পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ( পূর্বাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/২৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ab * শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত । [ ২য় ভাঃ ১ম খঃ ভাগে ) করমণ্ডল উপকূলের ওলন্দাজ গবর্ণর ভান-ডিন-ত্রোক ( Van den Broucke) কৃত মানচিত্রে ব্ৰহ্মপুত্র নদের পূৰ্ব্বতীরে অসুই’ এবং উদিসি’ নামে দুই ক্ষুদ্র খণ্ডরাজ্যের উল্লেখ আছে । সৈয়দ হুসেন শাহের সময়ে ঐ অঞ্চলে “মুদ্রাজ্জমাবাদ” নামে এক ক্ষুদ্র খণ্ডরাজ্য থাকার সংবাদ পাওয়া যায়। মুয়াজ্জমাবাদ অর্থে পুণ্যময় স্থান। শ্ৰীহট্টও মোসলমানগণের কাছে পুণ্য ভূমি। কিন্তু এ সকল স্থানের পরিচয় করা এখন দুরূহ ব্যাপার। ঐ মানচিত্রে ত্রিপুরা রাজ্যের পাশ্বে ‘কোডাবাসকাম্‌’ নামে আর একটা স্বতন্ত্র রাজ্যের উল্লেখ पृष्ठे হয়। শ্রীহট্টেও ‘চিবিটাবিটিয়া’ (Civite Betia) =(ft N «Ifz! একটা স্থান ছিল ; এই নাম লাটিনের বাঙ্গালা রূপান্তর মাত্র । মগধ ও আজমরদন রাজ্য শ্রীহট্টের অন্তর্গত ছিল বলিয়া যেমন নির্দেশ আছে, অসুই ও উদিসি প্রভৃতি সম্বন্ধে তদ্রুপ স্থান নির্ণয়ক কোন প্রমাণ নাই । এতদ্ব্যতীত পূৰ্ব্বাঞ্চলীয় সমস্ত নিম্ন ভূমিকে মোসলমান ঐতিহাসিকগণ ভোটা’ এই সাধারণ নামে পরিচিত করিয়াছেন। আইন-ই-আকবরিতে ভাটী প্রদেশের উল্লেখ আছে। ঢাকা, ফরিদপুর, বাকরগঞ্জ প্রভৃতি ভাটী প্রদেশের অন্তর্গত । শ্ৰীযুক্ত কেদার নাথ মজুমদার প্রণীত ময়মনসিংহের ইতিহাসের ২৯ পুঃ লিখিত আছে যে, ময়মনসিংহের পূৰ্ব্বসীমায় প্রাচীনকালে মেঘনানদী ছিল, বর্তমান সময়ে ঐ নদী ঐ অংশে ধনু নামে পরিচিত, মোসলমান ঐতিহাসিকগণ মেঘনাতটভূমিকে ভাট বলিয়া নির্দেশ করেন। ময়মনসিংহের পূর্ব প্রাস্তস্থ খালিসাজুরীকে ভাটী নামে অভিহিত হইতে অনেক কাগজপত্রে দেখিতে পাওয়া যায়। ভাটী প্রদেশের কথা শ্ৰীহট্টেও শুনা যায়, শ্রীহট্টের পশ্চিমাংশে ইহা ছিল, এখনও শ্ৰীহট্টে ভাটী’ শব্দে হবিগঞ্জাদি পশ্চিমভাগস্থ দেশই উদ্দীষ্ট হয় । পূৰ্ব্বে এই যে সকল রাজকীৰ্ত্তি বর্ণিত হইল, এ সমস্তই খৃষ্টীয় ত্রয়োদশ শতাব্দীর মধ্যভাগের পূৰ্ব্বে সংঘটিত হইয়াছিল। এই নিষ্কর্ষ । সময় পর্য্যন্ত শ্ৰীহট্টের ঐতিহাসিক বিবরণ যদিও যৎসামান্তরূপ পাওয়া যায়,—যদিও ইহাতে ইতিহাস পাঠকের পরিতৃপ্তির সম্ভাবনা নাই, তথাপি এই পৰ্য্যন্তই শ্ৰীহট্টের গৌরবাত্মকাল বলিয়া নির্দেশ করা যাইতে পারে। জনশ্রুতির বীণাধবনি যদি একেবারে মিথ্যা না হয়,—এই সময়টিতেই শ্রীহট্ট প্রাচীনত্ব গৌরবে বিশেষ স্পৰ্দ্ধা করিতে পারে।