পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/২৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃতীয় ভাগ-তৃতীয় খণ্ড 0 শ্ৰীহট্টের ইতিবৃত্ত ২১০ পরগণা-বালিশিরা কাশ্যপ গোত্রীয় ব্রাহ্মণগণ সাম্প্রদায়িক কাশ্যপ গোত্ৰীয়ের এক শাখা সাতগাও পরগণাবাসী; আমরা তাঁহাদের কোন বিবরণ জ্ঞাত হইতে পারি নাই। বালিশিরার রাজাপুর কাশ্যপ গোত্রীয় আর এক বংশের বাস আছে। ইটার রাজ্য সুবিদনারায়ণ সমাজ বন্ধন কাৰ্য্যে হস্তক্ষেপ করিলে অনেকের সহিত র্তাহার মতের অনৈক্য হইযাছিল, ঐ সময় যে সকল ব্রাহ্মণের সহিত র্তাহার ঐক্য হয় নাই, তাহাদের অনেকেই স্বস্থানত্যাগী হইয়াছিলেন, কাশ্যপ গোত্রীয় রামরাম ভট্টাচাৰ্য্য তন্মধ্যে একজন। রামরাম বালিশিরা গমন পূৰ্ব্বক ত্রিপুরাধিপতি হইতে এ স্থানে ব্ৰহ্মত্র প্রাপ্ত হয়। তৎকালে বালিশিরা স্বাধীন ত্রিপুরা রাজ্যের অন্তৰ্ভুক্ত ছিল। 顧 অধস্তন বংশ কথা রামরামের প্রপৌত্র চক্রপাণি ভট্টাচার্য্যের সময় হইতে এই বংশীয়গণ পৌরোহিত্য বৃত্তি অবলম্বন করেন। চক্রপাণির পুত্র পণ্ডিত ব্যক্তি ছিলেন, তাহার নাম জগন্নাথ শিরোমণি। ইহার প্রপৌত্র রূপেশ্বর বিদ্যাবাগীশ; তাহার পুত্রের নাম দুর্গাচরণ বিশাবদ। ইহার পুত্র রামশঙ্কর, তৎপুত্র কৃষ্ণচরণ বিদ্যালঙ্কার, গঙ্গাচরণ ভট্টাচাৰ্য্য, শিবচরণ ন্যায়বাগীশ ও নীলকণ্ঠ। তন্মধ্যে কৃষ্ণচরণেব প্রপৌত্র হইতেই আমরা এই বিবরণ সংগ্ৰহ করিয়াছি। গঙ্গাচবণের পৌত্র ঈশ্বব চন্দ্র সাহসিকতার একটা কাহিনী এ স্থলে উল্লেখ করিতেছি। ঈশ্ববচন্দ্রের পিতা চন্দ্রকান্ত সজ্ঞানে স্বগীয় কাশীপ্রাপ্ত হন। মাতা দেড় বৎসবের শিশুপুত্র রাখিযা পরলোক গমন করেন। একদা তথা হইতে তিনি বাড়ী আসিতেছেন; পদ্মাপারে উপস্থিত হইলে, খাবাব ক্রয়ের জন্য বস্ত্রের পুটলী খুলিযা কয়েকটি পয়সা বাহির করিলেন; এমন সময় দেখিতে পাইলেন যে, পরপারে যাওয়ার জন্য খেওয়া-নৌকা প্রস্তুত হইয়াছে; ঈশ্বরচন্দ্র আর খাবার ক্রয়ের অবকাশ পাইলেন না, তাহার আব খাওয়া হইল না। পুটলীটা তাড়াতাড়ি হাতে তুলিয়া লইযা নৌকায উঠিলেন-বাধিতেও পারিলেন না। নৌকা যখন “মাঝ গাঙ্গে” গিয়াছে, ঐ পুটলী বান্ধিতে গিয়া ঈশ্বরচন্দ্ৰ দেখিলেন,—সবর্বনাশ! টাকার গ্রস্থিটা আনেন নাই, ভ্রমতঃ তীরে ফেলিয়া আসিয়াছেন! মাঝিকে নৌকা ফিরাইতে তিনি কত অনুনয় করিলেন, মাঝি কৰ্ণপাতও করিল না। দরিদ্র যুবক তখন সেই ভীমা বেগবতী পদ্মায় ঝাপ দিয়া পড়িলেন। নৌকার লোকেরা তাহার এই দুঃসাহসিকতার পরিণাম দেখিতে সেদিকে চাহিয়া রহিল। নৌকা চলিতেছে, ঈশ্বরচন্দ্রকে কখন দেখা যায়, কখনু বা তরঙ্গের উচ্ছাসে কিছু দৃষ্টি হয় না। অনেকেই ভাবিল—ব্রাহ্মণের ছেলে প্ৰাণে মরিয়াছে। কিন্তু ঈশ্ববচন্দ্র মরেন নাই, জগদীশ্বব তাহাকে রক্ষা করিয়া ছিলেন । মনে হইতেছে—এই ঈশ্বরচন্দ্রই প্রায় সময়ে আর এক ঈশ্বরচন্দ্র এইরূপই তরঙ্গময়ী বেগবতী ভরা নদীতে ঝাপ দিয়া নদী উত্তীর্ণ হইয়া মাতৃচরণ দর্শনে গিয়াছিলেন; তিনি অন্য কেহ নহেনপ্রাতঃস্মরণীয় বিদ্যাসাগর।