পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/১০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাধারণ বিভাগ ষষ্ঠ অধ্যায় বৈদ্য ও কায়স্থাদির কথা শহরের প্রাচীন বংশ উত্তর শ্রীহট্টের বিবরণ বলিতে গেলে প্রথমেই শহরের কথা বলা উচিত, কিন্তু বিধাতার অভিশাপে শহরের প্রধান বংশীয়গণ প্রায় নিৰ্ব্বংশ হইয়া পড়িয়াছেন। যাহারা অবশিষ্ট ছিলেন, ১৮৯৭ খৃষ্টাব্দের প্রলয়ঙ্কর ভূকম্পের পর আসামের কাল কালাজ্বরের করাল কবলে দুই বৎসরের মধ্যে তাহারা গ্ৰাসিত হইলেন। শহর একরূপ নিৰ্ম্মানুষ্য হইয়া গেল! জনশূন্য বাটিকা সমূহে শহর পরিপূর্ণ হইল, প্রতি গৃহ প্রাঙ্গন শ্মশানে পরিণত হইল, পল্লীগুলি উচ্ছন্ন হইয়া জঙ্গলপূর্ণ হইল, এই মহামারীতে রাযনগর-বাসীরা অধিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ সকল কথা লিখিতে গেলে হৃদয় ভাঙ্গিয়া পড়ে; “শাহজলাল” গ্রন্থ প্রণেতা শ্রীযুক্ত বাবু রজনীরঞ্জন দেব এ সম্বন্ধে আমাদিগকে যাহা লিখিয়া পাঠাইয়াছেন, সৰ্ব্বাগ্রে তাহারই কিয়দংশ উদ্ধত করিলাম। “শ্রীহট্ট শহরের রায়নগরে ইংরেজ রাজত্বের মধ্যভাগ পর্যন্ত অনেক প্রতাপশালী দেব, দাস, সেন ও মজুমদার প্রভৃতি বৈদ্য ও কায়স্থ ছিলেন। ইহাদের মধ্যে দেব ও রায়গণের রায় উপাধি ছিল। দাসগণ বৰ্ত্তমানে নিৰ্ব্বংশ, দেবদেব একশাখা নদীর দক্ষিণ পারে উঠিয়া যান ও নবাব সরকারে চাকুরী করিয়া দেওয়ান উপাধি পান ও দেওয়ানগাও স্থাপন করেন। অন্য শাখা রায়নগরে অবস্থান করেন; এই বংশে সুপ্রসিদ্ধ মৃত্যুঞ্জয় দারোগা জন্মগ্রহণ করেন। মৃত্যুঞ্জয় দারোগা ও লালা আনন্দ রাম প্রায় সমসাময়িক, ইহাবা প্রথমে এ অঞ্চলে দালান-বাড়ী নিৰ্ম্মাণ করেন। স্বগীয় গিরীশ রাজার বাড়ীর পূৰ্ব্বে টীলায় মৃত্যুঞ্জয় বাড়ী নিৰ্ম্মাণ করেন। হালাবাদী জবিপের দাগ মৃত্যুঞ্জয়ের নাম আছে।” রায়বাহাদুর রাধানাথ “ঐ মৃত্যুঞ্জয়ের বাড়ীর দক্ষিণ-পূৰ্ব্ব কোণে রায়বাহাদুর রাধানাথের বাড়ী ছিল। তিনি এক সময় ধন-গৌরবে, কুল-গৌরবে ও পদমৰ্যাদায় শ্রীহট্ট জিলার সৰ্ব্বত্র কায়স্থ সমাজে সুপরিচিত হন। তিনি একবার দোল উপলক্ষে কৃত্রিম বৈলাস নিৰ্ম্মাণ করিয়াছিলেন। তরফ, মান্দারকন্দি, ইটা, চৌয়ালিশ, লংলা দুলালী প্রভৃতি স্থান হইতে অনেক ভদ্রলোক আহুত হইয়া আসিয়াছিলেন। “রায়বাহাদুরের খালি বাড়ী” রায়নগরের বালকের নিকটও সুপরিচিত। বাড়ীর ঈশান কোণে টলার ন্যায় কৈলাস ১ লালা আনন্দরাম ইংরেজ আমলেব রাজকৰ্ম্মচাবী ছিলেন। মৃত্যুঞ্জয় হালাদি জরিপের সময় বৰ্ত্তমান থাকিলে লালার শেষাবস্থাতেই দারোগার অভু্যদয় হইয়া থাকিবেক। সুতরাং উভয়কে প্রায় সমসাময়িক বলা অন্যায় নহে। মৃত্যুঞ্জযেব টালা পরে বাজা গিযা চন্দ্রেব অধিকার ভুক্ত হয়। লালা আনন্দরাম ও রাজা গিরীশচন্দ্রের জীবন কথা চতুর্থভাগে বর্ণিত হইবে ।