পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/২৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃতীয় ভাগ-চতুর্থ খণ্ড 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ২৭২ পরে শ্রীহট্টের ঢাকাদক্ষিণবাসী জগন্নাথ মিশ্রের নিকট বিবাহ দিয়াছিলেন। অতএব শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর পিতা এবং মাতা উভয়ই শ্রীহট্টবাসী ছিলেন। “পিতামাতা আদি করি যতেক তোমায়। বলদেখি শ্রীহট্টে না হয় জন্ম কার।” শ্রীচৈতন্য ভাগবতের এই বাক্যে তাহা পরিষ্কার রূপেই কথিত; শ্ৰীমহাপ্রভুর মাতৃস্বসৃ-পতি চন্দ্রশেখর প্রভৃতি শ্রীহট্টবাসী আত্মীয় স্বজনকেই “আদি” শব্দে প্রকাশ করা হইয়াছে। বাৎস্যগোত্রীয় ব্রাহ্মণ কথা জয়পুরে বাৎস্যগোত্রীয় এক প্রাচীন ও সন্ত্রান্ত ব্রাহ্মণ বংশের বাস, ইহারা মহাদেবী বড়কাপনের বাৎস্যগোত্রীয়গণের শাখা-বংশ। সাদ্ধত্রিশত বৎসর হইল, তথাকার জয়রাম নামক একব্যক্তি তরফের জয়পুরে আসিয়া বাস করেন।" এই জয়রামের বংশধর শঙ্কর শিকদার “সুবোধিনী” নামী চণ্ডী-টীকা প্রণয়ন করিয়া প্রসিদ্ধ হইয়াছেন। ইহার সময় হইতেই এ বংশ ভট্টাচাৰ্য্য বংশ নামে খ্যাত হয়। শঙ্কর শিকদারের পৌত্র রামদেব বিদ্যানিবাস “শ্রাদ্ধদীপিকা” নামে এক স্মৃতিগ্রন্থ প্রণয়ন করেন। রামদেবর প্রপৌত্র গোপীনাথ (শ্রীচন্দ্র) ও তদভ্ৰাতৃবর্গ সকলেই উপাধিধারী পণ্ডিত ছিলেন। কথিত আছে, গোপীনাথ পাঠ্যাবস্থায় বিদ্যাজ্জনোদেশে কনিষ্ঠ মহোদব গৌবীকান্ত সহ নিরুদ্দিষ্ট হন; গৌরীকান্তের ন্যায়ালঙ্কার উপাধি এবং গোপীনাথের তর্কসিদ্ধান্ত উপাধি ছিল। ভ্রাতৃযুগল নিরুদ্দিষ্ট হইলে, রামকান্ত বিশারদ ও রমাকান্ত বাচস্পতিনামক অপর ভ্রাতৃদ্বয তাহাদের অনুসন্ধানে নানা স্থানে ভ্রমণপূৰ্ব্বক কুচবিহারে উপস্থিত হন ও তত্ৰত গোবরাছড়া নিবাসী শচীনন্দন মোস্তফির বাড়ীতে আতিথ্য গ্রহণ করেন। শচীনন্দন ইহাদের পাণ্ডিত্যে মোহিত হইয, তাহাদের অনুর্দিষ্ট ভ্রাতৃদ্বয়ের অনুসন্ধানের সহায়তা করিতে স্বীকৃত হন; কিন্তু কযেক দিন মধ্যেই তিনি মৃত্যুমুখে পতিত হন। শচীনন্দনের শ্রাদ্ধে যে সকল নিমন্ত্রিত পণ্ডিত আগমন করেন, তন্মধ্যে নরেন্দ্র তর্কভূষণ নামক জনৈক পণ্ডিত সহ তাহার দুইটি ছাত্রও আগমন করিয়াছিল; শাস্ত্রবিচারে ইহার সভাসীন পণ্ডিতবর্গকে পরাস্ত করেন। আমাদের বিশারদ ও বাচস্পতি তখন আশ্রয়দাতার ক্রিয়া উপলক্ষে বৃত ছিলেন; একজন প্রাচীন পণ্ডিত সেই বিচারার্থী ছাত্র দুটির সম্মুখীন হইতে ইহাদিগকে অনুরোধ করেন। উক্ত প্রাচীনের অনুরোধ উপেক্ষা করিতে না পারিয়া ইহারা সভ্যাস্থ হইয়া দেখিলেন যে, বিচারার্থী ছাত্রদ্বয় তাহাদেরই নিরুদ্দিষ্টভ্রাতা! আর বিচার চলিল না, ভ্রাতৃবর্গের পরস্পর সম্মিলনে সেই স্থানে এক আনন্দ কোলাহল উত্থিত হইল। ৭ "এবং মহাদেবো নাম্না শিকদারো মহামতিঃ । নিৰ্ম্মাম্ববাটিকাংরম্যাংগ্রামে শ্ৰীবড়কাপনে। উবাস স্বজনৈঃ সাৰ্দ্ধংমহামান পুরঃসবং। অতস্তদ্বংশীয়াঃ সৰ্ব্বেমানা ধৰ্ম্মপরাণাঃ। তদধস্তনসস্তানো জয়বাম মহাকবিঃ । যবে জয়পুরগ্রামে লব্ধা মাতামহাস্পদং।" ইতি জনৈক প্রাচীন কৃত শ্লোক হইতে।