পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুর্থ অধ্যায় : বুরুঙ্গা, রেঙ্গা ও ঢাকাদক্ষিণের ব্রাহ্মণ বংশ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ৮৩ হইত এবং প্রতিবৎসর তাহাদের সনন্দ “তলব" করা হইত। বাসুদেবের জ্যেষ্ঠ পুত্রের নাম ভবদেব পঞ্চানন। ইনি একজন বিখ্যাত পণ্ডিত ছিলেন। নবাব নুরউদ্দীন খা বাহাদুরের মোহরাঙ্কিত সনন্দে তিনি আজমিরীগঞ্জ হইতে দৈনিক একপণ কৌড়ি প্রাপ্ত হইতেন। ইহার কনিষ্ঠ ভ্রাতা রামচন্দ্র ন্যায়লঙ্কারও জ্যেষ্ঠের ন্যায়ই যশস্বী ছিলেন; তিনি “আখ্যাতবাদ” নামে এক গ্রন্থ রচনা করেন এবং ন্যায় দর্শনের এক সুন্দর ব্যাখ্যা রচনা করিতে আরম্ভ করেন, উহা পূর্ণ হয় নাই। আংশিকভাবে অদ্যাপি রহিয়াছে। ভবদেবের চারি পুত্র হয়, তন্মধ্যে জ্যেষ্ঠ রামগোবিন্দ অনুজ বিশ্বনাথের সহিত নহাই গ্রামে গিয়া বাস করেন; ১৯৯১ বাং ১৫ই চৈত্র তারিখের সম্পাদিত এবং দলিল বলে সরকার বাহাদুর হইতে তিনি বাৎসরিক একপালি পরিমিত ধান্য পাইবার আদেশ প্রাপ্ত হন। ভবদেবের তৃতীয় পুত্র কালী চরণ তর্কবাগীশ ন্যায়শাস্ত্রে কৃতিত্ব লাভ করেন। তৎকৃত “দায়াদর্শ" ও "ভক্তিবাদ” গ্রন্থদ্বয় অমুদ্রিত অবস্থায় আছে। কালীচরণের পুত্র ত্রিপুরা নাথ তর্কোপাধ্যায় বিরচিত “জপরহস্য” ও “মহিমস্তরব্যাখ্যা” তদীয় পাণ্ডিত্যের পরিচয় প্রদান করিতে বিদ্যমান আছে। ইহার সুযোগ্য পুত্র শ্রীযুক্ত অবন্তীনাথ তর্কসিদ্ধান্ত মহাশয় হইতে আমরা এই বংশ বিবরণ প্রাপ্ত হইয়াছি। রঘুদেব ও তৎপুত্রগণ কমলাকান্তের চতুর্থ পুত্র রঘুদেব, ইহার কৃত ন্যায় শাস্ত্রের কয়েক খানা "পাতুড়া" আছে, ইনি গীতা পাঠ করিতে করিতে মৃত্যুমুখে পতিত হইয়াছিলেন। তাহার চারি পুত্রই উপাধিধারী পণ্ডিত ছিলেন। ইহাদের নাম—হরিরাম বিশারদ, রাম রাম সৰ্ব্বভৌম; রুদ্ররাম বাচস্পতি এবং রতিরাম তর্কালঙ্কার। তন্মধ্যে বিশারদ হেড়েম্বেশ্বর হরিশ্চন্দ্র নারায়ণের সভাসদ নিযুক্ত হইয়াছিলেন ও হরিটিকরে রাজদত্ত ১০/ হাল ভূমি ব্ৰহ্মত্র প্রাপ্ত হন । ইহার পুত্র রূপরাম ভট্টাচাৰ্য্যও জয়ন্তীয়া-পতির দ্বার-পণ্ডিত নিযুক্ত হন; ইহার কনিষ্ঠ পুত্র বিদ্যানন্দ ন্যায় বাগীশ ন্যায়শাস্ত্রে বিশেষ জ্ঞানাৰ্জ্জন করিয়াছিলেন ও জনৈক পণ্ডিতকে তর্কযুদ্ধে পরাস্ত করিয়া শাপগ্ৰস্ত হন; কথিত আছে তাহার পরই তদীয় মৃত্যু হয়। ইহার ভ্রাতুষ্পপুত্র শ্রীযুক্ত বৈকুণ্ঠ নাথ তর্কভূষণ মহাশয় বৰ্ত্তমান আছেন। কানিশালির মৌদগুল্যগণ ঢাকাদক্ষিণের কানিশালি গ্রামে মৌদগুল্য গোত্রীয় সাম্প্রদায়িকগণের বাস। মৌদগুল্য গোত্রের প্রথমাগত মহাত্মার নাম গঙ্গাদাস মিশ্র। এই বংশে অনেক প্রধান ব্যক্তির উদ্ভব হয়। মেীদৃগুল্য গোত্রীয় কানিশালির রতিরাম বিশারদের নামীয় সনন্দ শ্রীহট্টের কালেক্টরীতে প্রাপ্ত হওয়া গিয়াছে। নবাব হাজি হুসেন খা বাহাদুর আরাঙ্গাবাদ ও ভাদেশ্বর হইতে তাহাকে ১৫৭০ ভূমি ব্ৰহ্মত্র দান করেন। ১৭৭১ খৃষ্টাব্দে তাহার মৃত্যু হইলে তৎপুত্র রামগোবিন্দ ভট্টাচাৰ্য ঐ ভূমি তছরূপ করেন। নবাব অইলওর খা বাহাদুর তৎপূৰ্ব্বে ঢাকাদক্ষিণ হইতে তাহাকে ৪॥১৬০ ভূমি ব্ৰহ্মত্র দান করিয়াছিলেন। এ বংশে রূপেশ্বর ন্যায়ালঙ্কার, গণেশ্বর শিরোমণি, প্রভৃতি বিখ্যাত ব্যক্তিগণ জন্মগ্রহণ করেন। গণেশ্বর পাণ্ডিত্যগুণে নবদ্বীপে “পাৰ্ব্বতী পুত্র গণেশ" নামে খ্যাত ছিলেন। ইনিও ভিন্ন ভিন্ন সনদে অনেক ভূমি ব্ৰহ্মত্র প্রাপ্ত হইয়া ছিলেন। এবংশীয় রাঘব রাম ভট্টাচার্যের নামেও নবাব হাজি হুসেনের প্রদত্ত ভূমিদানে সনন্দ আছে। তাহাতে রাঘবের পুত্রের নাম রত্নবল্লভ ছিল