পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/১৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৭৫ পঞ্চম অধ্যায় : মোসলমান বংশ বর্ণন - শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত নামে খারিজ হয়। শেখ বাহাদুরের কেন বিবরণ প্রাপ্ত হইতে পারি নাই। তাহার বংশে মোহাম্মদ সাদন নামে এক ব্যক্তি ১১৫০ সালে, ফতে মোহাম্মদ চৌধুরীর সমকালে জীবিত ছিলেন। এই বংশে বৰ্ত্তমানে বাহাদুরপুরের শ্রীযুত সরাফত আলী চৌধুরী জীবিত আছেন। মোহাম্মদ সাদনের উত্তরাধিকারী সূত্রে শ্রীহট্টের মজুমদার আলাদাদ খা বাহাদুরপুরের সম্পত্তির অনেকাংশ প্রাপ্ত হন; দশসনা বন্দোবস্ত কালে উহা তাহার নামে বন্দোবস্ত হইয়াছিল। রজাকপুরের জায়গীরদার বংশ মোগল বাদশাহদের সময়ে শ্রীহট্ট হইতে দিল্লীতে খোজা প্রেরিত হইত; আইন-ই-আকবরি গ্রন্থেও ইহা লিখিত আছে। পূৰ্ব্বে শ্রীহট্টের ঢাকা উত্তর পরগণায় লুৎফউল্লা খা নামে এক সন্ত্রান্ত ব্যক্তি ছিলেন, সম্রাট আরঙ্গজেবের সময়ে তাহার বংশে এনায়েত খা নামে এক নপুংসকের জন্ম হয়। শ্রীহট্টের নবাব এই সংবাদ পাইয়া এনায়েত খাকে দিল্লীতে প্রেরণ করেন। দিল্লীতে তিনি সম্রাট মহলের তত্ত্বাবধায়ক নিযুক্ত হন। এনায়েতের শাহবাজ খাঁ ও জামিল খাঁ নামে দুই ভ্রাতা ছিলেন,তাহাদের পুত্রের নাম যথাক্রমে নওয়া খাঁ ও মোহাম্মদ ইউনস। কিছুদিন পরে এই উভয় ভ্রাতা পিতৃব্য-দর্শনে দিল্লী উপস্থিত হইলে, এনায়েত খাঁ নওযা খাকে রাজসরকার হইতে বহু অর্থ দেওয়াইলেন ও বাড়ীতে গিয়া একটি মসজিদ এবং একটি পুষ্কবিণী দেওযাইতে অনুবোধ করিলেন। তাহার অনুরোধ রক্ষিত হইয়াছিল, নওয়া খাঁ বাড়ীতে গিয়া মসজিদ ও পুষ্করিণী প্রস্তুত করিয়াছিলেন। শ্রীহট্ট কাছাড় ট্রাঙ্ক রোডের (১৫ মাইলের) নিকট উক্ত প্রাচীন মসজিদ এখনও পথিকের দৃষ্টি আকর্ষণ করিয়া থাকে। ইউনস দিল্লীতে থাকিয়া কোরাণ অধ্যয়ন করেন ও তাহাতে বিশেষ অভিজ্ঞতা লাভ করেন। খুন্নতাতের যত্নে ইহা সম্রাটের কর্ণগোচর হইলে, তিনি অত্যন্ত সন্তুষ্ট হইয়া তাহাকে “হাফেজ” উপাধির সহিত ঢাকাউত্তর পরগণায় কতক জায়গীর ভূমি দান করেন। তদবধি তদ্বংশীয়গণ “জায়গীরদার বংশ’ বলিয়া খ্যাতি লাভ করিয়াছেন। ইউনস মক্কায় গিয়া হাজির উপাধি প্রাপ্ত হন। ইহার পুত্রের নাম মোহাম্মদ শরিফ। তৎপুত্র মোহম্মদ রজাক ও মোহাম্মদ ওমি। রজাকের নামে ঢাকাউত্তবের বজাকপুর মৌজার নামকরণ হয়। ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানীর দেওয়ানী গ্রহণের সময় ওমি জরাজীর্ণ বৃদ্ধ ছিলেন, তিনি তৎকালীন নিয়মানুসারে জায়গীরের সনন্দ রিজেক্টরী করিয়া লইতে পারেন নাই; এই জন্য র্তাহাদের জায়গীর ভূমিতে কিয়দ্বংশে করধাৰ্য হইয়া তাহা সাতটি পৃথক মহালে পরিণত হয়। মোহাম্মদ রজার পুত্রের নাম মোহম্মদ বাসির, তাহার মোহাম্মদ আসগর প্রভৃতি তিন পুত্র হয়। ইহাদের সময়ে লাখেরাজ ভূমির জরিপ হইয়া যখন বন্দোবস্ত আরম্ভ হয়; তখন তাহারা আপনাদের জায়গীর ভূমের অবশিষ্ট অংশ “ইউনস জিম্বে মোহাম্মদ ওমি” নামে এক ছেগা তালুকে বন্দোবস্ত পূৰ্ব্ববৰ্ত্তী ২য অধ্যায়ে ভট্টশ্রীব বংশ বিবরণ প্রসঙ্গে যে রাজপণ্ডিতি দলিল উদ্ধৃত হইয়াছে, তাহাতে ইহাব নামের স্বাক্ষর থাকা দৃষ্ট হয়।