পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৩০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃতীয় ভাগ-চতুর্থ খণ্ড 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ২৮০ বৃদ্ধের বাক্য অসত্য হয় নাই। শ্রীকৃষ্ণ উপাধিপ্রাপ্ত হইয়া, কাশী প্রভৃতি পণ্ডিত-প্রধান স্থানে নিমন্ত্রিত হইয়া গমন করতঃ বিচারযুদ্ধে জয়ী হন। তাহার পর দেশে আসিয়া পিতার নিকট তিনি তান্ত্রিক সাধনপ্রণালী শিক্ষা করেন। অগ্নি অপ্রকাশিত থাকে না, দেশে আসিলে সকলেই তাহার গুণে আকৃষ্ট হইতে থাকে; কিন্তু তৎকালে দেশে মোসলমান অত্যাচার ক্রমশঃ বৃদ্ধি পাইতেছিল শ্রীকৃষ্ণ যবনোপদ্রব শূন্য কোন দেশে যাইতে ইচ্ছা করিতেছিলেন। এই সময়ে তাহার শ্রীরাম নামে জ্যেষ্ঠ পুত্রের জন্ম হয়, এবং পিতা মৃত্যুমুখে পতিত হন। এই সময়ে কোন ব্যাপার উপলক্ষে বাণিয়াচঙ্গের অধিপতিকৰ্ত্তক নিমন্ত্রিত হইয়া তিনি এথায় আগমন করেন। বাণিয়াচঙ্গে বহু পণ্ডিতের সমাগম হইয়াছিল, কিন্তু বিদ্যা, জ্ঞান ও ধৰ্ম্মনিষ্ঠা প্রভৃতিতে তর্কালঙ্কার সকলের যশঃ আচ্ছাদিত করিয়াছিলেন। গুণগ্রাহী নৃপতি ইহা অনুভর করেন; তর্কালঙ্কারের প্রতি তিনি এতাদৃশ আকৃষ্ট হন যে, তাহাকে বাণিয়াচঙ্গে স্থাপন করিতে একান্ত উৎসুক হইলেন। রাজা তাহাকে বিনয় সহকারে সেই স্থানে অবস্থিতি করিতে প্রার্থনা করিলে, পণ্ডিতপ্রবর তাহাতে স্বীকৃত হইলেন। রাজা তখন র্তাহাকে বহুতর ব্রহ্মত্র প্রদান করিলেন ও র্তাহার নিকট হইতে মন্ত্র গ্রহণ করিলেন। কর্ণ খা গুরুকে যে সমস্ত ভূমি দান করেন, তিনি তৎসমস্ত গ্রহণ না করিয়া একখানা বাড়ী ও অল্প কতক জমি মাত্র গ্রহণ করিলেন; জীবনধারণোপযোগী বিত্ত ব্যতীত গ্রহণ করিলেন না; কেননা বহু বিত্ত লোভ ও বিলাসিতার প্রসূতি। কর্ণ খা যাত্রাপাশা নামক পল্লীতে পুষ্করিণী সমন্বিত একটি বাটী প্রস্তুত ক্রমে গুরুকে তাহা সমপণ করিলেন। কৰ্ণ খা শ্ৰীকৃষ্ণ তর্কালঙ্কারকে গুরু স্বীকার করিয়া বাণিয়াচঙ্গে সংস্থাপিত করিলে, বাণিয়াচঙ্গে র অপরাপর ব্রাহ্মণবগও তাহার শিষ্যত্ব স্বীকার করেন। ইহার নিকট হইতে তত্ৰত সকলেই শাস্ত্রীয় ব্যবস্থাদি গ্রহণ করিতে লাগিল; রাজগুরু তখন তত্ৰত্য “সমাজপতি” হইয়া উঠিলেন। রাজাও র্তাহার সম্মানার্থ এই নিয়ম প্রচারিত করিলেন যে, উৎসবোপলক্ষে যথায় দধিচিড়া ভোজনের আয়োজন হইবে, এই বংশীয় ব্যক্তিবর্গের জন্য সেস্থলে অন্নব্যঞ্জনের ব্যবস্থা করিতে হইবে। পাকা মিষ্টান্নাদির আয়োজন হইল, ইহাদিগকে পৃথক পাকে দেওয়া হইবে। গর্ভাধান ও জাতকৰ্ম্মাদি এবং শ্রাদ্ধাদিতে ইহাদিগকে কেহ নিমন্ত্রণ করিতে পারিবে না ইত্যাদি। রাজা এই সময় তর্কালঙ্কারকে ২৮ পরগণার রাজপণ্ডিতি প্রদান করেন। তাহার দুইপুত্র-শ্রীরাম ও হরিরাম। শ্রীরাম ও শলাকা পরীক্ষা শ্রীরাম পিতার নিকট শিক্ষালাভ করিয়া ন্যায় শিক্ষার্থ মিথিলায় গমন করেন ও বিশারদ উপাধি লাভ করিয়া দ্বাবিংশতি বর্ষ বয়সে কাশী হইয়া দেশে আগমন পূৰ্ব্বক তিনি তান্ত্রিক সাধনায় বৃত হন ও অচিরেই অসাধারণ আধ্যাত্মিক শক্তি লাভে সমর্থ হন। ইহার পর তিনি “শলাকা পরীক্ষায়” উত্তীর্ণ হইয়াঁ বঙ্গবিখ্যাত পণ্ডিত রূপে গণ্য হন। ৬। ব্রাহ্মণ-বহুল বাণিয়াচঙ্গের যে সকল ব্রাহ্মণ মোসলমান রাজার অধীনে কাৰ্য্য করেন নাই,তাহাদের মধ্যে নাকি গৌতম বংশীয়গণের শিষ্য কেহ কোনও দিন ছিল না এবং এখনও অতি অল্পই আছেবলিয়া আমরা বিশ্বস্ত সুতরে শুনিয়াছি। বলাবাহুল্য এই বিবরণী গৌতম বংশীয় ব্যক্তি প্রদত্ত এবং এস্থলে তদনুসারেই আমরা লিখিতে বাধ্য হইলাম।