পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/১১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃতীয় ভাগ-প্রথম খণ্ড 0 শ্ৰীহট্টের ইতিবৃত্ত ৯০ দুলালীর বৈদ্য বংশ “দুলালী দুৰ্ল্লভ স্থান, মঙ্গলচণ্ডীর অধিষ্ঠান” এই প্রবাদোক্ত দুলালী পরগণা ব্রাহ্মণ বৈদ্যাদির বাস হেতু তদঞ্চলে দুৰ্ল্লভ স্থানই হইয়াছিল। মোগল রাজত্বের প্রারম্ভে দাসপাড়া ও হুজুরী গ্রামবাসী বৈদ্যবংশের আদিপুরুষ লক্ষ্মীনারায়ণ দাস স্বীয় গুরু পুরোহিতাদি সহ দুলালীতে আসিয়া বাস করেন। বিক্রমপুরের অন্তর্গত (অধুনা পদ্ম-গর্ভগত) নোয়াপাড়া নামক গ্রাম তাহাদের আদি বাসভূমি ছিল বলিয়া কথিত আছে। দাসপাড়া নিবাসী ভট্টাচায্যগণের আদি পুরুষ ধরাধর মিশ্র লক্ষ্মীনারায়ণ দাসের গুরু ও পুরোহিত ছিলেন। হুগলী জিলার অন্তঃপাতী গুপ্তিপাড়া গ্রাম হইতে গুপ্তপাড়া ও পুরকায়স্থপাড়া নিবাসী গুপ্তগণের আদি পুরুষ সহস্রাক্ষ গুপ্ত আগমন করেন এবং লক্ষ্মীনারায়ণ দাসের কন্যাকে বিবাহ করিয়া দুলালীতে অবস্থিতি করেন। ইহার পরে হবিনগর, মাজপাড়া, ইলাসপুরবাসী গুপ্তগণের আদি পুরুষ কাশীনাথ গুপ্ত দুলালীতে আসিয়া বাসভূমি নিদ্ধারণ করেন। কাশীনাথ রাঢ়দেশ হইতে আসিয়া প্রথমতঃ শ্ৰীহট্ট শহরের প্রান্তবৰ্ত্তী বরশালা গ্রামে বাসস্থান নিৰ্ম্মাণ করিয়াছিলেন, পরে দুলালীতে চলিয়া যান। কাশীনাথের পুত্র ভরতরায় মুর্শিদাবাদের দেওয়ান ছিলেন, তিনি হবিনগর পরগণা নিজ অধিকার ভুক্ত করিয়া লইয়াছিলেন। হবিনগর পরগণা দুলালীর সহিত ওতোপ্রোতভাবে সংমিশ্রিত। দাস বংশীয় প্রতাপনারায়ণ মুর্শিদাবাদের নবাব দরবারে পেশকার ছিলেন। ঐ বংশীয় কান্তনাথ দাস শ্রীহট্ট জজ আদালতের প্রসিদ্ধ উকিল ছিলেন। গুপ্তবংশের তিলকরায় কবিরাজ সংস্কৃত ভাষায় সুপণ্ডিত ছিলেন, “তিনি শিরোমণি” উপাধি লাভ করেন। তিনি বৈষ্ণব গ্রন্থে সুপণ্ডিত ছিলেন এবং শ্রীহট্ট গোস্বামীকৃত একখানা গ্রন্থের টীকা রচনা করিয়াছিলেন। অধুনা-প্রকাশিত রঘুনাথ লীলামৃত নামক এক পুস্তকে লিখিত আছে যে শ্রীহট্টের তিনি সহজ ভজন মতের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। এই মত প্রচারক শ্যামকিশোর ঘোষ, ও রঘুনাথ ভট্টাচাৰ্য্য প্রভৃতি তাহার শিষ্য ছিলেন। তিনি ব্রাহ্মণ শিষ্য করায় শ্রীহট্টের ব্রাহ্মণ পণ্ডিতগণ তাহার একান্ত বিরুদ্ধ ছিলেন;এবং তজ্জন্য উভয় শাস্ত্র-যুদ্ধের উদ্যোগ হইয়াছিলেন। গুপ্তবংশী গৌরীচরণ একজন শিক্ষিত ব্যক্তি ছিলেন; তিনি মুন্সেফ নিযুক্ত হইয়াছিলেন। গুপ্তপাড়ার যুগলকিশোর গুপ্তের পুত্র স্বগীয় জগদ্বন্ধু গুপ্ত বৈষ্ণব ও সাহিত্যানুরাগী ছিলেন। বিশ্বনাথ চক্ৰবৰ্ত্তী কৃত রূপচিন্তামণি গ্রন্থের পদ্যানুবাদ তিনি প্রকাশ করেন। তৎকৃত “অপূৰ্ব্ব দৰ্শন” পদাবলী পাঠে তদীয় ভজননিষ্ঠার পরাকাষ্টর প্রমাণ পাওয়া যায়। মোসলমান রাজত্বকালে দাসপাড়ার দাসবংশীয় যোগ্যতম ব্যক্তি পরগণার পাটওয়ারীর কাজ করিতেন। জগন্নাথ পুরকায়স্থ শেষ পাটওয়ারী। ১৮৩৮ খৃষ্টাব্দে এই পদ উঠিয়া যায়। দাস বংশের বৰ্ত্তমান&গৗরবভাজন পেনশন প্রাপ্ত ডিঃ মাঃ শ্ৰীযুত সদয়াচরণ দাসের প্রপিতামহ সমীপবৰ্ত্তী আখালিয়া গ্রামে গিয়া বাস করেন। ইহারা এখনও আখালিয়া বাসী। f W ১১. শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত উত্তবাংশ ৩য় ভাগ ৩য় খণ্ড ৮ম অধ্যায়ে ইহার কথা উক্ত হইয়াছে। ১২. শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত উত্তরাংশ ৪র্থ ভাগে ইহাব জীবন চরিত বর্ণিত হইবে।