পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/২৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৪১ সপ্তম অধ্যায় চেয়ালিশ ও ইটার সিদ্ধ বংশ 0 শ্ৰীহট্টের ইতিবৃত্ত তপস্বী গঙ্গারাম ধ্ৰুবেব ন্যায় গভীর অরণ্যে বৃক্ষমূলে ঐ কে বালক বসিয়া? এটি কি সেই চঞ্চল গঙ্গারাম ? গঙ্গারামই বটে; কিন্তু এক্ষণে র্তাহার সেই চাঞ্চল্য নাই; এখন গঙ্গারাম পরম সাধক। গঙ্গারাম অনতিবিলম্বে দেব কৃপায় সিদ্ধ পুরুষ বলিয়া খ্যাত হইলেন, তাহার জীবনে অনেক অলৌকিক কাণ্ড ঘটিতে লাগিল, দেখিয়া সাধারণ লোক স্তম্ভিত হইল। সে অদ্ভুত কাহিনী—তাহার জীবেদয়া, জীবোদ্ধার বাৰ্ত্তা, বৃন্দাবন গমন ব্যপদেশে দিল্লী নগরে তাহার অলৌকিক কীৰ্ত্তি, তাহার সৰ্ব্বজ্ঞতাদি গুণ প্রকাশ ইত্যাদি সংবাদ আমরা ৪র্থ ভাগে জীবন চরিতপ্রসঙ্গ ব্যক্ত করিব। এই গঙ্গারামেরই নামান্তর বঞ্চিত ঘোষ। ইটার রাজবংশীয় বৃদ্ধ দেওয়ান ইস্রাইল খাঁ তখনও জীবিত ছিলেন, তিনি এই বালক-তপস্বীর সংবাদ জ্ঞাত হইয়া, তৎপ্রতি বিশেষ সহানুভূতি প্রকাশ করেন, ও তাহার তপঃক্ষেত্র পরিষ্কৃত করাইয়া তাহাকে দান করেন। সেই স্থানই “মোহন্তালয়” (অপভ্রংশ) মহলাল নামে খ্যাত হয়। এই স্থানই তদ্বংশীয়ের বাস গ্রাম রূপে পরিণত হইয়াছে। মোসলমান জমিদার কর্তৃক এইরূপে তিনি সৎকৃত হইলে, হিন্দুগণ তাহার প্রতি অধিকতর শ্রদ্ধাম্বিত হইলেন; অনেকেই তাহার শিষ্যত্ব স্বীকার করিলেন। তাহার অতুলনীয় ধৰ্ম্মানুরাগে আকৃষ্ট হইযা ব্রাহ্মণ সমাজেও অনেকে এই সিদ্ধ মহাত্মার শিষ্যত্ব স্বীকার করিয়াছিলেন, তন্মধ্যে রাজা বিপ্রহরির নাম সৰ্ব্বগ্নগণ্য। রাজা বিপ্রহরির বাটী ইহাতে ছিল, তিনি ইটার এক ধনী জমিদার ছিলেন সন্দেহ নাই, তৎসম্বন্ধে গ্রন্থপত্রে অধিক বিবরণ নাই।’” বিপ্রহরির মহোৎসবে শ্রীনিবাসাচার্যের পৌত্রের আগমন ও পঞ্চগদী কথা বিপ্রহরির বহু অর্থব্যয়ে এক মহোৎসব আরম্ভ করেন, এতাদৃশ মহোৎসবের কথা এদেশে শুনা যায় নাই; এই মহোৎসবে কেবল শ্রীহট্টের নহে, পূৰ্ব্ব ও পশ্চিম বঙ্গের খ্যাতনামা বহুতর বৈষ্ণব ভক্ত নিমন্ত্রিত হইয়া আগমন করেন। শ্রীনিবাসাচার্য্যের নাম বৈষ্ণব জগতে বিখ্যাত। শ্ৰীমহাপ্রভুর পরে ইনি বৈষ্ণব সমাজের নেতা ছিলেন; ইহার জনৈক পৌত্র এই মহোৎসবের আগমন করিয়াছিলেন। শ্রীহট্টের, বৈষ্ণব সমাজে তৎকালে বঞ্চিত ঘোষ, ঠাকুরাণী, বৈষ্ণব রায় ও পাগল শঙ্কর প্রভৃতি সিদ্ধ মহাত্মাগণ ছিলেন।” বৈষ্ণব সমাজে কোন মহোৎসবে প্রসাদ ভোজন কালে গুণানুসারে অগ্র পশ্চাৎ বসিবার রীতি আছে, শ্রীনিবাস-পৌত্র এই মহোৎসবের কর্ণধার রূপেই গুণানুসারে সকলকে বসাইয়া ছিলেন; ১০. পূৰ্ব্ববৰ্ত্তী ১ম অধ্যায়ে “রাজা”ধৰ্ম্মনারায়ণেব বংশে বাজা বিপ্রহবিব নামে আছে,তিনি সিদ্ধ মহাত্মা। উভযে অভিন্ন কিনা সহজেই বুঝা যায়। উভয়েব অবস্থিতি কালও একই। ১১ “শ্রীহট্ট দেশেতে আর্য্য সিদ্ধা চারিজন। বঞ্চিৎ বাণী, বৈষ্ণব বায়, শঙ্কর এই চারি। ধৰ্ম্ম আচরণে কৈলা দেশে অধিকারী।”——বঞ্চিত চবিত্র গ্রন্থ।