পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/২১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃতীয় ভাগ-তৃতীয় খণ্ড 0 শ্ৰীহট্টের ইতিবৃত্ত ১৯২ ছিলেন, এবং স্থানীয় জমিদারের নিকট হইতে অনেক ভূমি ব্ৰহ্মত্র প্রাপ্ত হন; তাহারা সকলে তাহাকে শ্রদ্ধা করিতেন এবং স্বতঃপ্রবৃত্ত হইয়া ব্ৰহ্মত্র দান করিয়াছিলেন। ইহার দুই পুত্র, ইহাদের নাম কৃষ্ণনাথ তর্কালঙ্কার ও গোলকনাথ ভট্টাচাৰ্য্য। তর্কালঙ্কার ন্যায় শাস্ত্রের পণ্ডিত ছিলেন। তিনি কাশীবাসী বেদান্ত সরস্বতী খ্যাতি বিশিষ্ট প্রতিপত্তিশালী এক পণ্ডিতকে শাস্ত্র বিচারে পরাস্ত করায় সেই পণ্ডিত ক্রুদ্ধ হইয়া তাহাকে অভিশাপ প্রদান করেন। তাহার কিছু কাল পরেই তিনি মৃত্যুমুখে পতিত হন। ১২৮৯ বাংলার ১লা চৈত্র তাবিখে ইহাদের গৃহদাহ হয়। পূৰ্ব্বোক্ত “মহাশঙ্খ মালা” ইদানীং কিংখাপ বস্তু-বেষ্টনী মধ্যে সিন্দুকে রক্ষিত হইত; সকলই ভাবিল যে সিদ্ধমালা এতদিনে নষ্ট হইল; কিন্তু পরে দেখা গেল যে মালা নষ্ট হয নাই—সে মহামালা জ্বলে নাই। তন্ত্রশাস্ত্রে সুপণ্ডিত গোলক নাথের সুযোগ্য পুত্র “মহাশক্তি বা পরমেশ্বর” গ্রন্থপ্রণেতা শ্রীযুক্ত মহেন্দ্রনাথ কাব্য সাস্থ্যতীর্থ মহাশয়েব অধিকাবে উক্ত মালা এক্ষণে আছে। সতী লক্ষ্মী কমলাকান্তের বংশে অনেক খ্যাতনামা ব্যক্তি জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন। তাহার জ্যেষ্ঠপুত্র-তনয় রতিরামেব জ্যেষ্ঠ পুত্র গৌরবল্লভ কামরূপ গমন করিয়াছিলেন ও বহুদিন তথায় ধৰ্ম্মসাধন করেন। তিনি দেশে আসিলে বহুব্যক্তি তাহাব শিষ্যত্ব স্বীকার করিয়া ধন্য হইয়াছিল। ইহার পুত্রের নাম হবগোবিন্দ ভট্টাচাৰ্য্য। হরগোবিন্দের পুত্র রামগোবিন্দ বিদ্যাবাগীশের পত্নী লক্ষ্মীদেবী পতির মৃত্যুর পর পতিদেহ-কোলে সহমরণ শয্যায় শায়িত হন, সেদিন দোল পূর্ণিমা তিথি ছিল। ইহাদের পুত্রের নাম গঙ্গাগোবিন্দ ন্যাপঞ্চানন, তিনি পরম পণ্ডিত ও অধ্যয়ন-নিরত ব্যক্তি ছিলেন, সদা পুস্তক লইয়া বিব্রত থাকিতেন। কমলাকান্তের মধ্যম পুত্র মহাদেব সৰ্ব্বভৌমের নাম করিয়াছি, তাহার পুত্র রামজীবন বিদ্যালঙ্কার কৃত বিদ্ধ ব্যক্তি ছিলেন, নবাব মোহাম্মদ জানবাহাদুর ৫ জলুসে (১৭২৪ খৃষ্টাব্দ) ইহাকে এক সনন্দে (নং ৬৭) আলীনগর হইতে ভূ-পরিমাণের খানেবাড়ী দান করেন। তাহার পুত্র রামকান্ত ভট্টাচাৰ্য্য উহা “তছরূপ” করেন, তৎপর ইহা রতিকান্তের জ্যেষ্ঠপুত্র রামচন্দ্র শিরোমণি প্রাপ্ত হন। পিতা পুত্র উভয়েই ধৰ্ম্মনিষ্ঠ ব্যক্তি ছিলেন। তাহাদের উভয়ের পত্নীও স্বামীর অনুরূপ ছিলেন। সতী শাশুড়ী বধু এ বংশে অনেকুেই পবিত্র নারীধর্ম রক্ষা করিয়া যশস্বিনী হইয়া গিয়াছেন। রামকান্তের মৃত্যুর পর যখন চিতাভগ্নিতে তদীয় নশ্বর দেহ ভস্মীভূত হয়, তদীয় পত্নী মনোরমা তখন “সহমরণ” গমনে পাতিব্রাত্যের প্রকৃষ্ট প্রমাণ প্রদর্শনে প্রতিবেশিবর্গের চিত্ত পবিত্র করেন। একটি জীবিত অবলা বালা অবহেসে জ্বলন্ত অনলে আত্মপ্রাণ আহুতি দিতে দেখিলে লোকে বিস্মিত হইত, গ্রামে বহুদিন সে আন্দোলন চলিত, আর তাহার আলোচনায় লোকের চিত্ত পবিত্র হইত। সতীর পতিভক্তির ঈদৃশ জীবন্ত উদাহরণে সমাজের যাদৃশ নৈতিক উপকার হইত, বহু গ্রন্থপাঠে তাহা ঘটিবার সম্ভাবনা নাই। মনোরমা দেবীর জ্যেষ্ঠা বধু—রামচন্দ্র শিরোমণির পত্নী গঙ্গাদেবী ১৪ শাশুড়ীর ন্যায় যথাকলে সহমরণ গমনে সতরী পবিত্রব্রত উদযাপন করিয়া বরণীয়া হইয়াছেন।