পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৯৮ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত তৃতীয় ভাগ-প্রথম খণ্ড বৈষ্ণব রায় বৈষ্ণব ধৰ্ম্মাবলম্বী, অসাধারণ ব্যক্তি পরায়ণ ও সিদ্ধ পুরুষ ছিলেন। তাহার মহাত্ম্যে সৰ্ব্ব সাধারণ তাহাকে দেবতার ন্যায় ভক্তি করিত। বৈষ্ণব রায় হইতেই এ বংশীয়গণ গোস্বামী উপাধি ধারণ করিয়া আসিতেছেন। বৈষ্ণব রায়ের শ্যামচাদ নামে এক পুত্র ছিলেন। ইনি পিতার বাধ্য ছিলেন না, এবং তজ্জন্য পিতৃশাপে ভস্মীভূত হন ২১ পুত্ৰশোকে শ্যামচাদের গর্ভধারিণী উন্মত্তার প্রায় হইয়া উঠেন, তখন পুত্ৰশোক-সন্তাপ্ত ভ্রাতৃজায়ার মনোরঞ্জনা মনোহর রায় আপনার এক পুত্র তাহার কোলে স্থাপন করিয়া বলেন “অদ্যাবধি আমার পুত্ৰই তোমার পুত্র হইল এবং অদ্যাবধি তাহারা বৈষ্ণব রায়ের বং বলিয়া খ্যাত হইবে।” মনোহর রায়ের সন্তানেরা তদবধিই “বৈষ্ণব রায়ের বংশ" বলিয়া খ্যাত । মনোহরের পাঁচ পুত্রের মধ্যে অনন্তরাম ও বৈদ্যনাথ বিষ্ণুপুর পরিত্যাগ পূৰ্ব্বক কুরয়াতে আসিয়া বাস করেন। কুরুয়ার গোস্বামীগণ ইহাদেরই সন্তান। কুরুয়াতে তত্ৰত্য বৈদ্যনাথ পঙ্গ নামে কতক ভূমি, চৌয়ালিশবাসী জগন্নাথ গুপ্ত কর্তৃক প্রদত্ত হয়, ইহার কাগজ কালেক্টরীতে পাওয়া যায়। এই “পঙ্গ” বা পং অর্থাৎ পণ্ডিত (যথা চঙ্গ= চং= চণ্ডাল) বৈদ্যনাথ, গোস্বামী বংশীয় বৈদ্যনাথ হইতে অভিন্ন বলিয়াই বোধ হয়। বৈদ্যনাথ গোস্বামীর পুত্র জয়গোবিন্দ খ্যাতনামা ব্যক্তি ছিলেন। ইহার নামের দুই খানা ব্ৰহ্মত্রের সনন্দ কালেক্টরীতে পাওয়া যায়, ইহাতে ১৮/০ হাল ভূমি প্রদত্ত হইয়াছিল।২২ অনন্তরামের পুত্রের উপাধি তাহার প্রাপ্ত সনন্দে “মহান্ত” বলিয়া লিখিত আছে। নবাব শমশের খা বাহাদুর হইতে একখানা সনন্দে (নং ১০২) তিনি কুরুয়া হইতে ৫w২॥২॥০ ব্ৰহ্মত্র প্রাপ্ত হন। ঐ নবাবই দ্বিতীয় সনন্দে তাহাকে পং কাজাকাবাদ, ইন্দেশ্বর, খালিসা বনভোগ ও হাউলি সোনাইতা হইতে মোটে ১৩॥২॥৫॥০ ভূমি ব্ৰহ্মত্র দেন।২৩ যুগলটীলার প্রতিষ্ঠাতা অনন্তরামের ভ্রাতা বৈদ্যনাথের পৌত্র যুগলকিশোর একজন বিখ্যাত ব্যক্তি ছিলেন। শ্রীহট্টের ইতিবৃত্তের ১ম ভাগ ৯ম অধ্যায়ে যুগলটীলার আখড়ার কথা লিখিত হইয়াছে, যুগলকিশোর গোসাঞ্চিই এই আখড়ার স্থাপয়িতা। তিনি ভেখ আশ্রয় পূৰ্ব্বক যে টীলায় স্বীয় সাধনাশ্রম প্রস্তুত করেন, তাহাই তাহার নামানুসারে যুগলটীলার আখড়া নামে খ্যাত হয়। নবাব ২১. অদ্ভুত বকুলবৃক্ষ। কথিত আছে যে পতিশাপে পুত্রের মৃত্যু ঘটিলে পত্নী পুত্ৰশোকে আকুলিত হইয়া অঙ্গের অলঙ্কার উন্মোচন পূৰ্ব্বক এক গৰ্ত্তে প্রোথিত করিয়া তদুপরি এক বকুল বৃক্ষ রোপণ পূৰ্ব্বক স্বামীকে বলিয়াছিলেন “পুত্ৰশোকে আমার অন্তর কিরূপে অবস্থা প্রাপ্ত হইয়াছে, এই বৃক্ষ তাহার সাক্ষ্য দিবে।" বিষ্ণুপুরে উক্ত বকুলবৃক্ষ অদ্যাপি জীবিত আছে; আশ্চর্যের বিষয় যে ইহার শাখা প্রশাখা ভগ্ন করিলে তাহার মধ্যভাগ কৃষ্ণবর্ণ লক্ষিত হইয়া থাকে। মতান্তরে কথিত হয় যে, বৈষ্ণবরায়ের পুত্ৰশোকাতুরা পত্নী প্রাণত্যাগের ইচ্ছায় এক সুড়ঙ্গ পথে প্রবেশ করেন, বৈষ্ণবরায় তদীয় কেশগুচ্ছ ধারণ পূৰ্ব্বক বাধাদেন, তাহাতে তাহা উৎপাটিত হইয়া যায় ও পরে বৈষ্ণরায়ের প্রভাবে তাহাই বকুলবৃক্ষে পরিণত হয় এবং তাহাতেই ইহার অভ্যন্তর ভাগ কেশের ন্যায় কৃষ্ণবর্ণ বিশিষ্ট। ২২. ১. সুনন্দ নং ১৭৮ দাতা নবাব মীর আলী খা বাহাদুর, ভূপরিমাণ ৩॥০ ২ স্থান কুরুয়া। ২. সনন্দ নং ২৬২ দাতা সৈয়দ কুতব বা বাহাদুর, ভূপরিমাণ ১৪॥১"স্থান ॥ স্থান বোয়ালজুর। ২৩. কালেক্টরীতে আনন্দি চাদ গোসাঞির নামে নবাব নোয়াজিস মোহাম্মদ খা বাহাদুরের মোহরাঙ্কিত দুই খান সনন্দে ছয়টি পাণণা হইতে যথাক্রমে ৪১/৬ এবং ৭১/i০ দেবত্র দানের কথা অবগত হযো যায়। সনদের মস্তব্যে দৃষ্ট হয় যে আনন্দি চাদের ১১৮১ সালে মৃত্যু হয় এবং তাহার পুত্ৰ সৰ্ব্বব্রত শিরোমণি উহা “তছরূপ" করেন। এই আনন্দির্চাদ কুরুয়াবাসী ছিলেন বলিয়া লিখিত থাকায়, ইহাকেও ঐ একই বংশোদ্ভব বলিয়াই জানা যায়।