পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬৬ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত তৃতীয় ভাগ-প্রথম খণ্ড উপায় নাই; তিনি এদেশবাসী ছিলেন না। তিনি ধৰ্ম্ম পরায়ণ ব্যক্তি ছিলেন ও মুর্শিদাবাদ হইতে শ্রীহট্টে প্রেরিত হন। তিনি গঙ্গা ছাড়িয়া নিতান্ত অনিচ্ছা পূৰ্ব্বকই শ্রীহট্টে আগমন করিয়াছিলেন। শ্রীহট্টে পৌছিয়া নিজপদে প্রতিষ্ঠিত হইয়াই তিনি অনুসন্ধান লন যে, নিকটে কোন বিখ্যাত “জাগ্রত" দেবস্থান আছে কি না। তদনুসারে ঢাকাদক্ষিণের ঠাকুরবাড়ীর সংবাদই তিনি প্রাপ্ত হইলেন। তিনি শুনিলেন যে এক ক্ষুদ্রায়তন বাটিকায় কাচা ঘরে ঠাকুর আছেন এবং ইহাও জানিলেন যে স্থলপথে শ্রীহট্ট হইতে তথায় যাইবার ভাল পথ নাই । ঠাকুরবাড়ীর বৃত্তান্ত জ্ঞাত হইয়া ধৰ্ম্মপরায়ণ দেওয়ানের ঠাকুর দর্শনের একান্ত অভিপ্রায় জন্মিল। কথিত আছে, তখন তিনি এই মৰ্ম্মে এই আদেশ লিপি প্রচার করিলেন যে, শ্রীহট্ট হইতে ঢাকাদক্ষিণের ঠাকুরবাড়ী পর্যন্ত একটি জাঙ্গাল (শড়ক) অতি সত্বর প্রস্তুত হইবে, শহর হইতে ক্রমশঃ যাহার যাহার ভূমির উপর দিয়া ঐ জাঙ্গাল যাইবে, সেই সেই জমিদার তাহাদের নিজাধিকৃত ভূমির উপর রাস্তা বাধাইয়া দিবেন। তদ্ভিন্ন ঢাকাদক্ষিণের জমিদার প্রতি, সাত দিনের মধ্যে উত্তম স্থানে দেবতার জন্য এক মন্দির নিৰ্ম্মাণের আদেশ হইল । আদেশ প্রতিপালিত হইতে বিলম্ব ঘটিল না। শড়ক, সেতু, মন্দির সমস্তই হইল। সং পাইয়া যথাকালে দেওয়ান দেবদর্শনে আগমন করিলেন ও দেবতা দেখিয়া পর সুখী হইলেন। পরদিন দেওয়ান ফিরিয়া যাইবেন, কিন্তু সে রাত্রে তিনি এক বিচিত্র স্বপ্ন দর্শন করিলেন কথিত আছে দেওয়ান দেখিয়াছিলেন যে, দিবাদৃষ্ট দেবমূৰ্ত্তি বিষাদ মলিন বদনে যেন বলিতেছেন "এতদিন ব্রাহ্মণের পর্ণকুটীরে ভালই ছিলাম তুমি মোসলমানের মসজিদে আনিয়া কষ্ট দিতেছ।” নূতন মন্দির এত সত্বর কিরূপে প্রস্তুত হইল? দেওয়ানের মনে একথা জাগিয়াছিল; স্বপ্নে সন্দেহের কারণ জনিল এবং তিনি ইহার তথ্য গ্রহণে জ্ঞাত হইলেন যে, যথায় মন্দির নিৰ্ম্মিত হইয়াছে, সেস্থানে এক পরিত্যক্ত মসজিদ ছিল, তাহারই উপকরণে এই মন্দির নিৰ্ম্মিত! স্বপ্নটি দেওয়ানের মানসিক সন্দেহ জনিত চিন্তা প্রসূত বা যাহাই হউক, এই স্বপ্নের জন্যই তিনি দেবতাকে আর সেই মন্দিরে রাখা সঙ্গত বোধ করিলেন না। তিনি স্বয়ং স্থান পর্যবেক্ষ পূৰ্ব্বক পূজকদের গৃহপার্শ্বে একটি স্থান মনোনীত করিলেন ও অনতিবিলম্বেই নূতন ইষ্টক দ্বারা এক সুন্দর মন্দির প্রস্তুত করাইলেন। অতঃপর দেবতাকে সেই নবনিৰ্ম্মিত মন্দিরে স্থানান্তরিত করা হয়। ফলতঃ যে কারণেই হউক, দেওয়ান কর্তৃক দেবতাকে পর্ণকুটীর হইতে আর এক মন্দিরে এবং অচিরেই সেই মন্দির হইতে অন্য নূতন মন্দিরে নেওয়া হয়।২৭ নূতন বাড়ীর সম্মুখে দেওয়ান কর্তৃক এক বিস্তৃত দীঘীও খনিত হইয়াছিল। বৰ্ত্তমানে শ্ৰীমহাপ্ৰভু যে বাড়ীতে আছেন, উহাই সেই বাড়ী। দেওয়ানের দীঘিকাতীরেই “শ্রীচৈতন্যগঞ্জ” নামে বাজার বসিয়াছে। আর দেওয়ান কৃত সেই জাঙ্গালের ভগ্নাবশেষ বৰ্ত্তমানে "দেওয়ানের শড়ক" নামে খ্যাত আছে। ঐ শড়ক বাউশীর নিকট দেওরভাগা ছড়া পার হইয়াছে, তথাকার উচ্চ ইষ্টক সেতু “দেওয়ানের পোল" নামে খ্যাত। দেওয়ানের শড়ক শ্রীহট্ট শহর হইতে নদীর ২৬. শ্ৰীমহাপ্রভুর ইচ্ছায় মূল বাড়ীর পরিচয় পাওয়ায়, মিশ্ৰঠাকুরগণ উহা-প্রকাশার্থ চেষ্ঠাম্বিত হইয়া কেহ উহার একাংশ পরিকৃত করিয়াছেন, ও তথায় এক নুতন শ্রীবিগ্রহ স্থাপিত হইয়াছেন। ২৭. বৰ্ত্তমানে শ্রীবিগ্রহ দেওয়ানের নিৰ্ম্মিত উক্ত মন্দিরে নহেন, কিঞ্চিৎ পরে বিনিৰ্ম্মিত তৎপার্শ্বপত্তী এক মন্দিরে আছেন। দত্তরালির দেব বংশীয় মণিরামের ভ্রাতা লঘাটি নামক স্থানের জনৈক সাহু-কন্যা বিবাহ করিয়া অবস্থার উন্নতির সহিত, মিশ্র বংশীয় পরশুরামের যত্নে এই মন্দির নিৰ্ম্মাণ কবিয়া দিয়াছিলেন । মণিরামের বৃদ্ধ প্রপৌত্র জীবিত আছেন।) ভোগ মন্দিরটি ঢাকাদক্ষিণের রায়গড় নিবাসী সাহু জাতীয় জিতবাম প্রায় ১২০ বৎসর পূৰ্ব্বে নিৰ্ম্মাণ করাইয়া দেন। দেওয়ানের প্রাচীন মন্দির ও তৎপার্শ্ববৰ্ত্তী মন্দিরের চিত্র প্রদত্ত হইল ।