পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/১৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৪৫ তৃতীয় অধ্যায় : বৈদ্য ও কায়স্থাদি বংশ 0 শ্ৰীহট্টের ইতিবৃত্ত নামে খ্যাত হন; র্তাহার বংশীয়গণ অদ্যাপি সম্মানের সহিত বাস করিতেছেন। পরবর্তীকালে পালবংশীয় বাণেম্বর ও ভবানীনারায়ণ পাল দুইটি দীঘী খনন করিয়া যশস্বী হইয়া গিয়াছেন। পাল বংশীয় চৌধুরীগণের অনেক দেবত্র ও ব্রহ্মত্র দানের জনশ্রুতি আছে। কিন্তু তত্তাবতের নিদর্শন এক্ষণে দুষ্প্রাপ্য হইয়াছে। পরবর্তীকালে প্রাপকগণের উত্তরাধিকারিগণ নিজ নিজ নামে বন্দোবস্ত গ্রহণ করায় সেই ভূম্যাদির নির্দেশ করা কঠিন। পঞ্চখণ্ডের প্রাচীন বিগ্রহ স্বগীয় বাসুদেবের রথ চিত্রিত করা, রথ টানিবার রজজু নিৰ্ম্মাণ করা, রথের সময় বাদ্য করা এবং ভোগের দুগ্ধ যুগান ইত্যাদি নিয়মিত প্রত্যেক কায্যের জন্য র্তাহাদের দত্ত নিৰ্দ্দিষ্ট ভূমির উপস্বত্ব নিৰ্দ্ধারিত ছিল, ঐ সকল ভূমিও পরে বিভিন্ন তালুকে পরিণত হয়। রথ চিত্রকরের তালুক “চান্দগঙ্গা” নামে খ্যাত হইয়াছে দুগ্ধ যুগানিয়ার তালুকের নাম “দুধ বক্সি” ইত্যাদি। পালবংশের ননীপাল চৌধুরী ও র্তাহার পরবত্তী গৌরনারায়ণ পাল, হরনারায়ণ পাল প্রভৃতি প্রসিদ্ধ ব্যক্তিবর্গের নামোল্লেখ আবশ্যক, ইহারা কীৰ্ত্তিমান পুরুষ ছিলেন। পরবর্তীকালে মোনশী হরকৃষ্ণ পাল কালেক্টরীর দেওয়ান ছিলেন। র্তাহার কনিষ্ট ভ্রাতা মোনশী কৃষ্ণতায় দেওয়ানজী কুমিল্লা শহরে স্বগীয় আনন্দময়ী মূৰ্ত্তি প্রতিষ্ঠা করেন। এই মূৰ্ত্তি অদ্যাপি তথায় পরিপূজিতা হইয়া পালবংশের সদনুষ্ঠানের উদাহরণ প্রদর্শন করিতেছে। গবর্ণমেণ্ট হইতে তিনি “রায় বাহাদুর” উপাধি প্রাপ্ত হইয়াছিলেন। ইহার পুত্র স্বগীয় কৃষ্ণকিশোর পাল চৌধুরী যে শুধু ক্ষমতাবান জমীদার ছিলেন তাহা নহে, সৰ্ব্বসাধারণের হিতানুষ্ঠানে তাহার উদ্যম সদা লক্ষিত হইত। পঞ্চখণ্ডের মধ্য-ইংরেজী স্কুলটি তাহারই যত্নে ও ব্যয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়। পঞ্চখণ্ডের “বৈরাগী বাজার” তিনিই স্থাপন করেন। তিনি সকলকে পরিতোষ পূৰ্ব্বক ভোজন করাইতে অতি ভালবাসিতেন ও প্রায়শঃ ব্রাহ্মণ ভোজন করাইতেন। স্কুলের ছাত্রদিগকে সময়ে কমলা ও আম্র প্রভৃতি ফল ভুরি পরিমাণে বিতরণ করিতেন। তৎপুত্র শ্ৰীযুক্ত কালীকিশোর পাল চৌধুরী বৰ্ত্তমান আছেন এবং পূৰ্ব্বোক্ত আনন্দময়ীর সেবা পরিচালনার্থে ছয়শত টাকা আয়ের একখণ্ড ভূমি অর্পণ করিয়াছেন। পঞ্চখণ্ডের ১নং হইতে ১৮নং পৰ্য্যন্ত তালুকগুলি এই এক বংশের ব্যক্তিগণের নামে আখ্যাত ও বন্দোবস্ত হইয়াছিল। দত্ত বংশ ও দাস বংশ পাল বংশের ন্যায় দত্ত বংশও অতি প্রাচীন। পাল বংশের এক কি দুই পুরুষ পরে শ্রীমান দত্ত প্রথমে পঞ্চখণ্ডে উপনিবিষ্ট হন বলিয়া কথিত। দত্ত বংশের খ্যাতি প্রতিপত্তিও সুপ্রতিষ্ঠিত, কিন্তু দুঃখের বিষয় যে আমরা সুপাতলার কৃষ্ণাত্রেয় গোত্রীয় এই সুপ্রাচীন দত্ত বংশের এবং যাঁহাদের বসতিহেতু পঞ্চখণ্ডের দাসগ্রামের নাম হয়, সেই দাসবংশীয়ের কোন বিবরণই জ্ঞাত হইতে পারি নাই। রিচির দত্তগণ সুপাতলার দত্ত বংশের শাখাসস্তুত। সুপাতলার এই সুবিখ্যাত দত্তবংশের জনৈক খ্যাতিমান পূৰ্ব্বপুরুষের নাম সরিদত্ত ছিল। ইহার প্রভাব প্রতিপত্তি হেতু অনেকে ইহাকেই দত্ত বংশ প্রতিষ্ঠাতা বলিয়া জানে। ইদানীং এই বংশে গোপীনাথ দত্ত চৌধুরী, যুগলকিশোর দত্ত চৌধুরী প্রভৃতি এবং দাসবংশে চণ্ডীপ্রসাদ মোনশী প্রভৃতির উদ্ভব হয়। তত্ৰত গৌরচন্দ্র দাস মুন্সেফ ছিলেন। এবং রামরতন মোনশী একজন প্রসিদ্ধ উকীল ছিলেন। দত্ত বংশীয় বিষ্ণুদত্ত ব্রহ্মচারী পঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়ন করিতেছিলেন, তাহার আশা অতি উচ্চ ছিল কিন্তু অকালে প্লেগে মারা যান। দত্ত বংশে