চার পাঁচজন ব্রাহ্মণ আনয়ন করিয়াছিলেন। তৎপর যাহাদের আগমন ঘটে, তাহারা ষষ্ঠ গোত্রীয় বলিয়া প্রকীৰ্ত্তিত। ইহার পর দাক্ষিণাত্য, শাকদ্বীপী প্রভৃতি ব্রাহ্মণগণের আগমন ঘটে। এ সকল হইতেই বঙ্গীয় ব্রাহ্মণসমাজের বিস্তুতি। শ্রীহট্টের ব্রাহ্মণ সমাজ আমাদের শ্রীহট্টে এই সকল শ্রেণী বিভাগ না। তাহার কারণ শ্রীহট্টের ব্রাহ্মণ সমাজ ইহাদের বংশসস্তুত নহে। কথিত আছে যে অতি প্রাচীন কালে ত্রিপুরাধিপতি মহারাজ আদি ধৰ্ম্মপার এক যজ্ঞ হয়। সেই যজ্ঞের কথা কিছুমাত্র সত্য হইলে, সেই যজ্ঞে যে ব্রাহ্মণগণ আগমন করেন, শ্রীহট্টের সাম্প্রদায়িক ব্রাহ্মণ সমাজ তাহদের দ্বারাই গঠিত বলিয়া কথিত । প্রশ্ন হইতে পারে যে, তৎপূৰ্ব্বে তবে কি শ্রীহট্টে ব্রাহ্মণ সমাজ ছিল না?— ছিল। আদিশূরের পূৰ্ব্বে কি বঙ্গে ব্রাহ্মণ সমাজ ছিল না?— ছিল। সপ্তশতী প্রভৃতি ব্রাহ্মণ থাকা সত্ত্বেও আদিশূরকে কান্যকুব্জ হইতে ব্রাহ্মণ আনিতে হয়, শ্রীহট্টেও ব্রাহ্মণ থাকা সত্ত্বেও তদ্রুপ আদি ধৰ্ম্মপাকে ব্রাহ্মণ—আনিতে হইয়াছিল বলিয়া বর্ণিত আছে। বাহুল্য যে, শ্রীহট্টের আদি, ব্রাহ্মণ সপ্তশতী হইতে ভিন্ন। সাম্প্রদায়িক পশ্চাদগত ব্রাহ্মণগণ ব্যতীত শ্রীহট্টের উক্ত ব্রাহ্মণ বংশীয়গণ, অতি প্রাচীন। সস্ত্রম অথবা বংশগৌরবে, সদাচার অথবা বিদ্যাবৈভবে, কোন অংশেই র্তাহারা কিছুমাত্র হীন নহেন। তৎপর, বল্লাল-পীড়িত বহুতর ব্রাহ্মণ পূৰ্ব্ব বাসস্থান পরিত্যাগ পূৰ্ব্বক এদেশে আগমন করেন, এই সকলের সংখ্যাও সামান্য নহে। তাহাদের মধ্যে কেহ কেন স্বীয় কাৰ্য্যতৎপরতার সাম্প্রদায়িক শ্রেণীভুক্ত হইয়া পড়িয়াছেন, কেন বা কেহ প্রাচীন ব্রাহ্মণবর্গের সমাজে মিশ্রিত হইয়াছেন এবং কাহার কাহারও বা পূৰ্ব্ব পরিচয় এযাবৎ সুস্পষ্ট রহিয়াছে। এরূপ কোন কোন বংশের পশ্চিমা খ্যাতি থাকায় তাহারা অনতিপূৰ্ব্বে যে পশ্চিমদেশ হইতে আগমন করেন, তাহা বুঝা যায। উদাহরণ স্থলে শ্রীহট্টলামাবাজারের পশ্চিমা ব্রাহ্মণ বংশের উল্লেখ করা যাহতে পারে। তাহারা তথা হইতে কালারায়ের পূৰ্ব্বে প্রসঙ্গতঃ “গড়ের গোবিন্দি” নামক যে ব্রাহ্মণগণের কথা বলা হইয়াছিল," ইহারাও ভিন্ন স্থানাগত, সম্ভবতঃ কোনরূপ উৎপীড়িত ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়; রাজা গৌড়গোবিন্দের সময় এদেশে আসিয়া গৌড়গোবিন্দেরই নামে আখ্যাত হইয়া থাকিবেন। এতদ্ব্যতীত বৰ্ণব্রাহ্মণ সংখ্যাও শ্রীহট্টে অল্প নহে, ইহাদের অনেকেই অর্থলোভে বা কারণাধীনে স্বসমাজচু্যত হইয়া হীনবর্ণের পৌরোহিত্য গ্রহণ করিয়াছেন। ৫ ইহাদের ভিন্ন ভিন্ন গোত্রের উল্লেখ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত পূৰ্ব্বাংশ ২য ভাগ ২য় খণ্ড সপ্তম ও অষ্টম অধ্যাযের টীকা প্রসঙ্গে শেষ টিল্পনীতে লিখিত হইয়াছে। ৬। শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত পূৰ্ব্বাংশ ২য় ভাগ ১ম খণ্ড ৪র্থ অধ্যায় এবং ঐ অধ্যাযেব টীকাধায় দেখ। ৭. শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত পূৰ্ব্বাংশ ২য ভাগ ২য় খণ্ড ১ম অধ্যায়ে ৫ম টীকা দ্রষ্টব্য।
