পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গৌরবকীৰ্ত্তির উদ্ধার হইবে ইহা কার না সাধ্য? এজন্যই তো এত পরিশ্রম ও অর্থব্যয। কিন্তু চেষ্টা সৰ্ব্বত্র ফলবতী হয় নাই, দুর্ভাগ্যই বটে। যে যে মহাত্মা নিজ নিজ বংশকথা পাঠাইয়াছেন, যাহাবা অন্যের বংশ বিবরণ সংগ্ৰহ করিয়া দিয়াছেন, তাহারা সকলেই আমাদের ধন্যবাদের পাত্র; বাহুল্য ভয়ে এ স্থলে তাহাদের নামাবলী প্রকাশ করিতে অসমর্থ, গ্রন্থের গর্ভে স্থল বিশেষে বিষয় প্রদাতার নাম উল্লেখিত হইয়াছে এবং শ্রীহট্টের ইতিহাস প্রণয়ন কল্পে সংগৃহীত বিবরণাবলীর “সূচীপত্ৰ” নামক যে পুস্তিকা ১৩১৪ বাংলায় প্রকাশিত হয়, তাহাতেও তাহাদের অনেকের নাম আছে। শ্ৰীশ্ৰী স্বগীয় মহালক্ষ্মীর শ্রীচরণাঙ্কিত শ্রীহট্ট ভূমি কত মহাবংশ ও কত মহাপুরুষকে স্বীয় বক্ষে ধারণ করিয়া গৌরবান্বিত হইয়াছেন। সে সকলের কথা এই উত্তরাংশে সন্নিবিষ্ট হইয়া প্রচাবিত না হইলে আকাঙক্ষণ সফল হয় কই ? কিন্তু কোন কোন ব্যাপার স্মরণে চিত্ত কখন কখন নিরাশার নিবিড় অন্ধকারে সমাচ্ছাদিত হইয়া পড়িয়াছিল, কল্পনায় ভয় উদ্দীপ্ত ও উৎসাহ নিৰ্ব্বাপিত হইয়া গিয়াছিল। আমরা যে সকল বংশকথা প্রাপ্ত হইয়াছি, তৎ সমস্ত যে সৰ্ব্বতোভাবে ঠিক কোন অংশে কোনটি যে অযথাবাদ-দুষ্ট হয নাই, তাহা বলিতে পারি না। যাহাবা বিবরণ দিয়াছেন তাহাদের কেহ যে স্থল বিশেষে অতিবাদ অথবা অযথা উক্তি প্রভৃতিব সমাবেশ করেন নাই, তাহা বলা যায় না। প্রমাণ পাইয়াছি, কেহ কেহ (স্ববংশের কথা যেমন পল্লবিত করিযা বলিয়াছেন, তদ্রুপ) অন্য বংশের উপর (হয়তো অনিচ্ছা) মিথ্যা কলঙ্কারোপ কবিয়া ফেলিয়াছেন। আমরা অতি সতর্কতাব সহিত ঐ সকল অংশ পরিবজ্জন করিয়াছি। তবে সৰ্ব্বত্রই এতাদৃশ ভ্রান্তি পরিশোধনে যে কৃতকার্য হইতে পারিয়াছি, তাহা বলিতে পারি না। এইজন্য এই উত্তরাংশ প্রকাশে সময সময় মনে ভয়েব উদ্রেক হইয়াছে, এবং এখনও উহা পাঠকের হাতে দিতে কৃষ্ঠানুভব কবিতেছি। যেরূপ অবস্থায় ইহা লিখিত হইয়াছে, তাহাতে এতদপেক্ষা সতর্ক হওয়ার উপায় ছিল না; যদি কোন বংশ বা জাতির উপর কোনরূপ অন্যায্য উক্তি প্রযোজিত হইযা থাকে, তাহা সেই বিষয়ে অজ্ঞতা বশতঃ হইবে। এতদবস্থায় আমাদের উদ্দেশ্য বিবেচনায মহানুভববর্গ ক্রটি মাৰ্জ্জনা করিয়া তাহা জ্ঞাপিত করিলে কৃতাৰ্থ হইব। এবং যদি শুভদৃষ্টিবশতঃ গ্রন্থের পুনঃ সংস্করণ হয় তবে যাহাতে প্রকৃত তথ্য প্রকটিত হইতে পারে, সাধ্যানুসারে তদৰ্থে চেষ্টা করিব। যাহারা স্বয়ং নিজ বংশকথা পাঠাইয়াছেন; তাহাদের মধ্যেও এমনও হইয়াছে যে প্রথমবারে ভুল থাকায়, কেহ কেহ দুই তিন বারেও শোধন করিয়া দিয়াছেন, তদবস্থায় অপরে অপর বংশের সম্বন্ধে যাহা পাঠাইয়াছেন, তাহাতে ক্রটি প্রমাদ থাকাই সম্ভব। অবস্থা বিবেচনায় বৰ্ত্তমান অদ্ধে যে ভুলভ্রান্তি থাকিবে না, এটা অপ্রত্যাশিতই বলিতে হইবে। বংশ কাহিনী আমরা প্রায়শঃ তদ্বংশীয় ব্যক্তি বিশেষ হইতেই পাইয়াছি। কোন বংশের কথা তদ্বংশীয়েরই সম্যক জানা সম্ভব—তবে এস্থলে স্ববংশের গৌরব খ্যাপনে কিঞ্চিৎ কৃত্রিমতা থাকাও সম্ভাব্য বটে। আমরা আশা করিযাছিলাম, একই বংশ বা স্থান সম্বন্ধে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ হইতে বিবরণ পাইব; এবং তাহাতে নিজেই সত্য নিষ্কর্য করিতে সমর্থ হইব। দুঃখের বিষয় দু-এক স্থল ব্যতীত এই সৌভাগা আমাদের হয় নাই; অতএব যাহা পাইয়াছি গ্রহণ করিতে হইয়াছে। সত্যতার জন্য সাধাবণ্যে বিবরণ প্রদাতাই যে দায়ী, তাহা বলা বাহুল্য।