পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উ প ক্র ম ণি কা চাতুৰ্ব্বণ্য আৰ্য আধুষিত ভারতবর্ষে কোন স্থানবিশেষের বংশবৃত্তান্ত বর্ণন করিতে গেলেই সৰ্ব্বাগ্রে তত্ৰত্য জাতিতত্ত্ব আলোচ্য হইয়া পড়ে। আর্য শব্দটাই যেন জাতিগন্ধী,–“মহাকুলকুলীনাৰ্য্য” ইত্যমরঃ। কাৰ্য্যতঃ যে কোন স্থানের কথা বলিতে গেলেই আগে চাতুৰ্ব্বণ্যের কথা বলিতে হয়। নবামতে চারিবর্ণ পূৰ্ব্বে ছিল না, পরে ক্রমে চারিবর্ণের উৎপত্তি হইয়াছে। ঋগ্বেদের পুরুষসূক্তে চাতুৰ্ব্বণ্য সৃষ্টির বিবরণ পাওয়া যায়, যথাঃ “ইহার মুখ ব্রাহ্মণ হইল, দুইবাহু রাজন্য হইল, যাহা উরু ছিল, তাহা বৈশ্য হইল, দুই চরণ হইতে শূদ্র হইল।” ঋগ্বেদসংহিতা ১০/৯০/১২ স্বগীয় রমেশচন্দ্র দত্তের অনুবাদ। ঐ মতে এ সূক্তটি পরবর্তীকালের রচিত ও ঋগ্বেদে সংযোজিত। ঋগ্বেদের ব্যবহৃত ভাষা এবং কোন শব্দে কি রূপ অর্থ বোধ হয়, আমাদের তদ্বিষয়ক জ্ঞান নাই, সুতরাং এই বিষয়ে আলোচনা পূৰ্ব্বক তথ্যনিৰ্দ্ধারণেরও সামর্থ্য নাই। আমরা স্বগীয় রমেশচন্দ্র দত্ত মহোদয় কৃত অনুবাদপাঠে স্থূলতঃ বুঝিতে পারি যে, ঋগ্বেদের দশম মণ্ডল (—যে মণ্ডলে পুরুষসূক্ত ভুক্ত আছে) ছাড়া অন্যান্য মণ্ডলেও বিভিন্ন জাতির উল্লেখ আছে, তাহাতেও ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় বিশ বা বৈশ্য এবং সুতার কামার ইত্যাদি শূদ্ৰকৰ্ম্ম জাতির নাম আছে। যথা ঃ ক, (১) “হে শতক্ৰতু। গায়কেরা তোমার উদ্দেশে গান করে। অচ্চকেরা অচ্চনীয় ইন্দ্রকে অৰ্চনা করে, নৰ্ত্তকেরা যেরূপ বংশখণ্ডকে উন্নত করে, “ব্রাহ্মণেরা” তোমাকে সেইরূপ উন্নত করে।” ১/১০/১ ঐ । মূলে “ব্রাহ্মণ” শব্দ আছে, ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যাতা ভিন্ন ভিন্ন অর্থ বুঝিয়াছেন। স্বগীয় দত্ত মহাশয় স্বীয় অনুবাদে “স্তুতিকার” প্রতিশব্দ দিয়াছেন। ব্রাহ্মণ ব্যতীত এই খণ্ডে গাযক ও নৰ্ত্তকাদিরও উল্লেখ আছে। (২) “বাক চারিপ্রকার। মেধাবী ব্রাহ্মণেবা তাহা জানেন।” ১/১৬৪/৪৫-ঐ। এস্থলে স্বগীয় দত্ত মহাশয় মূলের “ব্রাহ্মণেরা” অনুবাদে “ঋত্বিকেরা” প্রতিশব্দ করিয়াছেন। খ, (১) “তোমবা রাজা, মহাযজ্ঞের রক্ষক, সিন্ধুপতি ও ক্ষত্রিয়”। ৭/৬৪/২-ঐ। (২) “হে সুক্ষল দয়াকর দয়াকর।” ৭/৮৯/১১-ঐ। এস্থলে মূলের ‘ক্ষত্ৰিয়” ও সুক্ষত্র” শব্দে স্বগীয় দত্ত মহাশয় টীকাস্থলে “বলবান” ও “অতিশয় বলবান” অর্থ হওয়া সঙ্গত বলিয়াছেন। গ “যেমন ধনলাভেচ্ছ ব্যক্তিরা গমন জন্য সমুদ্রকে স্তুতি করে” ইত্যাদি। ৪/৫৫/৬-ঐ। ইহারা বাণিজ্যজীবী বৈশ্য নহে কি ? ঘ (১) “শিল্পিগণ যেরূপ বথ নিৰ্ম্মাণ কবে ইত্যাদি।” S/২/১৪-ঐ। ২. “কৰ্ম্মকার যেরূপ (ভস্ত্রাদি দ্বারা) অগ্নিকে যেরূপ সংবদ্ধিত করে” ইত্যাদি। ৫/৯/৫-ঐ। ৩. “স্বর্ণকার যেরূপ (ধাতু) দ্রবীভূত করে” ইত্যাদি। ৬/৩/৪-ঐ এতদ্বারা ছুতার, কামার সোণার ইত্যাদি শূদ্ৰকৰ্ম্মার নাম পাওয়া যাইতেছে। পরবত্তী ঋকে ইহা সুস্পষ্ট হইয়াছে। যথা ঃ “সকল ব্যক্তির কার্য এক প্রকার নহে, ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তির কার্য ভিন্ন ভিন্ন প্রকার, আমাদিগেরও কাৰ্য নানাবিধ। দেখ তক্ষ (ছুতার) কাষ্ঠ তক্ষণ করে, বৈদ্য রোগের প্রার্থনা করে, ব্রাহ্মণ, যজ্ঞ কৰ্ত্তা ব্যক্তিকে চাহে।” ৯/১১২/২-ঐ। ইহাতে কি বুঝা যায় না যে তখন ভিন্ন ভিন্ন জাতীয় ব্যক্তির ভিন্ন ভিন্ন রূপ কার্যা ছিল ? যদি তাহা হয়, তবে ইহা জাতি বিভাগানুরূপ কাৰ্য্য বিভাগ নহে কি ?