পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

[দশ] একাকী নিৰ্জ্জনে ইদগার মাঠে চলিয়া যাইতাম, প্রকৃতির মধুর চিত্র জীবন্ত হইয়া হৃদয় উদ্বেলিত করিয়া তুলিত, আবার কবির কথা মনে পড়িতঃ “কি ছার নন্দনবন কল্পনা কল্পিল হয় কি প্রকৃত তাহে প্রসূন কলিত? মিছে শুনে কবি তথা অলির গুঞ্জন, কবির কল্পনা মাত্র মন্দারের বন । প্রকৃতির ভাণ্ডারেতে শ্রীহট্টের মাঝে কতোশোভা মনোলোভা সৰ্ব্বত্র বিরাজে॥" (পদ্য পুস্তক) "বিদেশের বর্ণনায় মুগ্ধ তনু মন, মোহবশে দেশপানে চাইনে কখন৷" (পদ্য পুস্তক) ইহার পরে গ্রন্থাদি আলোচনায়, যখন জানিলাম— এই শ্রীহট্টে কেবল শ্রীচৈতন্যের পিতৃভূমি নহে, ইহা শ্রীঅদ্বৈতাদিরও জন্মস্থান: এখানে বহু পার্ষদ, বহু পদকৰ্ত্তা, ও বহু গ্রন্থকার জাত হইয়াছেন; যখন জানিলাম, এই শ্রীহট্টের স্থানে স্থানে কত পূণ্যভূমি পড়িয়া রহিয়াছে, কত মহাপুরুষের কত পূণ্যকথা তাহাতে জড়িত: যখন জানিলাম, কেবল স্বভাব সম্পদে ও প্রাচীনত্বে নহে,- ধৰ্ম্মে ও জ্ঞানানুশীলনে, বিদ্যাবৈভবে ও রাজকীয় পদগৌরবে: শিল্পে ও ব্যবসায়ে, সাহস বা শৌর্য্যবীর্য্যে সৰ্ব্বদিকেই শ্রীহট্টের প্রতিভা সমুজ্জল রেখা পাত করিয়া চলিয়া গিয়াছে, তখন দেশের গৌরবে হৃদয় ভরিয়া গেল । কিন্তু কবির কথা মনোমধ্যে থাকিয়া থাকিয়া জাগিয়া উঠিতে লাগিল ঃ “বিদেশের বর্ণনায় মুগ্ধ তনু মন, তখন সঙ্কল্প করিলাম- শ্রীহট্টের অতীত কথা কিছু কিছু সংগ্ৰহ করিব । ইহার পরে যখন উকীল শ্রীযুক্ত চৈতন্য চরণ দাস মহাশয়ের অনুষ্ঠিত “শ্রীহট্ট দর্পণ নামক মাসিক পত্রিকা আমাদিগকে সম্পাদিত করিতে হয়, সেই উপলক্ষে সংগ্ৰহ কাৰ্য্যটাও কতকটা অগ্রসর হয়। যাহা অত্যন্ত্র সংগৃহীত হইয়াছিল, তাহা “শ্রীহট্ট দীপিকা" নামা গ্রন্থে প্রকাশিত করিতে অভিপ্রায় করিয়াছিলাম কিন্তু হইয়া উঠে নাই । আশা পাইয়া স্বগীয় খা বাহাদুর মজিদ বখত মজুমদার সাহেবের দ্বারস্থ হইয়াছিলাম, কিন্তু "Mazumder Family" প্রকাশিত করায় তিনি আর ইহা ছাপাইতে অগ্রসর হন নাই। লংলার জমিদার স্বগীয় মৌলবী আলী আমজদ খার আশ্বাসে বাক্যে উৎফুল্ল হইয়া দীপিকার একটা প্রতিলিপি তাহার কাছে পাঠাইয়া দিলাম, কিন্তু তাহা আর ফেরতই পাইলাম না! অতঃপর পৃথিমপাশ৷ হইতে "শ্রীহট্টের ইতিহাস" নামে এক ক্ষুদ্র পুস্তিকা প্রকাশিত হইল, ব্যাপারদুষ্টে দীপিকার পরিণাম ভাবিয়া নিরাশ হইলাম; কিন্তু সঙ্কল্প ভঙ্গ হইল না, ভগবানের উপর নির্ভর করিয়া