পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৭৪ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত তৃতীয় ভাগ-প্রথম খণ্ড খা অনুচর বর্গ সহ এক গর্ভবতী অশ্বিনী আরোহণে ভ্রমণে গমন করিয়া সেই নিৰ্জ্জন কাননে ধুম দর্শনে কৌতুহলাক্রান্ত হইলেন ও তথায় উপস্থিত হইয়া তেজঃপুঞ্জ কলেবর ব্রাহ্মণ দম্পতিকে দেখিয়া বিস্মিত হইলেন । প্রজুলিত অনলকুণ্ড পাশ্বে প্রোথিত ত্রিশূল সন্নিকটে উপবিষ্ট জপনিবিষ্ট সদাশিবকে মোসলমানগণ “দরবেশ” বলিয়াই মনে করিলেন। একজন অনুচর কৌতুকবশে তাহাকে জিজ্ঞাসিল যে, সেই গর্ভবতী অশ্বিনী পুং কি স্ত্রী শাবক প্রসব করিবে? “অশ্ব হইবে” বলিয়া সদাশিব সহস্যে উত্তর দিলেন। সদাশিবের প্রতি চান্দখার শ্রদ্ধা অথবা দয়ার উদ্রেক হইয়াছিল, তিনি দুইজন অনুচরকে এই নিরাশ্রয় বনাশ্রয়ীর প্রহরায় নিষক্ত রাখিয়া চলিয়া গেলেন। অনন্তর চন্দখা বনাশ্রয়ী ব্রাহ্মণ দম্পত্তির জন্য প্রত্যহ দুগ্ধ ও কদলী এবং আতপ তণ্ডুলাদি প্রেরণ করিতে লাগিলেন এবং প্রত্যহ একবার করিয়া তাহাদিগকে দেখিয়া যাইতেন । এদিকে কয়েকদিনের মধ্যে দৈবক্রমে সেই অশ্বিণী এক অশ্বশাবকই প্রসব করিল। সদাশিবের বাক্যে সফল হইয়া গেল; ইহাতে লোকে তাহাকে বাক্যসিদ্ধ বলিয়া বোধ করিতে লাগিল। চান্দখার স্ত্রীর কয়েকটি কন্যা জাত হইয়াছিল, তিনি পুত্রমুখ দর্শনের কাঙ্গাল ছিলেন। তিনি পতি-মুখে সাধুর সংবাদ শ্রবণে সাধুদর্শনের জন্য অত্যন্ত উৎসুকা হইলেন ও স্বামীকে অনুনয় করিতে লাগিলেন। পত্নীর অনুনয়ে চান্দখা স্বীকৃত হইলে পরদিন বহুজন পরিবৃত হইয়া সন্ত্রীক চান্দ সাধু-সকাশে উপস্থিত হইলেন। চান্দখা-পত্নী তখন গর্ভবতী । পুত্র কাঙ্গালিনী সকাতরে সদাশিবকে স্বীয় অভিলাষ জানাইলেন। “মা, এ গর্ভে কি জনিবে কেমনে বলিব । তবে আশীৰ্ব্বাদ করি, পুত্রমুখ দর্শন কর?” সাধুর এই আশীৰ্ব্বাক্যে নবাব-পত্নী হৃষ্টচিত্তে গৃহে গেলেন। ইতিমধ্যে বনাশ্রয়ী ব্রাহ্মণপত্নী এক পুত্র সন্তান প্রসব করিলেন। চান্দখা তখন নল-জঙ্গল কাটাইয়া পরিষ্কৃত ক্রমে গৃহাদি নিৰ্ম্মাণ করিয়া দিলেন। ব্রাহ্মণ গৃহবাসী হইলেন। সদাশিবের এই পুত্রের নাম বাসুদেব । চান্দখা-পত্নীও কালক্রমে একটি পুত্র জাত হইল। সদাশিবের প্রতি সবারই ভক্তি প্রবদ্ধিত হইয়া উঠিল। সূতিকা-কালাবসানেই বেগম বরলব্ধ সেই নবজাত শিশুসহ বনাশ্রমে উপস্থিত, বনাশ্রম আজ আনন্দে কোলাহলে টলমলায়মান। বেগম সাহেবা সদাশিবকে পুত্র দেখাইয়া মাকে লইয়া এইখানেই বাস করবেন। আমরা মধ্যে মধ্যে আসিয়া চরণ দর্শনে কৃতাৰ্থ হইব। এজন্য যাহা করিলাম এ সনন্দে তাহা লিখা আছে।" ব্রাহ্মণ স্বীকৃত হইলেন। নবাব ও বেগমের যুগনাম সাক্ষরিত সেই সনন্দের নির্দেশানুসারে, উত্তরে ধোপাখালী, পূৰ্ব্বে বরাক ও কাগজপুরের খাল, দক্ষিণে সাদিপুরের খাল, পশ্চিমে নাড়িকানদী, এই চতুঃসীমান্তর্গত বগৈকক্রোশ পরিমিত গোলাকৃতি ভূখণ্ডের সহিত তিনি “চৌধুরী” আখ্যা পাইলেন। এইরূপে তপস্বী গৃহী হইলেন। তিনি সকৃতজ্ঞ চিত্তে সেই ভূখণ্ডের উত্তরাংশের নাম বেগমপুর রাখিলেন এবং দক্ষিণাংশকে নবাবপুর নামে খ্যাত করিলেন। বেগমপুরেই তাহার গৃহাদি ছিল, বেগমপুর তাই গ্রামে পরিণত হইল এবং নবাবপুর কৃষিক্ষেত্রই রহিল। গামের পূৰ্ব্বদিকে সদাশিবের ভিটা ও পুষ্করিণীর নিদর্শনা অদ্যপি আছে।