পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পঞ্চম অধ্যায় ; বনভাগ প্রভৃতি স্থানের ব্রাহ্মণ বিবরণ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ৮৯ সুপরিচিত। বিদ্যাবিনোদ তন্ত্রশাস্ত্রে সুপণ্ডিত ছিলেন। মন্ত্রকোষ ও তন্ত্র চূড়ামনি নামক গ্রন্থদ্বয় তাহার কৃতিত্বের সাক্ষ্য দিতেছে; ইহার মাহাত্ম্যে মুগ্ধ হইয়া ইটা-পতি নিধিপতি তাহার কাছে মন্ত্র গ্রহণ করেন এবং নিকটেই গুরুকে কতক ভূমি দিয়া স্থাপন করেন, গুরুগৃহ বা গুরুঘর হইতে উক্ত স্থান গয়ঘর নামে খ্যাত হয়। বিদ্যাবিনোদের পুত্রের নাম জনাৰ্দ্দন, তৎপুত্র জগদীশ, তাহার পুত্র ধরাধর, তৎপুত্র পশুপতি, তৎপুত্র নরোত্তম, তৎপুত্র গিরিধারী, ইহার পুত্র হলায়ুধ, তাহার পুত্রের নাম নিশাকর, নিশাকরের পুত্রের নাম কংসনারায়ণ, ইনি ইটার রাজা সুবিদনারায়ণের সমসাময়িক ॥৬ এক সামাজিক বিষয়ে রাজা সুবিদনারায়ণের সহিত ব্রাহ্মণগণের দ্বিমত ঘটে, ইহাতে অনেক ব্রাহ্মণ দেশত্যাগী হন; কংসনারায়ণের কনিষ্ঠ ভ্রাতাও সেই সময়েই বনভাগ গমন করেন। কংসনারায়ণও রাজসন্নিধানে থাকা অবৈধ বোধে এই সময় ইটা হইতে চেয়ালিশ গমন করেন। চৌয়ালিশের গুপ্ত ও দত্ত বংশীয় তদীয় শিষ্যবর্গ ইহাতে আনন্দিত হইয়া মনুতীরে তাহার বাসস্থান নিৰ্ম্মাণ করিয়া দেন; পূৰ্ব্বস্থানের নামানুসারে এই স্থানও গয়ঘর বলিয়া খ্যাত হয় । কংস নারায়ণের পুত্রের নাম সদাশিব, তৎপুত্র জানকী বল্লভ, তাহার তিন পুত্রের মধ্যে জ্যেষ্ঠের নাম জগদীশ । এই শাখা তথা হইতে লক্ষ্মীপুর আগমন করেন, এবং তাহা হইতে অন্যশাখা মদনপুর ও কালীজুরী বাসী হন। জগদীশের পুত্র পশুপতি, তৎপুত্র রাম গোবিন্দ, তাহার পুত্র রামগতি, ইহার পুত্র রাম গোপাল ন্যায়পঞ্চানন এক প্রসিদ্ধ ব্যক্তি ছিলেন। তিনি পুটিয়া রাজ্যের দ্বারপণ্ডিত ছিলেন। প্রভৃতি স্মৃতি নিবন্ধ প্রণয়ন পূৰ্ব্বক তিনি অক্ষয় কীৰ্ত্তি স্থাপন করিয়াছেন। রাম গোপালের পুত্র রামবল্লভ, তৎপুত্র রঘুদেব কাশী-বাসী হন; ইহার তিন পুত্র-কাশীরাম বিদ্যালঙ্কার, রূপরাম সৰ্ব্বভৌম ও রাধাকান্ত শিরোমণি; ইহারাও কাশীধামে ছিলেন; কাশীস্থ বাঙ্গালী পণ্ডিত সমাজে তাহাদের বিশেষ প্রাধান্য ছিল । নাটোরের সুবিখ্যাতা মহারাণী ভবানী স্বগীয় বিশ্বেশ্বরের মন্দিরের পূৰ্ব্বদিকে এক মঠ নিৰ্ম্মাণ পূৰ্ব্বক কাশীতে “ভবানীশ্বর” শিব স্থাপনের ব্যবস্থা করেন। উক্ত মন্দির গাত্রে যে শ্লোকদ্বয় খোদিত হয়, তাহার প্রথম শ্লোকটি রূপরাম সৰ্ব্বভৌম কৃত,৭ শ্লোকটি এই ঃ– "গৌড় বারেন্দ্র ভূমীন্দ্র রামকান্তস্য ভামিনী । নিৰ্ম্মমে শ্রীভবানী শ্ৰীভবানীশ্বর মন্দিরম্॥" অৰ্দ্ধবঙ্গেশ্বরী পুণ্যশ্লোকা মহারাণী ভবানী, সাৰ্ব্বভৌমের প্রতি সন্তুষ্ট হইয়া তাহার ভরণ পোষণের ব্যবস্থা করিয়া দেন। এই সময় শ্রীহট্ট দেশীয় দেওয়ান রামভদ্র কাশীতে ছিলেন, তিনি স্বদেশী পণ্ডিতত্রয়কে দেশে আনিতে যত্ন করেন ও মহারাণীর কাছে সেই প্রার্থনা জ্ঞাপন করেন। মহারাণী বিদ্যালঙ্কার ও সাৰ্ব্বভৌমকে দেশে যাইতে অনুমতি দেন, কিন্তু কনিষ্ঠ শিরোমণিকে সঙ্গে লইয়া গঙ্গাতীরস্থ বরনগরে গমন করেন; শিরোমণি মহারাণীর বৃত্তিভোগী হইয়া তথায় বাস করিতে থাকেন। ৫. শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ২য় ভাগ ১ম খণ্ড ৫ম অধ্যায় দেখ। ৬. শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ২য় ভাগ ২য় খণ্ড ৭ম অধ্যায়ে ইহার ত্ৰিমণ লিখিত হইয়াছে। ৭. কেহ আমাদিগকে জানাইয়াছেন যে, ইটার কাছাড়ী গ্রামবাসী মুকুন্দ বিশারদ এই শ্লোক রচিত; সে কথা প্রকৃত বলিয়া বোধ হয় না।