড়ী শোভাদেবীর নাপিত দেখিতে কত সাধ, আমাকে বলিয়া দিলেও সে কথা নিমাইকে কহি নাই—সুদূর শ্রীহট্টে পাঠাইতে ইচ্ছা করি নাই; কিন্তু তাহাকে রাখিতে পারিলাম না! আমার এ দুর্ভাগ্য কি শাশুড়ীর আদেশাবজ্ঞার ফল? যাক নিমাই আমার বাচিয়া থাক। শাশুড়ীর আদেশের কথা আর লুকাব না; আমার দোষে নিমাইর যেন কোন অনিষ্ট না ঘটে!" পুত্র-স্নেহ-বিহবলা শচীদেবীর মনে এইরূপ চিন্তার উদ্রেকমাত্র তৎক্ষণাৎ পুত্রকে শ্রীহট্টে যাইতে অনুরোধ করিলেন। তাহাতেই শ্ৰীমহাপ্রভুর পুনৰ্ব্বার পূৰ্ব্বদেশাগমন ঘটে। এই সময়ে শ্ৰীমহাপ্রভুর আরও দুই এক স্থলে অলক্ষিতে গমন করিয়াছিলেন বলিয়া গ্রন্থাদিতে লিখিত আছে। তিনি শ্রীহট্টে আসিলে প্রথমে বুরুঙ্গায় যেরূপে রামা-সম্মিলন ও কুটুম্ব-পরিচয় ঘটে, তাহা দ্বিতীয় অধ্যায়ে বলিয়াছি। বুরুঙ্গা হইতে শ্ৰীমহাপ্রভু ঢাকাদক্ষিণে উপস্থিত হন। শোভা-সন্মিলন সায়াহ্নকাল, অস্তোম্মুখ সূর্য্যের সমুজ্জল স্বর্ণ-কিরণ রেখা হরিত পত্রাবলীতে প্রতিফলিত হইয়া দিক হরিদ্রাভ হইয়া উঠিয়াছে, নিৰ্জ্জন গ্রাম্য বাটিকা যেন হিঙ্গুল রাগে রঞ্জিত হইয়াছে, পূৰ্ব্বদিকে ক্রমশঃ পিঙ্গলাভা প্রকাশ পাইতেছে, বায়সকুল ব্যাকুলভাবে পশ্চিমদিকে উড়িয়া ২০. এই সময় শ্ৰীগৌরাঙ্গ বুরুঙ্গা পৰ্য্যন্ত আগমন করিয়াছিলেন, সে প্রসঙ্গ এস্থলে বর্ণন করা অনাবশ্যক বলিয়া পরিত্যক্ত হইল; শ্ৰীমহাপ্রভুর চরিত্র উপলক্ষে উপসংহারাধ্যায়ে তাহা বিবর্ণিত হইবে। ২১. এসব প্রসঙ্গ পূজ্যপাদ স্বগীয় শিশির কুমার ঘোষ কৃত শ্ৰীঅমিয় নিমাই চরিত গ্রন্থে মধুরভাবে বর্ণিত হইয়াছে। শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ৪র্থ ভাগে উপসংহারাধ্যায় দ্রষ্টব্য।