পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৩০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃতীয় ভাগ-চতুর্থ খণ্ড 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ২৮৪ দিতেন; ইহাতে তাহার পরাজয়ের পরাকাষ্টা প্রদর্শিত হইত। উত্তেজনা বশতঃ এবং কাহার কাহারও ইঙ্গিতে, মেঘনারায়ণ সেই প্রথামত পরাজিতের মাথায় আসন ঝাড়িয়া দিলেন। দলিত-ফণ সপের ন্যায় তখন দিগ্বিজয়ী ক্রুদ্ধ হইয়া বলিলেন—“জেঠা ছেলে, তুমি যে অবৈধতা করিলে, তাহার ফলে তোমার সপ্তম পুরুষ পর্যন্ত কোনও ব্যক্তি অন্যকে জয় করিলে জীবিত থাকিবে না। পণ্ডিত হইলেই মৃত্যু হইবে।” মাতৃ আশীৰ্ব্বাদে বালক মেঘনারায়ণ বিজয় গৌরবের সহিত বাড়ী আসিলেন, মহাদেব শিষ্যগণের মুখে পণ্ডিত-পরাজয়ের কথা শুনিয়া সুখী হইলেন না। বিমৰ্ষভাবে তিনি তখন যাহা বলিয়াছিলেন, তাহার মৰ্ম্ম এই যে, দৈবতঃ পুত্ৰকত্ত্বক শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি পরাজিত হইয়াছেন, ইহা দৈবখেলা মাত্র; কিন্তু পণ্ডিতকে অপদস্থ করা বালকের পক্ষে ভাল হয় নাই। তিনি আরও বলিলেন—আশ্রিত দৈবশক্তি অযথা ক্ষয়িত হইলে, ইহা ইষ্টদায়ক হয় না এবং পুনঃ লাভ করা কঠিন হইয়া পড়ে। সতীর অভূত কীৰ্ত্তি কথা যাহোক, মেঘনারায়ণ ও র্তাহার ভ্রাতৃদ্বয় দেখিতে দেখিতে বিবিধ শাস্ত্রে পণ্ডিত হইয়া উঠিলেন, কিন্তু পিতৃনিষেধানুসারে তাহারা কেহই কোন উপাধি গ্রহণ করিলেন না। মেঘনারায়ণের সন্তানসন্ততি হয় নাই। মহাদেবের মধ্যম পুত্র রামরামের স্ত্রী পরম সাধিকা ছিলেন, তাহার বারব্রত পালন ও ইষ্টনিষ্ঠা অদ্ভুত ছিল। তদ্ব্যতীত রমণীর সারধৰ্ম্ম-অনন্য সাধারণ পণ্ডিতভক্ত র্তাহার প্রধান অলঙ্কার স্বরূপ হইয়াছিল। পাতিব্রাত্য ফল প্রভাবে তাহার এরূপ ক্ষমতা জন্মিয়াছিল যে, ভবিষ্য ব্যাপারের চিত্র তদীয় চিত্ত-ফলকে প্রতিফলিত হইত। তাহার ভবিষ্যদ্বাণী অক্ষরে ফলিয়া যাইত, অনেকেই তাহা পরীক্ষা করিয়া বিস্মিত হইয়াছিলেন । একদিন তিনি আপনার ননদী ও দেবর-জায়াকে সহাস্য বদনে বলিলেন—“আমরা কাল তোমাদিগকে ছাড়িয়া চলিয়া যাইব, ছেলে দুটিকে তোমাদের হাতে সপিয়ে দিলাম।” রমণীদ্বয় তাহার বাক্যের তাৎপৰ্য্য গ্রহণ করিতে না পারিয়া ইহা পরিহাস বলিয়াই মনে করিলেন। সতীর স্বামী তখন সুস্থ শরীরে গৃহে ছিলেন, কিন্তু পরিদন হঠাৎ তাহার শরীর অসুস্থ হইয়া পড়িল-স্নায়বিক দুৰ্ব্বলতা বশতঃ দেখিতে দেখিতে তিনি অবসন্ন হইয়া পড়িলেন। তখন সতীর পূৰ্ব্বদিনের উক্তি আলোচনায় আত্মীয়বর্গ ভীত হইয়া পড়িলেন। এদিকে সতী নিশ্চিতভাবে স্নানান্তে শিবাচ্চনা করিয়া আসিলেন, রামরাম ততক্ষণ পরিজন লইলেন। স্ত্রী মহলে উচ্চ ক্ৰন্দন-ধবনি উঠিয়াছে সতী অবিকৃতচিত্তে পতিসদনে আসিলেন ও গেলেন; শূন্যপ্রাণ দেহ পতিপদে পড়িয়া রহিল! ক্ষণপূৰ্ব্বে বদনে যে হাস্যরেখা দেখা গিয়াছিল, তাহা থামিয়া গেল। পতিভক্তির এমন জীবন্ত দৃষ্টান্ত কেহ কখন দেখে নাই, শুনেও নাই। কি শক্তিবলে সতী স্বেচ্ছায় পতির অগ্ৰে দেহ ছাড়িয়া চলিয়া গেলেন, কেহ বুঝিল না; তাহারা কিয়ৎকাল কিংকৰ্ত্তব্যবিমূঢ়বৎ স্তম্ভিত হইয়া রহিল। তাহার পরে সকলে সমস্বরে সতীর জয়ধ্বনী দিয়া উঠিল। রামরামের শেষ শ্বাস তখনও মহাকাশে মিলে নাই। অবশেষে প্রতিবেশী দশকের নিরাশ আহানে, তাহদের ভক্তিপূত জয়ধবনিতে যখন তাহার চমক ভাঙ্গিল, সতীর মহাপ্রস্থানের কথা