পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/২০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৮১ প্রথম অধ্যায় ; ছয়চিরি ও বরমচালের বাৎস্য u ভ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত “পৈত্রিক দেবতা শ্রীশ্রী বিষ্ণুচক্রের নামানুসারে সেই গ্রামের বিষ্ণুপুর আখ্যা প্রদান করিলেন।” তিনি বিষ্ণুপুরের চতুৰ্দ্দিকে “ষোলহাত প্রস্থ বিশিষ্ট চারিটি গড় প্রস্তুত করেন।” ইহা ধৰ্ম্মনারায়ণের গড় বলিয়া খ্যাত । বাজনগরের সাগর দীর্ঘীর অনুকরণে এই স্থানেও তিনি এক “সাগর দীঘী খনন করাইয়া তাহার পশ্চিম দিকে (উক্ত নুতন)বাটীর স্থান কল্পনা করেন।” তাহার প্রতিষ্ঠিত দীর্ঘিকাটির জল এ পর্যন্ত সুপেয় রহিয়াছে, ফাল্গুন চৈত্র মাসেও ৮/৯ হাত জল থাকে। দধি বামন ও মূৰ্ত্তি প্রাপ্তির গল্প কথিত আছে যে, এই দীঘিকা খনন করিতে করিতে ভূগর্ভে দিব্য জ্যোতি-বিশিষ্ট যোগপবিষ্ট এক ধ্যানবিষ্ট মহাপুরুষ দৃষ্ট হইয়াছিলেন। মহাপুরুষের সম্মুখে এক দেববিগ্রহ ও এক শালগ্রাম চক্র পবিদৃষ্ট হয়। ধৰ্ম্মনারায়ণের নিকট এই কথা জ্ঞাপিত হইলে “রহস্যোন্তেদ জন্য তিনি তথায় যাইয়া দেখিলেন, মৃত্তিকাগর্ভে দেব বিগ্রহ দেখা যাইতেছেন এবং তাঁহাদের সাক্ষাতে জনৈক মহাপুরুষ উপবিষ্ট ।” ধৰ্ম্মনারায়ণ “অতি ধাৰ্ম্মিক ছিলেন, তিনি স্তুতি মিনতি করিলে সে সন্ন্যাসী তাহার সহিত ২/১টি কথা” বলেন । এই দুই দেবতার নাম স্বগীয় দধিবামন ও স্বগীয় বাসুদেব। কোদালের আঘাতে বাসুদেবের নাসিকার কিয়দংশ ভাঙ্গিযা গিয়াছিল। কিন্তু সন্ন্যাসী উভয় দেববিগ্রকেই পূজার জন্য ধৰ্ম্মনারায়ণের কবে সমৰ্পণ করিযা প্রস্থান করেন। দধিবামন এক শিলাচক্র। এই দুই বিগ্রহ তদবধি এই বংশীয় কত্ত্বক পূজিত হইতেছেন। ভূগর্ভে ধানবিষ্ট যোগী পুরুষের অবস্থিতি বিষয়ক আখ্যানের সত্যতা সম্বন্ধে বিচারের প্রয়োজন নাই। কিন্তু দীঘ খনন কালে যে দুই বিগ্রহ প্রাপ্ত হওয়া গিয়াছিল, তাহাতে সেই স্থানের বহু প্রাচীনত্বই প্রমাণিত হয়। খৃষ্টীয় ষোড়শ শতাব্দীতে “জঙ্গলাকীর্ণ সেই স্থানে” বিষ্ণুপুব গ্রাম স্থাপিত হয, তাহাব বহুপূৰ্ব্বে সেই স্থানে লোক বসিত ছিল, পরে সেই প্রাচীন জনবসতি পরিত্যক্ত হওয়ায় জঙ্গল পবিপূবিত হইয়া পড়িযাছিল, অনুমান করা যাইতে পারে। মন্দির ও গ্রাম স্থাপন ধৰ্ম্মনারাযণ “দধি বামন ও বাসুদেবের জন্য এক খানা সুন্দর দ্বিতল মন্দির প্রস্তুত করাইয়া তদুপবি তাহাদিগকে প্রতিষ্ঠিত করাইলেন। তৎপব তিনি বিষ্ণুপুবেব পূৰ্ব্বে শ্রীনাথপুর, পশ্চিমে বাম চন্দ্রপুর, উত্তরে লক্ষ্মীপুব, দক্ষিণে নিজ নামানসাবে ধৰ্ম্মপুর গ্রাম স্থাপন করেন। চতুষ্পাশ্ববৰ্ত্তী গ্রাম সমূহে যে সকল জলাশয় তিনি প্রতিষ্ঠা করিযাছিলেন, তাহার চিহ্ন আজ পর্যন্ত বিলুপ্ত হয় নাই।' তিনি “ধলাই নদীব তীবে চৈত্র মাসের বারুণী ও অষ্টমীব একটি মেলা স্থাপন করিযা সেই স্থানের চৈত্রঘাট নামকৰণ করেন। স্থানীয় বহুলোক বারণী উপলক্ষে এখানে আসিযা থাকে।” “চৈত্রঘাটের সন্নিকটে অতি পবিত্র একটি স্থানে ধৰ্ম্মনারায়ণ বৈদিক কুলাচারানুসারে বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণ দ্বারা নিহোম ও যজ্ঞ সম্পাদন কবইতেন, কালক্রমে এই স্থানই যজ্ঞশালা নামে অভিহিত হয। বৰ্ত্তমানে যজ্ঞশালা একটি গ্রাম।”