পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৩০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৮৩ দ্বিতীয় অধ্যায় ; বাণিয়াচঙ্গের ব্রাহ্মণ বিবরণ 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত মথুরানাথের পত্নী, গর্ভের একাদশ মাসে একটি পুত্র প্রসব করিলেন; দৈবাৎ মথুরানাথ সেদিন গৃহে ছিলেন, তিনি শিশুদর্শনে গিয়া দেখিলেন যে, শিশুর গলদেশ বেষ্টন করিয়া একটি সপও জাত হইয়াছে! শিশুকে দেখিয়া মথুরানাথের মনে না-জানি কি ভাব-তরঙ্গ উত্থিত হইল, তিনি মুচ্ছিত হইয়া পড়িলেন। মথুরানাথের এই পুত্রের নাম মহাদেবপঞ্চানন। ইহার অভু্যদয়ে এই বংশ পবিত্র হইয়াছে, ধন্য হইয়াছে, মহাদেব পঞ্চাননের কাহিনী আমরা ৪র্থ ভাগে যথা প্রাপ্ত বিবৃত করিব। মহাদেবের তিন পুত্র, তন্মধ্যে মেঘনারায়ণ যখন নযবৎসরের বালক, তখন নবদ্বীপাধিপতি এক ব্যাপারোপলক্ষে কাশী, কাঞ্চী, দ্রাবিড়, মিথিলাদি বহুস্থানের পণ্ডিতবর্গকে নিমন্ত্রণ করেন। বঙ্গদেশীয় পণ্ডিতবর্গের তো কথাই নাই। এই ব্যাপারে মহাদেব পঞ্চাননও নিমন্ত্রিত হইয়াছিলেন, কিন্তু তিনি “শিষ্য শাসনে” পৰ্যটনে থাকায়, পুত্র মেঘনারায়ণকে প্রতিনিধিরূপে কয়েকজন শিষ্যসহ নবদ্বীপ যাইতে আদেশ দেন। নয়বৎসরের বালক মেঘনারায়ণ মাত্র ব্যাকরণ শেষ করিয়াছেন, কিন্তু শিষ্যবর্গের বাক্যে উৎসাহিত হইয়া বিদেশ গমনে ইচ্ছুক হইলেন। র্তাহার জননী ভগবতী দেবীর মনে এক ভাবের উদয় হইল, ভাবিলেন এই শিশু সেই পণ্ডিত সভায় গিয়া কি করিবে? ইহার দ্বারা তাহার শ্বশুরের ভুবন বিজয়ী খ্যাতি, তাহার পতির অসীম প্রতিপত্তি কি রক্ষিত হইতে পারিবে? ভগবতী পতির নিকট শিক্ষালাভ করিয়াছিলেন, তন্ত্রে তাহাব বিশেষ অভিজ্ঞতা ছিল, তিনি অনেক চিন্তা করিয়া, যাত্রাকালে তন্ত্রোক্ত সিদ্ধ “বিজয় মন্ত্র” পুত্রের জিহায় লিখিয়া, “বৎস, বিজয়ী হও” এই আশীৰ্ব্বাদের সহিত বিদায় দিলেন। মেঘনারায়ণ যখন নবদ্বীপে পৌছিলেন, লোক পাঠাইয়া রাজা অভ্যর্থনা করিয়া তাহাকে সভায় আনয়ন করিলেন। কিন্তু মহাদেবের পরিবৰ্ত্তে এই বালকমূৰ্ত্তি দর্শনে সভাসদবর্গের প্রীতি জন্মিল না। সেই সভাসীন এক “দিগ্বিজয়ী পণ্ডিত” বালক মেঘনারায়ণকে দেখিয়া দপভরে বলিয়া উঠিলেন “ইচ্ছা ছিল মহাপণ্ডিত মহাদেবকে এই মহাসভায় পরাজয় করিব। ভয়েই বোধ হয় তিনি পুচ্ছ সঙ্কুচিত করিয়াছেন। আর স্বর্ণ-বলয়-ভূষিত বালক! তুমি কি সঙ্গীত শুনাইতে আসিয়াছ? আশ্চৰ্য্য মহাদেবের বুদ্ধি! এ তো গ্রাম্য নিমন্ত্রণ নহে যে, ছেলে পাঠাইয়া “সমাজত্ব” রক্ষা করিতে হইবে। ধিক তাহাকে, যে পরাজয় ভয়ে আত্মগোপনে ঘৃণা করে না।” বালক মেঘনারায়ণ পিতৃ-নিন্দা সহিতে পারিলেন না, ভুজঙ্গ-শিশুর ন্যায় উন্নত মস্তকে সদৰ্পে বলিয়া উঠিলেন,—“পণ্ডিত ! তুমিই ধিকৃতি যোগ্য-পূজনীয় পিতা নহেন। যে পণ্ডিত হইয়া বৃথা দম্ভ করে, সে মূখ, সে দিগ্বিজয়ী নহে—সৰ্ব্বত্র পরাজিত। তাহার বিদ্যাবুদ্ধি দম্ভকৰ্ত্তক নিজ্জিত—সে পরাজিত; দিগ্বজয়ী তাহাকে কে বলে? সঙ্গীত-কারক ছোকরার হাতে স্বর্ণবলয় থাকে, এই সাদৃশ্যে আমাকে উপহাস করিয়াছ; ইহাই কি তোমার পাণ্ডিত্য? পক্ককেশ পিতৃসাদৃশ্যে সুতরাং তুমি ঐ সম্মুখবর্তী ভৃত্যকেও পিতৃসম্বোধন করিতে পারে; সাদৃশ্যেই তোমার প্রমাণ-বস্তু বিচার নহে।” পিতৃ-নিন্দা-কাতর উত্তেজিত দ্বিজ-সুতের সঙ্গত কথা চতুৰ্দ্দিকে প্রতিধ্বনিত হইতে লাগিল, সভায় তাহার জয়ধ্বনি উত্থিত হইল। বালকের বাক্যে দিগ্বিজয়ী লজ্জিত ও নিৰ্ব্বাক হইয়া রহিলেন। প্রকৃত পক্ষে তিনি পরাজিত হইলেন। সমাগত পণ্ডিতবর্গ সেই সভায় বালককে “তর্কভূষণ’ উপাধি দিলেন। তখন কখন কখন পরাজিত ব্যক্তির মাথার উপর বিজিত পণ্ডিত আপন উপবেশনাসন ঝাড়িয়া