পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৩২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃতীয় ভাগ-চতুর্থ খণ্ড 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ৩০০ পুলকিত হন। তিনি পুত্রকে কদাপি তাড়না ভৎসনা করেন নাই, মনে পুত্রের প্রতি পিতৃজ্ঞান পোষণ করিতেন। তিনি তাড়নাদি না করিলেও শিশুকালাবধি হরিগোবিন্দ মাজ্জিত চরিত্র ছিলেন, তাহাকে কাহারই কোন কথা শিখাইয়া দিতে হইত না। তুলসীরাম হরিরামের ২য় পুত্রের নাম তুলসীরাম। ইনি সিদ্ধ পুরুষ ছিলেন, প্রায়শঃ উলঙ্গ থাকিতেন। তিনি রাত্রে নিকটবৰ্ত্তী মালিটীলা-শ্মশানভূমে গমন করিয়া নিশ্চিন্তে দুর্গার ধ্যান করিতেন। একদা এইরূপ ধ্যান করিতেছেন, কথিত আছে যে তখন হঠাৎ শুনিতে পাইলেন, কে যেন তাহাকে নাম ধরিয়া ডাকিতেছে। সে অমৃতমাখা ধবনি শ্রবণে বুঝিলেন যে ইহা নরকণ্ঠ নিঃসৃত ধ্বনি নহে, তাহাবই ধোয় দুর্গা তৎপ্রতি কৃপাপরতস্ত হইয়া যেন বলিতেছেন—“এবার পূজাকালে তোমার অভীষ্ট সিদ্ধ হইবে।” তুলসী এ শূন্যবাণী শ্রবণে দেবীর উদ্দেশ্যে প্রণত হইয়া পড়িলেন। আশ্বিন মাস আগত প্রায়, বাড়ীতে আসিয়াই তুলসী পূজার আয়োজন করিতে ব্যস্ত হইলেন। কপদক বিহীনউদাসীন-প্রায তুলসীরামেব এই কাণ্ড দর্শনে স্ত্রীপুত্রাদির হাস্য উদ্রিক্ত হইল; কিন্তু ভক্তের সঙ্কল্প পূর্ণ রহে না, বেজোড়াবাসী তাহার জনৈক শিষ্য পূজার দ্রব্য সম্ভার লইয়া হঠাৎ উপস্থিত হইলেন। তাহার মনে এইভাব জন্মিয়াছিল যে, এবাব গুরুর দ্বারা দেবীর পূজা করাইবেন। তিনদিন পূজা হইল; প্রতিমা বিসজ্জন দিয়া তুলসী স্ত্রীলোকের ন্যায বিলাপ করিতে লাগিলেন। কথিত আছে ত্রিলোকতারিণী তখন আবির্ভূত হইযা ভক্তের হৃদয়ে শান্তিদান কবেন এবং তাহাকে একছড়া রুদ্রাক্ষমালা প্রদান করেন; একছড়া কদ্রাক্ষের মালা এখনও তদ্বংশীয়গণ পূজা করিয়া থাকেন, এবং তাহাই দেবীদত্ত মালা বলিয়া প্রকাশ করেন। কেহ কেহ বলেন, এই মালা সেই শ্মশানভূমে নিশীথবাত্রে দেবী তাহাকে প্রদান করিয়াছিলেন। বাগচি বংশের কথা হরিহরের বংশ বৃত্তান্ত বাগচি উপাধি হইতেই জানা যাইতেছে যে,এই বংশীয়গণ বঙ্গীয় বারেন্দ্র শ্রেণীর কুলীন ব্রাহ্মণ। হরিহব অগ্নিহোত্রী নামে বাগচি বংশীয় এক উগ্রতপা মহাত্মা সম্ভবতঃ খৃষ্টীয় পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষভাগে উত্তর বঙ্গ হইতে আসিযা দিনারপুরে বাস করেন; দিনারপুরের পাণিউন্দা নামক স্থানে ইহার প্রাচীন বাসবাটী এখনও আছে হরিহর সাগ্নিক ব্রাহ্মণ ছিলেন। হরিহরের যজ্ঞকুণ্ডের চিহ্নও সেই স্থানে দুষ্ট হয়। হরিহর এদেশে আগমন করিলে রাজদও বহু পরিমিত ভূমি ব্ৰহ্মত্র প্রাপ্ত হইয়া, একজন প্রধান ভূস্বামীরূপে গণ্য হন ও প্রজাগণকৰ্ত্তক “বাজা” বলিয়া আখ্যাত হইতে থাকেন। কুরশা মৌজায় “রাজবাড়ী” নামে খ্যাত ইহার প্রাচীন ভগ্ন বাটিকা অদ্যাপি দৃষ্ট হয়। হরিহরের সহিত উদ্ধনদেব ও বৰ্দ্ধনদেব নামে দুই ভ্রাতা এদেশে আসিয়াছিলেন, দিনারপুরের পুরকায়স্থগণ ইহাদের বংশ জাত। হরিহরের পুত্র শ্রীবৎস আচাৰ্য্য তত্ৰাঞ্চলের বহুব্যক্তিকে শিষ্য করিয়াছিলেন। এই বংশে পরে অনেক খ্যাতনামা ব্যক্তির উদ্ভব হয়; নিম্নে কয়েক জনের নামোল্লেখ করা হইল।