পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আট দালভের আশ্রমে আশ্রয় গ্রহণ করেন। ইহার পরেই রাম দালভ্য ঋষির আশ্রমপদে উপনীত হইয়া ঋষি কত্ত্বক পরিপূজিত হইলেন। তিনি ভোজনকালে স্বীয় মনোরথ জ্ঞাপন করিলে দালভ্য র্তাহার অভীষ্ট প্রদানে স্বীকৃত হইলেন বটে, কিন্তু তিনিও তৎসকাশে একটি বর প্রার্থনা করিলেন। অতঃপর উভয়ে আহার সমাপন করিলেন। আহারান্তে দালভ্য জিজ্ঞাসা করিলেন, “দেব! আপনি ইতিপূৰ্ব্বে যাহা কামনা করিয়াছিলেন, এক্ষণে প্রকাশ করুন।” রাম প্রত্যুত্তরে বলিলেন, “মহাভাগ! ক্ষত্রিয় চন্দ্রসেনের সগর্ভা স্ত্রী আপনার আশ্রমে আশ্রয় লইয়াছে; তাহাকেই আমি চাহি ।” ঋষি “তথাস্তু” বলিয়া ভয়কম্পিতা চঞ্চলনেত্রা চন্দ্রসেনপত্নীকে আনিয়া পরশুরামের হস্তে সমর্পণ করিলেন। ভাগব ইহাতে অতিশয় তুষ্ট হইয়া দালভ্যকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “ঋষিবর, এক্ষণে আপনার প্রার্থীতব্য কি আছে, প্রকাশ করুন।” দালভ্য বলিলেন-- “হে জগদগুরো, এই চন্দ্রসেন—পত্নী-গর্ভস্থ বালিকাটিই আমার প্রার্থনীয়।" ভার্গব (অগ্রেই বরদানে স্বীকৃত ছিলেন, কাজেই) বললেন “আমি ক্ষত্রিয়হন্তা, এই বালকের জন্যই এস্থানে আসিয়াছি, আপনে ইহাকেই প্রার্থনা করিলেন!! আপনার প্রার্থনা পূর্ণ করিতেই হইল, কিন্তু এই বালক যেন ক্ষত্রিয় শব্দে সংজ্ঞিত না হয়। (ব্রহ্ম-কায়া সমুদ্ভূত) ক্ষত্রিয় এই বালকের ভবিষ্যতে কায়স্থ নাম হইবে। কিন্তু জন্মগ্রহণ করিয়া বালক যদি ক্ষত্ৰধৰ্ম্মী হয়, তবে তাহাকে বারণ করিবেন।” এইরূপ বলিয়া দলভ্যাশ্রম ত্যাগ করতঃ কল্পান্তাগ্নিসমপ্রভ ভাগব ক্ষত্রিয় বিনাশ করিতে অন্যত্র ধাবিত হইলেন। এইরূপে ক্ষত্রিয় তনয়ের কায়স্থ নাম প্রাপ্তি ঘটিল এবং এই হইতেই তাহারা ক্ষত্ৰধৰ্ম্ম বজ্জিত হইলেন। এইরূপে ক্ষত্ৰধৰ্ম্ম বজ্জিত ও কার্যস্থ নামে খ্যাতি হইয়া তাহারা চিত্রগুপ্তের অবলম্বন লেখ্যবৃত্তি গ্রহণ করেন।” কায়স্থের পদ্ধতি আদিশূরের আনীত পঞ্চ ব্রাহ্মণের সহিত ঘোষ, বসু, গুহ, মিত্র ও দত্ত বংশীয় পাঁচ জন কায়স্থ বঙ্গদেশে আগমন করেন। বঙ্গীয় কায়স্থ সমাজে ইহারাই কুলীন কায়স্থ। উত্তর ও দক্ষিণ রাঢ়, ববেন্দ্র ও বঙ্গ এই স্থান চতুষ্টয়ে বাসভেদে ইহাদের মধ্যে শ্রেণীভেদ হইযাছে। ধ্রুবানন্দের কারিকা হইতে বঙ্গীয় কায়স্থগণের কুল পরিচয় নিম্নে লিখিত হইল ঃ-- (১) গুহ, ঘোষ, বসু, মিত্র। এই চারি ঘর দক্ষিণ রাঢ়ীয় আদি কুলীন। (২) (ঘোষ), দশ, সিংহ। এই তিন ঘর উত্তর রাঢ়ীয়। (৩) চাকি, নন্দী, নাগ। এই ঘর বারেন্দ্র। (৪) ওম দত্ত, দাস, পাল, পালিত, (সিংহ) সেন। সাতঘরে ইহারা মৌলিক। (৫) অঙ্কুর, আঢ্য, কর, কুণ্ড, ধর, নন্দন, বৰ্দ্ধন, বিষ্ণু, ভঙ্গ, লাহা, (ওম, ঘোষ) চন্দ, (দত্ত, দাস, নন্দী, পালিত, সিংহ, সেন.) এই উনবিংশতি জন “বঙ্গজের মহাপাত্র হন।” (৬) অর্ণব, আইচ, আদিত্য, আস, ইন্দ্র, উপমান, এন্দ, কীৰ্ত্তি, ক্ষাম, ক্ষেম, ক্ষোম, খিল, গণ, গণ্ডা, গুই, গুটী, গুণ, গুপ্ত, ঘর, চন্দ্ৰ, তেজঃ, দাম, দাহা, দানা, দেত্য, দেব, ধনু, ধরণী, নাথা, পিল, ভঞ্জ, ভুই, ভূত,মান, যশ, রক্ষিত, রঙ্গ, রাজা, রাণা, রাহা, রাউৎ, রুদ্র, লোধ, বন্দুর, বল, বৰ্ম্ম,ব্ৰহ্ম বিদ, বিন্দ,বৈতস,শক্তি, শাল, ১১. “কায়স্থ এষ উৎপন্নো ক্ষত্রিণাঃ ক্ষত্রিয়াৎ ততঃ। বামাজ্ঞয়া সদালভেনি ক্ষত্রধৰ্ম্মস্বহিস্কৃত। "---স্কন্ধপুবাণ ৪৭ অধ্যায় ৪৪ শ্লোক। ১১. পুরাণাস্তরে অন্যরূপ আখ্যানও লিখিত আছে।