পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/১৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৪৯ তৃতীয় অধ্যায় বৈদ্য ও কায়স্থাদি বংশ 0 শ্ৰীহট্টের ইতিবৃত্ত সেই স্থানেই অবস্থিতি করিতে লাগিলেন। ইহারাই হাসার গায়ের আদিত্য বংশের প্রতিষ্ঠাতা এবং হররাম স্বয়ং ছোটলিখার আদিত্য বংশের আদিপুরুষ। যখন হররাম পুরোহিত ও চিকিৎসক সহ ছোটলিখায় আগমন করেন, তখন এদেশ জঙ্গলাকীর্ণ ছিল; ভদ্রলোক মধ্যে দাম বংশীয়গণ তথায় বাস করিতেন। যে কিছু আবাদি ভূম্যাদি র্তাহাদেরই অধিকৃত ছিল। প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রাণবধের ষড়যন্ত্র হররামেব অর্থবল অল্প ছিল না, ফকিরের পরামর্শে তিনি সেই অর্থে জঙ্গল আবাদ করাইয়া তাহা অধিকার করিয়া লইতে লাগিলেন। প্রথমে এই বিষয়ে কাহারও বিশেষ লক্ষ্য হয় নাই, পরে নামবংশীয়গণ দেখিতে পাইলেন যে, হররাম বিস্তীর্ণ ভূভাগ আয়ত্ত করিয়া লইয়াছেন। তখন তাহাদের ঈর্ষা উপজাত হইল, কিন্তু ইহার কোন প্রতীকার করিতে পারিলেন না। র্তাহারা ফকিরসংরক্ষিত হররামের কোনরূপ ক্ষতি করিতে না পারিয়া, উভয়কে বধ করিতে ষড়যন্ত্র করিতে লাগিলেন। অবশেষে এক ক্ষৌরিককে বাধ্য করিয়া এই পাপকাৰ্য্যে প্রণোদিত করিলেন। ক্ষৌরিক একদা ফকিরকে ক্ষেীর করিতে আসিয়া স্বীয় অভিসন্ধি সাধনের অবসর অনুসন্ধান করিতে লাগিল, কিন্তু ভযে তাহার সবর্বাঙ্গ কম্পিত হইতে লাগিল—দেহ অবশ হইয়া গেল। তদবস্থায়ও সে ফকিরের গলদেশে ক্ষুব বসাইয়া দিতে চেষ্টা পাইল, কিন্তু উদ্দেশ্য ব্যর্থ হইল— ফকিরের কিছুই হইল না। ক্ষৌরিক ভীত হইল, তাহার অক্ষমতা ফকিরের দৈবপ্রভাব-সঞ্জাত বলিয়া বোধ করিল এবং দামদের কুমন্ত্রণা প্রকাশ পূৰ্ব্বক সে ফকিরের পায়ে পড়িয়া ক্ষমা প্রার্থনা করিতে লাগিল । ফকির তখন স্বাভাবিক গাম্ভীর্যের সহিত বলিলেন, “তোমার অপবাধ নাই, দামদিগকে বলিও, তাহাদের আব মঙ্গল নাই। এ দেশ আদিত্যেদেরই হইবে। দামেরা মঙ্গল কামনা করিলে ত্রিরাত্র মধ্যে এদেশ ত্যাগ করুক।” ক্ষেীরিক কঁাপিতে কঁাপিতে তথা হইতে আসিল ও ফকিরের দৈবশক্তি ও মাহাত্ম্যের কথা অতিরঞ্জিত রূপে দামদের কাছে বর্ণন করিল। তারপর ফকিরের ক্ষমতা ও র্তাহার ভয় প্রদর্শক বাক্য বলিল। দামেরা নাপিতের কথা শুনিয়া ভীত হইয়া পড়িলেন এবং বাস্তবিকই সে দেশ ছাড়িয়া চলিয়া গেলেন। ফকিরের উপদেশে আদিত্য বন পরিষ্কৃত করিয়া প্রজা বসাইলেন ও সে দেশের মালিক হইয়া গেলেন । ফকিব আকবর তখন সেই নিৰ্জ্জন স্থানে এক “মোকাম” প্রস্তুত করিয়া ঈশ্বর চিন্তায় রত হইলেন। তাহার মাহাত্ম্য চতুৰ্দ্দিকে প্রচারিত হইল। কথিত আছে, তাহার প্রভাবে বনের বাঘ পোষিত পশুর মত প্রায়শঃ তাহাব মোকামে আসিত। তিনি সাধন বলে অতি দীর্ঘ জীবন লাভ করিয়াছিলেন, হবরামের প্রপৌত্রকে দেখিয়া তিনি মৃত্যুমুখে পতিত হন। তৎকাল পর্যন্ত আদিত বংশীয়গণ তাহার উপদেশ ও আশীৰ্ব্বাদ প্রাপ্ত হইয়াছিলেন। তাহারা তাহার দেহান্তরের পর তদীয় মোকাম ইষ্টক প্রাচীরে বেষ্টিত করিয়া, সমাধিস্থল সুন্দররাপে বাধাইয়া দেন। এই মোকামের প্রতি তদেশীয় হিন্দু মোসলমানগণের তুল্যভাবে ভক্তি দেখা যায ।