পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/২৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৫৩ অষ্টম অধ্যায় ; বিবিধ স্থানের বিভিন্ন বংশ 0 শ্ৰীহট্টের ইতিবৃত্ত পুজাবী “সিদ্ধা কাশীনাথ” তাহার একজন অন্তরঙ্গ বন্ধু ছিলেন।” পরগণা-বালিশিরা তরফদার বংশ কথা বালিশিরা ত্রিপুরেশ্ববের অধিকৃত থাকা কালে, তরফদার বংশীয় উমানন্দ সোম স্বীয় পুরোহিত সহ এদেশে আসিয়া ত্রিপুরাধিপতির আশ্রয় প্রাপ্ত হইলে, তিনি ত্রিপুরাধিপতি হইতে বালিশিরার একাংশ প্রাপ্ত হন। “উত্তর শূর” গ্রাম ঐ অংশে স্থাপিত; উমানন্দ এই স্থানেই বাটী প্রস্তুত করেন। উমানন্দের পুত্র রামানন্দ, তাহার পুত্রের নাম শ্রীচন্দ্র। শ্রীচন্দ্র দেবী দশভূজার একান্ত অনুরক্ত ভক্ত ছিলেন, সৰ্ব্বদা দেবীর পাদপদ্ম তাহার চিন্তনীয় ছিল এবং তাহাতেই বিভোর থাকিতেন। ইহার কৃত স্বগীয় দুর্গবিষয়ক সঙ্গীত পাওয়া যায়।” ইহার সময়ে উত্তর শূর মোসলমান রাজ্যভুক্ত হয়। শ্রীচন্দের হরবল্লভ ও শ্যামরায় নামে দুই বংশ প্ৰবৰ্ত্তক পুত্র হয়। শ্যামরায়ের পুত্রের নাম রামবল্লভ ও রামভদ্র। বাল্যকাল হইতেই বৈষ্ণবধৰ্ম্মে তাহাদের অত্যন্ত অনুরাগ ছিল; বিদ্যাবিনোদ বংশীয় বাণী ব্রহ্মচারীর নিকট হইতে ইহারা বিষ্ণুমন্ত্র গ্রহণ করেন। ইহারা স্থীয় গুরুদেবকে যে ভূমি দান করিয়াছিলেন, পরবর্তীকালে গুরুবংশীয় রঘুনন্দন ব্রহ্মচারীর নামে তাহা বন্দোবস্ত হয়। রামভদ্রের প্রপৌত্র কমলাকান্তও একজন ধৰ্ম্মনিষ্ঠ ব্যক্তি ছিলেন, ইনি স্বীয গুরু জয়গোবিন্দ ব্ৰহ্মচারীকে এক জগন্নাথ বিগ্রহ সহ অনেক ভূমি দান করেন; উহা “জয় গোবিন্দের পাট্টা” নামে অদ্যাপি পরিচিত আছে। কমলাকান্তের প্রপৌত্র জীবিত আছেন। রামভদ্রের ভ্রাতা রামবল্লভের এক মাত্র পুত্রের নাম রমাবল্লভ, ইহার রত্নবল্লভ ও সুন্দর রায় নামে দুই পুত্র হয়, সুন্দর রায়ের পুত্রের নাম সুবলচাদ। ইনি সংস্কৃত ও পারস্য ভাষায় বিশেষ অনুরাগী ছিলেন। বাঙ্গালা ভাষাও তাহার যথেষ্ট অনুরাগ ছিল, এই ত্ৰিবিধ ভাষায় লিখিত অনেক হস্তলিখিত পুথি তিনি সংগ্রহ করেন। তিনি “গারুড়ী বিদ্যায়” বিশেষ দক্ষ ছিলেন, সপদংষ্ট ব্যক্তিকে মন্ত্রপ্রভাবে বিষধর ভুজঙ্গ তাহার সম্মুখে নিস্তেজ ও চলৎশক্তি রহিত হইয়া পড়িত, মন্ত্রবলে তিনি সপ-ধৃত করিতে সমর্থ ছিলেন। তদ্ব্যতীত তাহার ধৰ্ম্মনিষ্ঠাও অসামান্য ছিল। নিৰ্ম্মাইশিবের পূজক সিদ্ধ মহাত্মা কাশীনাথ ঠাকুর* “শব সাধনা” কালে ইহাকে “উত্তর সাধক” করিয়াছিলেন। সুবলচাদের পুত্রের নাম প্রকাশচন্দ্র, তাহার পুত্র শ্রীযুত শৈলজাচরণ সোম তরফদার হইতে এই ১৩ শ্রীহট্টর ইতিবৃত্ত উত্তবাংশ ৪র্থ ভাগে ইহার কথা উক্ত হইবে। ১৪. শ্রীচন্দ্র রায়ের কৃত একটি আরতি গান নমুনা স্বরূপ দেওয়া গেল— “আরতি কবি মাগো মুরতি তেরা। রাজ রাজ্যেশ্বরী মন্দিরে মেরা। ভুঙ্গারের জলে মায়ের চরণ পাখালে। রত্ব সিংহাসনে বসে চামর দুলাওয়ে। কটোরা ভরিয়া মধুভোগ লাগাওয়ে। কপুর সহিতে খিলি তাম্বুল যোগওয়ে। ভকতি করিয়া কহে শ্রীচন্দ্র রায় হে। কৃপাকরি বৈসমাগো ভজি রাঙ্গা পায়ছে।" ১৫. ইহার কথা পরবর্তী ৪র্থ ভাগে কথিত হইবে।