পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬৮ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত তৃতীয় ভাগ-প্রথম খণ্ড দক্ষিণ তীরের ধারে ধারে চলিয়া সুলতানপুরের নিকট বৰ্ত্তমান শ্রীহট্ট কাছাড় রোড পার হইয়া ঢাকাদক্ষিণ চলিয়াছে ও বৰ্ত্তমানে প্রতি বৎসরই ক্রমশঃ কৃষক কর্তৃক ক্ষয় পাইতেছে। ১৭৪০ খৃষ্টাব্দের পূৰ্ব্বে কোন এক সময় উক্ত দেওয়ান শ্রীহট্ট সাময়িক ভাবে আগমন করিয়াছিলেন।২৮ উপেন্দ্র মিশ্রের বংশে বহুতর প্রধান পুরুষ জন্মগ্রহণ করেন, কিন্তু তাহাদের বিবরণ অতি সামান্যই জানিতে পারা যায়। বংশাখ্যান-হরিণাথ শ্ৰীমহাপ্রভু যখন ঢাকাদক্ষিণে আগমন করেন, পরমানন্দের পুত্র রামরত্ন ও তাহার পুত্র নীলরত্ন তখন বৰ্ত্তমান। নীলরত্বের বৃদ্ধ প্রপৌত্রের নাম হরিনাথ ন্যায় বাগীশ । ইনি মিথিলা দেশে গিয়া ন্যায়শাস্ত্র অধ্যয়ন করতঃ ন্যায়বাগীশ উপাধি প্রাপ্ত হন ও দেশে আসিয়া সৰ্ব্বপ্রথম ন্যায়শাস্ত্রের এক টোল সংস্থাপন করেন। শ্রীহট্টের ছাত্র দেশে থাকিয়া ন্যায়শিক্ষার সুবিধা পাইয়া তাহার টোলে অনেকেই ভৰ্ত্তি হইয়াছিল। তিনি নিজ পুত্র গোপীনাথকে স্বয়ং ন্যায়শাস্ত্রে সুশিক্ষিত করিয়া উপাধি দান করিয়াছিলেন। ইহার খুল্লতাত-ভ্রাত রামজীবনের পুত্র জগজীবন "মনঃসম্ভোষণী” নামে এক গ্রন্থ রচনা করেন, ঐ গ্রন্থেও শ্রীচৈতন্যের শ্রীহট্টাগমন বৃত্তান্ত লিখিত আছে।২৯ শিরোমণির ধৰ্ম্মপ্রচার-মণিপুরে ন্যায়বাগীশের জ্ঞাতি সম্পর্কিত, অন্যদীয় ভ্রাতুষ্পপুত্রের নাম রামনারায়ণ শিরোমণি। ইনি নবদ্বীপে অধ্যয়নান্তর শিরোমণি উপাধি লাভ করেন। রামনারায়ণ শ্ৰীগৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর পরম ভক্ত ছিলেন এবং প্রায়শঃ শ্ৰীমদ্ভাগবত পাঠ করিতেন। এই সময়ে মণিপুরাধিপতি চিংথোং খোম্বা হিন্দুধৰ্ম্মে আস্থাবান হন এবং মহাপ্রভু দর্শনে ঢাকাদক্ষিণে তিনি আগমন করিয়াছিলেন। মহারাজের আগমন দিনে শিরোমণি শ্ৰীমদ্ভাগবত পাঠের ব্যবস্থা করিয়াছিলেন, মহারাজ শিরোমণির সুশ্রাব্য সংস্কৃত উচ্চারণ ও ব্যাখ্যাদি শ্রবণে পরম আনন্দিত হইলেন।৩০ প্রত্যাগমনকালে মণিপুরের সৰ্ব্বসাধারণ বৈষ্ণব, ধৰ্ম্মের মৰ্ম্ম অবগত হয়। শিরোমণি কর্তৃক একটি জাতি বৈষ্ণবধৰ্ম্মে আস্থাবান হইয়া উঠিয়ছি ইহা তাহার বংশোপযোগী হইয়াছিল। ১৭১৫ খৃষ্টাব্দের পরে মহারাজ চিংথোং খোম্বা মণিপুরের সিংহাসনে আরোহন করিয়াছিলেন । এই সময় হইতেই মণিপুরীদের সৌভাগ্য যুগের উদয় হইয়াছিল। মহারাজ ২৮. পূৰ্ব্বাংশের ৪র্থ অধ্যায়ে দেওয়ান গোলাব রামের নামোল্লেখ আছে, সেই স্থলে উল্লেখিত তারিখটাতে ছাপার গুরুতর ভ্রম হইয়াছে। ২৯. ভুটিয়াকাগজে লিখিত জগজীবনের পুঁথি আমরা পাইয়াছিলাম এবং বিশ্বকোষ কাৰ্য্যালয়ে তাহা প্রেরণ করিয়াছিলাম। তখন আমরা জ্ঞাত হই যে, এ গ্রন্থ প্রায় দ্বিশত বর্ষ পূৰ্ব্বেকার। বন্ধুবর শ্ৰীযুক্ত দীনেশ চন্দ্র সেন তাহার “বঙ্গভাষা ও সাহিত্য” গ্রন্থেও ইহার প্রাচীনত্বের নির্দেশ করিয়াছেন। কিন্তু মিশ্র বংশাবলীতে দুই জগজ্জীবনের নাম পাওয়া যায়। তন্মধ্যে প্রথম ব্যক্তি রামজীবন সুত, দ্বিতীয় জন জনাৰ্দ্দন-পুত্র, কিন্তু ইহাই আশ্চর্য যে মনঃসম্বেষণীতে জগজীবনের পিতার নাম স্থলে উক্ত উভয় নামই দেখিতে পাওয়া যায়। ইহা লেখকের ভুল বশতঃও হইতে পারে। তাহা না হইলে প্রথম রামজীবনের নামান্তর জনাৰ্দ্দন ছিল বলিতে হইবে এবং পরবর্তী কালে পূৰ্ব্বপুরুষ (উক্ত কৃতিব্যক্তি) দের স্মরণে দ্বিতীয় রামজীবন, তাহার পুত্র ও পৌত্রের নাম রাখা হইতেও পারে। ইহা বিচিত্র নহে এবং পূৰ্ব্ব পুরুষের নামে ঈদৃশ নাম রাখার বহু উদাহরণ এই গ্রন্থেরই বহু বংশ তালিকায় দৃষ্ট হইবে। আমরা পূৰ্ব্বে যে মিশ্রবংশ তালিকা পাইয়াছিলাম, তাহা বিশুদ্ধ ছিল না। জগজীবন ২০০ বর্ষের প্রাচীন হইলে তিনি প্রথম জগজীবন সন্দেহ নাই। “সঙ্গিনী" পত্রিকায় আমরা মনঃসন্তোষণী মুদ্রিত করিয়াছিলাম। ৩০. শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত পূৰ্ব্বাংশ ২য় ভাগ ৫ম খণ্ড ১ম অধ্যায়ে মণিপুর রাজের শ্রীহট্টাগমনে উল্লেখ আছে।