পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৩০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃতীয় ভাগ-চতুর্থ খণ্ড 0 শ্ৰীহট্টের ইতিবৃত্ত ২৮৬ বিশারদের পুত্রবধু একসময় ঐ জমিদার শিষ্যপ্রাপ্তির অভিপ্রায় তাহার কাছে ব্যক্ত করিয়াছিলেন। শিবশঙ্করী এরূপ দৃঢ় হৃদয়া রমণী ছিলেন যে, অভিশাপের ভয় সত্ত্বেও আপন কনিষ্ঠ পুত্রকে উপাধি গ্রহণের আদেশ দেন, তদনুসারে সদানন্দ ন্যায়শাস্ত্র অধ্যয়ন পূৰ্ব্বক “তর্কালঙ্কার” উপাধি ধারণ করেন। ইহাতে অপরেরাও সাহসী হয় এবং শ্রীকান্তের পুত্ৰগণের মধ্যে রামকান্তসাহস করিয়া “বিদ্যামণি” উপাধি গ্রহণ করিয়াছিলেন। কিন্তু উভয়েই মৃত্যুমুখে পতিত হন। উপাধি গ্রহণের পূৰ্ব্বে রামকান্তের একটি পুত্র জাত হয়, সদানন্দের পুত্রাদি হয় নাই। এ বংশে তন্ত্রশাস্ত্ৰে সকলেই শিক্ষিত এবং সকলেই তান্ত্রিক সাধক ও ক্রিয়াপর ছিলেন। সদানন্দের অগ্রজ কৃষ্ণানন্দের যোগাভ্যাসে বিশেষ দক্ষতা জন্মিয়াছিল। তিনি অন্তিমকালে পদ্মাসনে উপবিষ্ট হইয়া সমাধি অবলম্বনে দেহত্যাগ করেন। শেষ কথা কৃষ্ণানন্দের পুত্রের নাম রাধানন্দ, তিনি শুধু বিদ্বান ও বুদ্ধিমান ছিলেন, এমন নহে, তাহার ন্যায পরোপকারী ও দয়ালু ব্যক্তি খুঁজিয়া পাওয়া যায় না; নিজের অভাব অসুবিধার প্রতি দৃকপাত না কবিয়া অন্যের অভাব অপ্রতুল বিদূরিত কবিতে সৰ্ব্বদা সচেষ্ট থাকিতেন। আয়ুৰ্ব্বেদে তাহার এতাদৃশ দক্ষতা ছিল যে নাড়ী পরীক্ষা করিয়া কয়েক দিন আগেই রোগীর মৃত্যুর দিন বলিতে পারিতেন। ইহারই পৌত্র শ্ৰীযুত সারদানন্দ ভট্টাচাৰ্য্য মহাশয় হইতে আমবার্তাহাদের এই বংশ বিবরণ প্রাপ্ত হইয়াছি। শ্রীকান্তের পুত্রের নাম শিবশঙ্কর, তৎপুত্র হরশঙ্করও “বিদ্যারত্ন” উপাধি ধাবণ কবেন। ইনিও দীর্ঘজীবী হইতে পারেন নাই। র্তাহার ভ্রাতা উপাধির উপযুক্ত বিদ্যাজ্জন করিয়াও শাপভয়ে উপাধি গ্রহণ করেন নাই। ইনি অতি তেজস্বী ব্যক্তি ছিলেন। এই বংশীয়গণের গৌরব, প্রতিপত্তি যে অত্যধিক ছিল, দূরবত্তী ঢাকা প্রভৃতি অঞ্চলেও শিষ্য সম্বন্ধ থাকাতেই তাহা প্রমাণিত হয়। শ্রীহট্টের নবাব সরকারেও র্তাহাদের বৃত্তি অবধারিত ছিল, প্রত্যহ এক কাহন কৌড়ি তাহারা প্রাপ্ত হইতেন। শিবশঙ্করের সময় পর্যন্ত এই বৃত্তি রীতিমত আদায়ের নিদর্শন পাওয়া যায়; তাহার পর এই বৃত্তি বাহাল ছিল কি না, জানা যায় না। বাণিয়াচঙ্গে অনেক সন্ত্রান্ত ব্রাহ্মণ বংশই বিদ্যামান; তন্মধ্যে সামবেদীয় ভরদ্বাজ গোত্ৰীয়েরা কাত্যায়নের দৌহিত্র বংশ; জাতুকৰ্ণ গোত্রীয় মুরারি বিশারদ একজন শ্রেষ্ঠ পুরুষ ছিলেন, ইহার কথা শেষ হিন্দু নৃপতি গোবিন্দের ভগিনীপতি ছিলেন। র্তাহাদের দৌহিত্র বংশ বলিয়া উক্ত হন। তদ্বতীত সাবর্ণগোত্রীয় এক ব্রাহ্মণ বংশের কতক যজমান শাসন বাণিযাচঙ্গে ছিল বলিয়া জানা যায়। এতদ্বতীত চতুরঙ্গ রায়ের পাড়ার যজুৰ্ব্বেদীয় ভরদ্বাজ গোত্রীয় এবং অপর বহু ব্রাহ্মণ বংশ বাণিয়াচঙ্গে বিদ্যমান। কিন্তু কাতায় কাশ্যপ ও গৌতম ব্যতীত অপর কোনও বংশে বিবরণী আমরা প্রাপ্ত হইতে পারি নাই।-- ৯. শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত পূৰ্ব্বাংশ ২য ভাগ ৩য খণ্ড ২য অধ্যায় দ্রষ্টব্য। ১০. আমরা ইতিবৃত্তেব ২য় ভাগ ৩য় খণ্ডে এই সকল বংশ বিবরণ বর্ণন করিতে প্রতিশ্রত ছিলাম কিন্তু আমরা তদ্বংশীয় হইতে কোনও বিবরণীনা পাওয়াতে প্রতিশ্রীতি পালন করিতে পারিলাম না।