পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পঞ্চম অধ্যায় ; বনভাগ প্রভৃতি স্থানের ব্রাহ্মণ বিবরণ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ৯৯ হরকিযুণ দাস, মনসুর উলমুলক বাহাদুর প্রদত্ত সনন্দে (৩ জলুস) পলডর পরগণা হইতে দেবত্রসূত্রে তিনি ৯২৫/০ হাল ভূমি দান প্রাপ্ত হয়। রাজগুরু নিত্যানন্দ যুগলকিশোর জ্ঞাতি ভ্রাতা অনুপনারায়ণও পৈতৃক স্থান পরিত্যাগী ছিলেন, তিনি শিষ্যানুরোধে বিষ্ণুপুর হইতে ঢাকাদক্ষিণে আগমন করেন। সেন বংশীয় সেই শিষ্যের বংশও এক্ষণে বিলুপ্ত। উক্ত শিষ্য গুরুকে দক্ষিণভাগ মৌজাস্থ এক সুশোভন টলার উপরে বাড়ি প্রস্তুত করিয়া দিয়াছিলেন। বৃহৎ দীঘীসহ তাহা “গোসাঞির বাড়ীর টালা" নামে কথিত হয়। “অনুপরাম” (মৃত্যু ১৭৭৮ খৃষ্টাব্দ) নবাব হায়দর আলী খা বাহাদুর হইতে ঢাকাদক্ষিণে ০ ৫ ০ ভূমি ব্ৰহ্মত্র প্রাপ্ত হন। ইহার পুত্রের নাম নিত্যানন্দ গোসাঞি। নিত্যানন্দ জ্ঞান-গুণ সম্পন্ন ব্যক্তি ছিলেন, জয়ন্তীয়া-পতি দ্বিতীয় রামসিংহ ইহার মন্ত্রশিষ্য ছিলেন। রাজা রামসিংহ হইতে তিনি জয়ন্তীয়ায় ৩৮/০ হাল ভূমি দেবত্র প্রাপ্ত হন।২৪ কেবল ঢাকাদক্ষিণে নহে, এই বংশীয় গোস্বামীগণ পরে বাউসী, বাউরকাপন, দশঘর, জগন্নাথপুর প্রভৃতি স্থানে বিস্তৃত হইয়া পড়েন। একঘর নবদ্বীপবাসী হইয়াছেন ২৫ কিন্তু বিষ্ণুপুর ও কুরুয়াই প্রধান গদী। কামরূপের অন্তর্গত সুয়ালরুচি নামক স্থানের কিঞ্চিৎ ভাটিতে একটি দেবালয় আছে, উহার অধিকারী “শিলটীয়া গোসাই” নামে খ্যাত। উহারা এই বংশীয় কি না, জানা যায় নাই। গুণাভিরাম কৃত আসাম বুরুঞ্জীতে শ্রীহট্ট হইতে আসামে ব্রাহ্মণ উপনিবেশের কথা আছে । পরগণা-বোয়ালজুর ভরদ্বাজ গোত্রীয় ব্রাহ্মণগণ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ২য় ভাগ ৩য় খণ্ডের ২য় অধ্যায়ে মহারাজ বিজয় সিংহের গুরু রাঘব ভট্টাচার্য্যের নামোল্লেখ করা গিয়াছে। ভরদ্বাজ গোত্রীয় উক্ত রাঘব ভট্টাচার্য্যের জ্যেষ্ঠপুত্র সাচায়নিতে বাসস্থান স্থির করেন। মধ্যমপুত্র পঞ্চখণ্ডবাসী২৬ হন; তাহার তৃতীয় পুত্র বংশীবদন বোয়ালজুরে গিয়া বাস করেন ও তথায় প্রতিপত্তি স্থাপন পূৰ্ব্বক তত্ৰত্য “রাজ পণ্ডিত” প্রাপ্ত হন। ইহার দুই পুত্র হরিহর ও মহাদেব। মহাদেবের অষ্টম পুরুষে কালীশঙ্কর ন্যায়পঞ্চাননের পুত্রাদি না তাকায় এই শাখা বিলুপ্ত হইয়াছে। হরিহরের দুইটি বিবাহ ছিল, তাহার প্রথমা পত্নীর গর্ভজাত সন্তানের নাম জগন্নাথ বিশারদ। তদীয় দ্বিতীয় স্ত্রীর গর্ভজাত পুত্র ভবদেব ভট্টাচার্য্যে কর্তৃক জৈষ্ঠ্য পৈতৃক সম্পত্তি হইতে প্রথমে বঞ্চিত হইয়া রেঙ্গা পরগণায় নিজ মাতুলালয়ে প্রতিপালিত ও শিক্ষিত হইয়াছিলেন, পরে তিনি রাজদ্বারে অভিযোগ করিয়া পৈতৃক সম্পত্তি ও শিষ্য সম্পদ প্রাপ্ত হন। তদ্ব্যতীত তত্ৰত্য গজেন্দ্র নদী, অনন্ত নদী, রঘুনাথরায়, শেখ হাশিম প্রভৃতির সম্পাদিত ১লা জ্যৈষ্ঠ ১১৩১ সালের এক দানপত্রে “বেদীয়া ডাকাতির ভিটার পূৰ্ব্ব, বড়খালা পশ্চিম; মইনকার হদের খালর দক্ষিণ ও জানের উত্তর” এই চতুঃসীমান্ত গর্ত একখণ্ড ভূমি দান প্রাপ্ত হন এবং তত্ৰত্য সুবিদরায়, গন্ধৰ্ব্বারায় ও রঘুরায় প্রদত্ত ১১৩৭ সালে সম্পাদিত এক দলিলে বোয়ালজুরের রাজপণ্ডিতি লাভ করেন। ২৪. শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত হয় ভাগ ৪র্থ খণ্ড ৩য় অধ্যায় দ্রষ্টব্য। ২৫. নবদ্বীপে এই শাখায় শ্ৰীযুত পদ্মলোচন, নন্দলাল ও কুঞ্জলাল গোস্বামী প্রভৃতি জীবিত আছেন। ২৬. পঞ্চখণ্ড হইতে এক শাখা ইন্দম্বেরবাসি হইয়াছেন; তত্ৰত্য শ্ৰীযুত কালী কুমার তর্কচূড়ামণি এই শাখা সম্ভূত।