পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃতীয় অধ্যায় ; উপেন্দ্র বংশ বর্ণন শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ৭১ নবাব এক্রামউল্লা খা বাহাদুর তাহাকে প্রায় ৩০/ হাল ভূমি দান করেন।৩৩ এই ভূমি ১৭৮৩ খৃষ্টাব্দের পরে তৎপুত্র আনন্দ রামের “তছরূপ" ছিল। কমলাকান্ত ও হেড়ম্বেশ্বর রতিকান্ত তর্কসিদ্ধান্ত কমলাকান্তের জ্ঞাতি সম্পর্কিত ভ্রাতুষ্পপুত্র। ইহার স্মৃতি ও ন্যায়শাস্ত্রে পণ্ডিত ছিলেন। মঙ্গলবাবা নামক এক পশ্চিমা রামায়েত শ্ৰীমহাপ্রভুর বাড়ীতে অবস্থিতি করেন। মঙ্গলবাব বেদজ্ঞ পণ্ডিত ছিলেন; রতিকান্ত ইহাকে প্রাপ্ত হইয়া ইহার কাছে সে অধ্যয়ন করেন। রতিকান্ত পরে হেড়ম্বেশ্বর কৃষ্ণচন্দ্রের সভাপণ্ডিত হইয়াছিলেন। এই সভায় ১৮ জন পণ্ডিত ছিলেন। রতিকান্ত তন্মধ্যে বয়ঃকনিষ্ঠ বলিয়া মহারাজ অত্যন্ত স্নেহ করিতেন। মহারাজ একবার তীর্থযাত্রা করিয়াছিলেন, তখন বালক হইলেও, স্নেহপ্রযুক্ত ইহাকে সঙ্গে লইয়াছিলেন। কৃষ্ণচন্দ্র যখন কাশীধামে উপস্থিত হন, তখন পশ্চিম দেশীয় অপর এক নৃপতি সভাসদ ও পারিষদ্বর্গাদিসহ বিশেষ আড়ম্বরে কাশী বাস করিতে ছিলেন। তিনি পূৰ্ব্বাঞ্চলীয় হেড়ম্ব দেশাধিপতির আগমন শ্রবণে স্বগীয় বিশ্বেশ্বরের মন্দিরে তৎসহ সাক্ষাতের অভিপ্রায় করিয়া, সাড়ম্বরে তথায় গমন করেন। সেই নৃপতির রাজ্যৈশ্বৰ্য্যের তুলনায় কৃষ্ণচন্দ্রের কিছুমাত্র জাকজমক ছিল না বলিলেই হয়। তিনি তৎসহ সাক্ষাৎ না করিয়া সঙ্গীয় তরুণ পণ্ডিতকে তৎসন্নিবেশিত প্রেরণ করিলেন। রতিকান্ত সেই নৃপতিকে আশীৰ্ব্বাদ করিয়া জানাইলেন যে, হেড়ম্বেশ্বর তীর্থ দর্শনে আসিয়াছেন, তিনি বিশ্বপতি বিশ্বেশ্বরের রাজধানীতে রাজ্যৈশ্বৰ্য্য প্রকটন পূৰ্ব্বক রাজবেশে তাহার মন্দিরে প্রবেশ করিতে কুষ্ঠিত,-দীনবেশে সাক্ষাতেও গৌরব জানিয়া সম্ভাবনা, তাই তিনি সাক্ষাৎ করিতে অসমর্থ। পণ্ডিত মুখে কাছাড়পতির পরিচায়ক এই সদুত্তর শ্রবণে সেই নৃপতি লজ্জিত হইয়া পণ্ডিতকেই তদীয় আবাসে যাইতে নিমন্ত্ৰণ করিলেন। নিমন্ত্রণ রক্ষার্থ রতিকান্ত পরদিন গমন করিলে, তৎসহ সভাস্থ পণ্ডিতদের শাস্ত্রালাপ আরম্ভ হইল । পণ্ডিতগণ বেদের একটি কঠিন স্থলের প্রসঙ্গ উত্থাপন করিলেন। সৌভাগ্য বশতঃ রতিকান্ত মঙ্গলবাবার নিকট ঐ কঠিন স্থলের প্রসঙ্গ মীমাংসা শিক্ষা করিয়া ছিলেন, সুতরাং অনায়াসে সদুত্তর দিয়া হেড়ম্বশ্বরের মান ও নাম রক্ষা করিয়া আসিলেন। কৃষ্ণচন্দ্র এতদ্বিবরণ অবগত হইয়া অত্যন্ত আনন্দিত হইলেন এবং তাঁহাকে এক হাতী দান করিলেন । দেশে আসিলে রাজদত্ত ঐ হাতী যখন ঢাকাদক্ষিণে প্রেরিত হইল, তিনি নশ্বর জ্ঞানে উহা বিক্রয় করিয়া তল্লব্ধ অর্থে স্বগীয় বিশ্বেশ্বরের নামে এক শিব মন্দির নিৰ্ম্মাণ করিলেন, উক্ত মন্দির অদ্যপি আছে। মহারাজ দত্ত কয়েকটি ধাতব উপহার তদগৃহে বৰ্ত্তমান আছে। তদ্ব্যতীত (দলিলের দক্ষিণ পার্শ্বে দস্তখত-“শ্ৰীখতুরাম শৰ্ম্মণঃ " দলিলের গর্ভে শেষোক্ত তিন নাম না থাকিলে স্বাক্ষর স্থলে আছে। () চিহ্নের ভিতরকার শব্দার্থ গুলি আমাদের প্রদত্ত। দলিলের লিখিত দুৰ্ল্লভদাস ধনী ব্যক্তি ছিলেন, ইহার কথা পরবর্তী ২য় খণ্ড ৪র্থ অধ্যায়ে উক্ত হইবে; ইনি শ্রীহট্টে নবাবি পাইয়াও তাহা গ্রহণ করেন নাই বলিয়া জানা যায়। এই দলিল হইতে বুঝা যায় মহাপ্রভুর মন্দিরে তাহার নিরূপিত দানের বরাদ্দ ছিল এবং তাহা কোন “খত” বা দলিল লিখিত ছিল।) ৩৩. শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত পূৰ্ব্বাংশ ২য় ভাগ ২য় খণ্ড ৪র্থ অধ্যায়ে নায়েব আচল সিং এবং নবাব এক্রামউল্লা খাঁ বাহাদুরের সময় নির্দেশ করা হইয়াছে। ২ জলুস ২ রজব তারিখ যুক্ত সনদ (নং ৮১৯) শেষোক্ত নবাব কর্তৃক পং ঢাকাদক্ষিণ হইতে ১১/১৬ ফুরকাবাদ হইতে ২ এবং পং হইতে ১৬ ভূমি প্রদত্ত হয়। জলুস অর্থে দিল্লীর বাদশাহের রাজত্ব সময়; অর্থাৎ ঐসময় যিনি সম্রাট ছিলেন, তাহার রাজত্বের ২য় বসে উহা প্রদত্ত হয়। উক্ত ভূমি পরে “কমলাকান্তের ছেগা" নামে বন্দোবস্ত হয় । “তছরূপ" অর্থাৎ ভোগদখলে থাকা ।