পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/২৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৪৭ অষ্টম অধ্যায় ; বিবিধ স্থানের বিভিন্ন বংশ 0 শ্ৰীহট্টের ইতিবৃত্ত পরদিনই সুখময়ী পতির উপদেশের মৰ্ম্ম বুঝিলেন, এবং শ্যামরায়ের প্রতি চিত্ত সমর্পণ পূৰ্ব্বক জগৎপতিকেই পতিজ্ঞানে ভজনা করিতে লাগিলেন, তাহার দেবতার প্রতি এতাদৃশী আশক্তি দর্শনে লোকে ধন্য ধন্য করিতে লাগিল। লোকের মত মুহুৰ্ত্তে পরিবৰ্ত্তিত হইয়া যায়। সুখময়ী যেমন প্রশংসিত হইয়াছিলেন, ৩/৪ মাস যাইতে না যাইতেই ততোধিক নিন্দিতা হইলেন। ধনঞ্জয়ের বৃন্দাবন যাত্রার ৩/৪ মাস পরেই সুখময়ীর গর্ভ লক্ষণ প্রকাশিত হয়। ইহাতে আত্মীয় স্বজন লজ্জায় ম্ৰিয়মাণ হইয়া নানারূপে তাহাকে ভৎসনা করিতে লাগিলেন। গর্ভের দশম মাসে ধনঞ্জয় দেশে আসিলেন এবং পত্নীর গর্ভের কথা শুনিয়া তিনি লজ্জা ও ক্ষোভে একবারে অভিভূত হইলেন; তিনি আর পত্নীর সহিত দেখা করিতে চাহিলেন না। এই কি তাহার বিমল-চিত্তা বিশ্বস্ত বনিতা ? ইহাই কি নারীজাতির সারল্য ? সদ্য তীর্থগত ধনঞ্জয়ের চিত্ত অনেকটা ভারাক্রান্ত হইয়া পড়িল, তিনি বাড়ীতে না গিয়া অন্যত্র নিশি যাপন করিলেন। সে রাত্রে তাহাব সহজে নিদ্রা আসিল না, অবসন্নদেহে শ্যামরায়কে সম্বোধন করিয়া তিনি অনেক ক্ৰন্দন করিলেন। শেষ রাত্রে একটু নিদ্রাকর্ষণ হইল, তখন স্বপ্নে দেখিতে পাইলেন যে শ্যামরায় তাহাকে বলিতেছেন—“ধনঞ্জয, মনে সংশয় কেন ? তোমার অনুরক্ত পত্নীকে ঘৃণা করিও না, এ গর্ভে অপবিত্র নহে, এ গর্ভে তোমার এক ধাৰ্ম্মিক পুত্র জাত হইবে।” শ্যামরায়ের ভক্ত ধনঞ্জয় আর স্ত্রীর প্রতি সংশয় পোষণ করিতে পারিলেন না, গৃহে গেলেন। সেই গর্ভে যে শিশু জাত হইল (১১৭৫ বঙ্গাব্দ), শ্যামরায়ের নামে ধনঞ্জয় তাহার নাম শ্যামকিশোর বাখিলেন। গ্রন্থকার ও প্রচারক শ্যামকিশোর রায়ের বাল্যাবধিই শ্যামরায়ের প্রতি আসক্তচিত্ত ছিলেন, বয়ঃপ্রাপ্ত হইলে ধৰ্ম্মতত্ত্ব অবগত হইতে তাহার একান্ত ইচ্ছা হইল, তদবস্থায় দুলালীস্থ তিলকরাম শিরোমণির নিকট তিনি “কিশোরী ভজন” তত্ত্ব শিক্ষা করেন এবং এই মত গ্রহণ করিয়া ইহাই যাজনও প্রচার করেন। তাহার সম্বন্ধে রঘুনাথ লীলামৃত নামক মুদ্রিত গ্রন্থে লিখিত আছে ঃ– “পিরীতি মালা চিকণ কালা শোভেছিল গলে। সেই মালা কৃপা করি দিয়াছে সকলে।” কিশোরীভজন বা সহজধৰ্ম্ম প্রচারার্থ তিনি নিম্নলিখিত গ্রন্থগুলি লিপিবদ্ধ করিয়াছেন, “সহজ উজ্জ্বল চিন্তামণি” “হরিভক্তি তরঙ্গিনী” “জয়দেব চবিত্র;” তদ্ব্যতী তৎকৃত “উপদেশ নিধি বিধিমালা” ২ এ বিষয়ে বিবিধ আখ্যান এযাবৎ শুনিতে পাওযা যায, এস্থলে বঘুনাথলীলামৃতেব প্রকাশিত বৃত্তান্তেবই অনুসরণ কবা গিযাছে, তাহাতে একথাও লিখিত আছে, যথা “শ্যামকিশোব গোসাঞির জন্ম বিবরণ। বিগ্ৰহ শ্রীশ্যামবায হইতে জন্ম হইল। যে কপেতে শ্যাম কিশোব প্রকাশ পাইল৷ ” ইত্যাদি।