পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/১৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃতীয় ভাগ-দ্বিতীয় খণ্ড L] শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ১৫০ পরবর্তী কথা হরবামেব পরবর্তীগণ মধ্যে লক্ষ্মী ও রঘুবর বিশেষ বিখ্যাত। ইহারা এদেশে ব্রাহ্মণ স্থাপন কবিযাছিলেন বলিয়া তাহাদের নাম অদাপি লোকের স্মৃতিপথারূঢ় রহিয়াছে। তাহার পর কাশীশ্বর আদিত্যের কথা শুনা যায়। কথিত আছে যে তিনি বড়ই মাংসপ্রিয় ছিলেন, তাদৃশ মাংসপ্রিযতা কদাচ দৃষ্ট হয়; তাহাব আহার্য মাংস নিত্য যোগাইতে বহুলোক নিযুক্ত ছিল। কাশীশ্বরেব পুত্রের নাম রামেশ্বর আদিত্য। ইনি তত্ৰত চৌধুরাই সনন্দ প্রাপ্ত হন। চৌধুরাই জায়গীর ব্যতীত তিনি হাতী খেদাব জন্য খালিসা ভূমিও প্রাপ্ত হন। খেদার কর স্বরূপ প্রতিবৎসব তাহাকে নবাব সবকারে একটি হাতী দিতে হইত। বামেশ্বর চৌধুরী ছোটলিখাতে বিভিন্ন জাতীয় লোকের জন্য ভিন্ন ভিন্ন গ্রাম স্থাপন কবেন । কিন্তু যে সেন বংশীয়গণ সহ একত্রে এতদিন ছিলেন, কোন কারণে তাহাদের সহিত বামেশ্বরের মনোমালিন্য উপস্থিত হওয়ায়, তাহারা তথা হইতে পঞ্চখণ্ডের সুপাতলা গমন কবেন। ছোটলিখাতে সেনদের যে বাড়ী ছিল, তাহা এক্ষণে জঙ্গলেব অন্তরালে লুক্কাযিত। আদিত্যদের পুরাতন বাড়িবও—অবস্থা তদ্রুপ। সেনেরা ছোটলিখা ত্যাগ কবিলে, দেশে ভট্টলোক স্থাপনের বাসনা রামেশ্বরের মনে প্রবল হইয়া উঠে। তাহাপ এক বিবাহ যোগ্য কন্যা ছিল, চৈতন্যদাস নামক একজন কায়স্থ বৈষ্ণবের ভেখ ত্যাগ কবাইয়া তৎকরে তিনি সেই দুহিতাব বিবাহ দেন। সৰ্ব্বেশ্নর নামে তাহাব এক জ্ঞাতি ভ্রাতা ছিলেন, তাহারও একটি বয়স্থা কন্যা ছিল, সাতগায়ের দত্ত বংশীয় নারায়ণ দত্ত নামক এক ব্যক্তিকে আনযন কবিযা তাহার সহিত উক্ত কন্যার বিবাহ দেন। এই বংশীয়গণ এক্ষণে “দত্ত পুরকাযস্থ” বলিযা খাত। বামেশ্বরের পুরুষবাম, গোবিন্দবাম ও জয়দেব নামে তিন পুত্র হয। জ্যেষ্ঠ পুরুষবাম পবিত্ৰচেতা ও দৃঢ় প্রতিজ্ঞ লোক ছিলেন। এক বৎসর খেদা করিতে জঙ্গলে গিযা খাদ্যের সহিত একটা জলৌকা চৰ্ব্বণ করিয়া ছিলেন, পরে বাড়ীতে আসিয়া তজ্জন্য প্রায়শ্চিত করেন ও মনে সঙ্কল্প করেন যে আর খেদা করিতে বনে যাইবেন না এবং নবাব সরকারে হাতী দিবেন না। কাজেই আর সে বৎসর হাতী দেওয়া হইল না। খেদা মহালের জন্য নিরূপিত হাতী প্রদান না কবার অপরাধে তিনি তখন ঢাকায় নীত হইলেন। ঢাকার নবাব সমক্ষেও, হাতী দিতে পারিবেন না, এই উত্তর দেওয়ায় নবাব ক্রুদ্ধ হইলেন এবং দৃঢ় প্রতিজ্ঞ পুরুষরাম অটল রহিলেন। সকলেই তাহাকে উপদেশ দিল—“এখনও অবসর আছে, এখনও ক্ষমা প্রার্থনা কবিয়া হাতী দিতে স্বীকৃত হউন;বৃথা প্রাণ বিসৰ্জ্জন করিবেন না।” পুরুষরামের সঙ্কল্প সূদৃঢ় বহিল, কিছুতেই তিনি বনে গিয়া খেদা করিয়া হাতী দিতে সম্মত হইলেন না। দণ্ডাদেশ প্রতিপালিত হইল; পুরুষরামের দেহ হস্তীপদতলে নিম্পিষ্ট হইল। হায় স্পদ্ধা, সৰ্ব্বত্র তোমার যোগ্য মূল্য নাই। পুরুষরামের স্পৰ্দ্ধা তাহার মৃত্যুর কারণ হইল,আর নবাব নিজ স্পদ্ধারক্ষার্থ রামেশ্বর আদিত্য তৎকালে জীবিত ছিলেন, পুত্রের ঈদৃশ মৃত্যু বাৰ্ত্তা প্রাপ্তে অত্যন্ত শোকাকুলিত হইয়া পড়িয়াছিলেন।