পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/২২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২০৭ চতুর্থ অধ্যায় ; লংলা, সতগাও বালিশিরা প্রভৃতি স্থানের ব্রাহ্মণ বিবরণ 0 শ্ৰীহট্টের ইতিবৃত্ত পালগা নামোৎপত্তি বিষ্ণুবল্লভ ঈশ্বর চিন্তাতেই রত থাকিতেন, তিনি একমতার পুত্র কৃষ্ণানন্দকে অপ্রাপ্ত বয়স্ক রাখিয়াই জীবলীলা সংবরণ করেন। ঐ সময় এস্থানে সৈন্য সংরক্ষণার্থ শ্রীহট্টের নবাবের নির্দেশত মতে এক ক্ষুদ্র ঘাটি (গারদ) প্রস্তুত হইয়াছিল; সৈন্যগণের অধ্যক্ষ সাধারণতঃ “সেনাপাল” নামে কথিত হইতেন। কৃষ্ণানন্দ অপ্রাপ্তবয়স্ক থাকালে উক্ত গারদের তৎকালীন অধ্যক্ষ কৃষ্ণপুর মৌজার অনেকাংশ হস্তগত করিয়া লন। তাহার যথেষ্ট ক্ষমতা ছিল, এবং ঐ সময় হইতে কৃষ্ণপুর সেনাপালের খ্যাতি অনুসারে “পালাগাও” নামে আখ্যাত হয়। সেনাপালের প্রভাবের চিহ্নস্বরূপ তন্নাময়ী দীঘী ও তাহার বাড়ী আজও লোকে দেখাইয়া থাকে। সনন্দ প্রাপক শুকদেব প্রভৃতি কৃষ্ণনন্দের পুত্র হরিনাথ চক্ৰবৰ্ত্তী, ইহার পুত্রের নাম শ্রীনাথ বিদ্যালঙ্কার। বিদ্যালঙ্কারের চারি পুত্র হয়, ইহারা সকলেই বিখ্যাত ব্যক্তি, সকলেই নবাবি সনন্দ প্রাপ্তির অধিকারী হইয়াছিলেন বিদ্যালঙ্কারের জ্যেষ্ঠ পুত্র গুরুদেব চক্ৰবৰ্ত্তী “পণ্ডিত” উপাধিতে ভূষিত হইয়াছিলেন; শুকদেবের নামীয় পাঁচখানা সনন্দের অনুবাদ আমরা প্রাপ্ত হইয়াছি।" শুকদেবের ভ্রাতা হরিদেব চক্ৰবৰ্ত্তী নামীয় সনন্দে দৃষ্ট হয় যে তিনি “উচ্চ বংশের ব্রাহ্মণ, তাহার জীবীকার উপায় নাই” বলিয়া পূবেবাক্ত নবাব তানিব ইয়ার খাঁ “তপ্লে ইজ্জদাবাদ(?) ও উত্তরভাগের তহবিল হইতে রোজিয়ানা চারিপণ কৌড়ি” তাহার জন্য “মঙ্করর” (মঞ্জুর) করেন। ৭ ১ম ও ২য সনন্দ। নবাব আবুতানিব প্রদত্ত,—ইহাতে নবাব লংলা ও দক্ষিণ ভাগেববৰ্ত্তমান ও ভবিষ্য কালের চৌধুবী, কানুনগো ও পাটওযাবী প্রভৃতিকে এই হুকুম দিযাছেন যে, “শুকদেব চক্ৰবৰ্ত্তী সংস্কৃতে পাকা বিদ্বান বটেন”, রামদেব পুরের জঙ্গল হইতে ১১৩৫ বাংলায় তাহাকে “দুইদ্রোণ জমি মদত মাস মক্কবর করা গেল, উচিত যে তথাকার জমিদাবগণেব ডৌলচরাবন্দি মত মদতছরূপে রূপে ছড়িয়া দেয়।”দ্বিতীয সনন্দ দ্বারা দক্ষিণ ভাগের তালুকাত হইতে র্তাহাকে ১৪ পণ কৌড়ি দেওযা ববাদ হয়। তাবিখ ১১৩৯ বাংলা। ২য় সনন্দ। নবাব বসারত খাঁ প্রদত্ত,—ইহাতে লংলা সম্বন্ধীয় কৰ্ম্মচারিগণকে জ্ঞাত করা হইয়াছে যে শুকদেব “দয়ার পাত্র”। তদীয় জীবিকা নিববাহ হেতু“ভাবানীপুর মৌজার শালিয়ানা হইতে ১১ কাহন কৌডিব্ৰহ্মউত্তর নিয়মে ১১৩৮ বাংলা অবধি মক্করর করা গেল।” ৪র্থ সনন্দ নবাব আবুহুসেন খা প্রদত্ত,—এ সনন্দ নবাব আবুতানিবের প্রদত্ত পূৰ্ব্ব সনন্দের পরিবৰ্ত্তে-সনন্দ মাত্র; তারিখ ১৭ জলুস। ৫ম সনন্দ। মোহব অস্পষ্ট—কোনরূপে এতেসাম পাঠ করা যায়, সুতরাং ইহানবাব এতেসাম খাঁ প্রদত্ত বলা যাইতে পারে। এই নবাব ইংবেজ আমলেই নিযুক্ত হন, শ্রীহট্টের ইতিবৃত্তের দ্বিতীয়ভাগে তাহা বলা গিয়াছে। এ সনদও পূৰ্ব্বোক্ত ১৫ পণ কৌড়ি মঞ্জুরীযুক্ত সনদের শেষ সংস্করণ বা পরিবত্তন-সনদ।ইহাতে লিখিত আছে যে উক্ত কৌড়ি “বৰ্ত্তমানকালে কলিকাতা সদবেব হুকুমানুসারে পরগণা মজকুরের সামীল তালুকাতে বন্দোবস্ত হইয়াছে। উচিত যে বর্ণিত মহালাভেরশাসন হইতে বর্ণিত ব্যক্তিকে, পৌছইতে থাকে।” তারিখ ১১৯৯ বাংলা। প্রথম সনন্দ হইতে ৫ম সনন্দেব তাবিখের ব্যবধান ৪৪ বৎসর; শুকদেব যে দীর্ঘজীবী পুরুষ ছিলেন,ইহাইতাহার প্রমাণ। নিতান্ত ছেলে বয়সে যে তিনি প্রথম সনন্দ পান নাই, তাহা বলা যাইতে পাবে। পূৰ্ব্বে বলা গিয়াছে যে এ বংশীয় ব্যক্তিগণ দীর্ঘজীবী ছিলেন। নবাব আবুল হুসেনের তাবিখ যুক্ত কোন সনন্দ পূৰ্ব্বেকালেক্টরী হইতে না পাওয়াতেইহার সময় স্থির ১৭৩৫ খৃষ্টাব্দ প্রদত্ত হইয়াছিল, তাহা বুঝা যাইতেছে। অতএব ইনি জনৈক নায়েব ফৌজদার ছিলেন, বলা যাইতে পারে।