পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃতীয় অধ্যায় : উপেন্দ্র বংশ বর্ণন শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ৬৫ হইতেছেন ২৩ এই দুই বিগ্রহের প্রভাবে লোকমণ্ডলী আকৃষ্ট হইল, নানা জনে নানারূপ আশ্চৰ্য্য দর্শন করিল,২৪ আর ঠাকুর দর্শনে আসিতে লাগিল; সেই হইতে মিশ্রবাড়া “ঠাকুরবাড়ী” নামে খ্যাত হইল ॥২৫ শ্ৰীমহাপ্রভুর বিগ্রহ বহু স্থানে আছেন, কিন্তু কোন স্থানেই শ্রীকৃষ্ণ মূৰ্ত্তির পার্শ্বে গৌরমূৰ্ত্তি স্থাপিত ও পূজিত হইতে দেখা যায় না। বৃদ্ধা যেরূপ দুইরূপ দর্শন করেন, এই বিগ্রহদ্বয় তাহারই স্মারক; ইহার অন্য কোন মীমাংসা নাই। মিশ্ৰ-সন্তানগণ কালক্রমে দীনদশাগ্রস্ত হইয়াছিলেন বলা গিয়াছে, কিন্ত-অচিরাৎ তাহাদের দিনপাতের নূতন পন্থা শ্রীবিগ্ৰহ হইতে হইল। লোকের প্রদত্ত প্রণামী ইত্যাদিতে তাহাদের জীবনোপায়ের সংস্থান হইতে লাগিল। এই জন্য মিশ্রবংশীয়গণ তাহাদের জ্ঞাতি শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর শ্রীবিগ্রহকে “স্বগোত্ৰীয়ের বৃত্তিদাতা" বলিয়া বর্ণনা করেন। শ্ৰীমহাপ্রভুর কাছে শোভাদেবী কথাপ্রসঙ্গে পুত্রপৌত্রাদির দৈন্যদশার কথা বলিয়াছিলেন, বৃদ্ধার অভিপ্রায় এই উপায়ে তিনি পূর্ণ করিতেছেন, তাহারা সগৌরবে ইহা ব্যক্ত করিয়া থাকেন। উপেন্দ্রমিশ্রের বাড়ী ও দেওয়ানের মন্দিরাদি বৰ্ত্তমানে যে বাটিকা “ঠাকুরবাড়ী” নামে পরিচিত, ইহা আদি ঠাকুরবাড়ী অর্থাৎ উপেন্দ্র মিশ্রের মূলবাড়ী নহে। শ্ৰীমহাপ্রভুর শ্রীচরণরজো ভূষিত সেই পূণ্যস্থান পরিত্যক্ত হইয়া জঙ্গলাচ্ছাদিত নবদ্বীপে মায়াপুরে শচীভবন অপরিচিত হইয়াছিল, লাউড়ের অদ্বৈতগুহ গহনবনে আচ্ছন্ন হইয়াছিল, শ্রীহট্টের গ্রীবাপীঠ গুপ্ত হইয়াছিল, ঢাকাদক্ষিণের শ্রীসেবা জাগ্রত থাকিলেও উপেন্দ্রমিশ্রের মূলবাড়ী জঙ্গলের অন্তরালবৰ্ত্ত হইবে, বিচিত্র নহে।২৬ যদি তাই, তবে শ্রীবিগ্রহ নূতনবাড়ীতে আসিলেন কিরূপে? মোসলমান আমলে শ্রীহট্টে একজন দেওয়ান রাজস্ব বিভাগে সৰ্ব্বোচ্চ পদে নিযুক্ত থাকিতেন, ইহা শ্রীহট্টের ইতিবৃত্তের দ্বিতীয়ভাগে স্থানে স্থানে উল্লেখ করা গিয়াছে। এক স্থানে (৫ম খণ্ডে) ইহাও বলা গিয়াছে যে, ১৭৭৮ খৃষ্টাব্দে মাণিকচাদ নামে একজন দেওয়ান লিণ্ডসে সাহেবকে আপন চার্জ সমজাইয়া ঢাকায় গিয়াছিলেন। ইহাদের পদ বংশানুক্রমিক ছিল এবং মাণিকচাদই শেষ দেওয়ান। তবে এই সময়ে বা তৎপূৰ্ব্বে যখন কাৰ্য্যবশতঃ স্থায়ী দেওযানেরা কাৰ্য্যানুরোধে বিদায় কিম্বা অবসর গ্রহণ করিতেন, তখন সাময়িক ভাবে নূতনলোকও তাহাদের স্থলে প্রেরিত হইতেন। শ্রীহট্টের কালেক্টরীর কাগজ পত্রে গোলাবরাম নামে এক দেওয়ানের নাম পাওয়া যায়; ইনি ঐরূপ সাময়িকভাবে শ্রীহট্টে আগমন করিয়াছিলেন। ইহার বাড়ী কোন স্থানে ছিল জানিবার ২৩. পূজক বংশের কথা শোভাদেবী বিগ্রহ স্থাপনের পর যাহারা বিগ্রহ পূজায় নিয়োজিত হন, তাহারা আয়ে কোনরূপ অংশ পাইতেন না, পরে তাহারা ইহার দাবি করিয়া কৃতকাৰ্য হইতে না পারিয়া বিতাড়িত হন। শ্ৰীমহাপ্রভুর পূজারী কাশ্যপ গোত্রীয় উক্ত ব্রাহ্মণ বংশ ঠাকুরবাড়ীর সংলগ্নে ও ৪ খানা বাড়ীতে ছিলেন। তন্মধ্যে পূৰ্ব্বের বাড়ীটি ঠাকুরবাড়ীর ভুক্ত হইয়া পড়িয়াছে। বৰ্ত্তমান বংশীয়গণ ঠাকুরবাড়ী হইতে আরও পূৰ্ব্বে উঠিয়া গিয়া বাস করিতেছেন। এই প্রাচীন পূজকবংশ এস্থলে লুপ্ত প্রায়, এখন কেবল এক ঘর মাত্র বৰ্ত্তমান আছেন। ইহারাই পূৰ্ব্বে দেবতার ভোগ প্রস্তুতের পারিশ্রমিক পাইতেন। পরে (স্বগীয় গৌরকিশোর ও বিষুণ ঠাকুরদের সময়ে) তাহারা মিশ্রবংশীয়গণ কর্তৃক পূজা হইতে বঞ্চিত হন। (-১৮৭৪ ইং ১৫৮নং মোকদ্দমার রায়ের মৰ্ম্ম)। ২৪. ঢাকাদক্ষিণের শ্রীবিগ্রহ সম্বন্ধে নানা আশ্চর্য ঘটনা শুনা যায়, এ সকল “বিগ্রহলীলা" ইতিবৃত্তে প্রকাশযোগ্য নহে। ২৫. ঠাকুরবাড়ী শ্রীহট্টের সৰ্ব্বপ্রধান বৈষ্ণব তীর্থ, ইহার কথা শ্রীহট্টের ইতিবৃত্তের ১ম ভাগ ৯ম অধ্যায়ে বর্ণিত হইয়াছে। শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত(উত্তরাংশ-তৃতীয় ভাগ)-৫