পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তের হেতু সাধু নামেও খ্যাত হয়, ইহারা নিঃসংশয়ে বৈশ্য।” শ্ৰীযুক্ত কৃষ্ণনাথ ঘোষ স্বীয় গ্রন্থে লিখিয়াছেন—“সাহা এই শব্দটি জাতিবাচক নহে, যেমন বণিক শব্দে কোন জাতিকে না বুঝাইয়া যাহারা ব্যবসায় করে, তাহাদিগকেই বুঝায়, সেইরূপ পূৰ্ব্বে সাহা শব্দে কোন জাতিকে না বুঝাইয়া যাহারা ব্যবসায় করে, তাহাদিগকেই বুঝাইত। কিন্তু বৰ্ত্তমানে সাহা বলিলে একটি জাতিবিশেষকেই লক্ষ্য করে। সাহা শব্দের অর্থ কেবল ব্যবসায়ী নহে। সংস্কৃতে সাধু শব্দের অপভ্রংশে সাহু, সাহা ও সা। সংস্কৃতে সাধু শব্দের অর্থ ধনবান, জ্ঞানবান, ধাৰ্ম্মিক, বণিক, ব্যবসায়ী; সুতরাং সাধু, সাহা ও বণিক এই তিনটি শব্দই একাৰ্থ বোধক।” স্বগীয় ধৰ্ম্মানন্দ মহাভারতী মহাশয় বলেন– “সাহা শব্দ একটি পুরাতন ও প্রখ্যাত সংস্কৃত শব্দের অপভ্রংশ। ঐ শব্দের নাম সাধু। বিহারে, অযোধ্যায়, উত্তর পশ্চিম প্রদেশে এবং ভারতবর্ষের আরও নানা স্থানে ধু অন্তক শব্দ হু’ বলিয়া অভিহিত হয়; যথা – বধু-বহু, গোধুম-গোহুম, দধিদহি, মধু-মহু, বা মৌ, মধুপুরী-মহুপুরী, অবধূত-অবহুত, দাদুজী-দাউজী ইত্যাদি। এইরূপে ঐ সাধু শব্দ সাহু, সাউ, সাহা, সউহ, সা, সাজী প্রভৃতি শব্দে অপভ্রষ্ট হইয়া গিয়াছে। সংস্কৃত সাধু শব্দের অর্থ শুদ্ধচেতা লোক, ত্যাগী, ব্ৰহ্মদশী, ধনবান, বণিক, ব্যবসায়ী প্রভৃতি। জাতিতত্ত্বে সাধু শব্দের অর্থ বণিক। বৃহৎ সংহিতার “সাধুনাং বণিজাম” এইরূপ লিখিত আছে। গুজরাটী, মাড়োয়ারী, বুণ্ডেলখণ্ডী, ও কাটিয়াবাড়ী প্রভৃতি ভাষায় সাহু সাহুকার প্রভৃতি শব্দ বণিকের উপাধি। পশ্চিমান্তর প্রদেশে সাধু (অপভ্রংশে সাধু) শব্দ বৈশ্যেক উপাধি। বঙ্গের প্রাচীন কাব্যেও “সাধু” শব্দ বণিকের প্রতি প্রয়োজিত হইয়াছে।” এস্থলে বলা আবশ্যক যে শ্রীহট্ট অঞ্চলে “সাধু” শব্দ “সাউধ’ তথা সাহু, সাউ, বা সেী রূপে পরিণত হইয়াছে। : তাহাদের বঙ্গাগমন বৈশ্য আগরবালগণের বঙ্গে আগমন সম্বন্ধে শিরাজগঞ্জ হইতে প্রাপ্ত ১১২৫ সনের একখানা পাতড়ায় পাওযা যায় যে, “ইহারা পশ্চিম দেশবাসী ছিল, পরে তথ্য হইতে অগ্রদাস আর আগোর নামে ভ্রাতৃদ্বয় সম্রাট অশোক বৰ্দ্ধনের সময় মগধে আগমন করেন, তথা হইতে বৈশ্যগণের অষ্টকুলীন বংশ, যথা – পরবর্তীগণ তাম্রলিপ্তে গমন করে এবং তৎপরে বঙ্গের নানা স্থানে ইহারা বিস্তুত হয়।” ২৫ দনুজ শুরু শাপাস্তে রাষ্টিকঃ কৃষিকঃ রুচিঃ। সোলুক্যঃ সুলুকোদ্ভবঃ শুল্ক সাহা বভুবহ। সাধুত্বস্যাবভৎ কিল ধৰ্ম্ম নিষ্ঠা পরাগতিঃ ।” বঙ্গেব জাতীয় ইতিহাস ধূত সেলুক কুল কারিকার বচন। ২৬ কুল প্রতিভা ৩ খণ্ড ৩৭ পৃষ্ঠা। ২৭ সিদ্ধাস্ত সমুজ ৬ষ্ঠ খণ্ড ৯/১০ পৃষ্ঠা। ২৮ “পশ্চিম প্রদেশে মোদেব পূবর্বপুরুষগণ। কবিত বসতি মুঞি, কৈরছি শ্রবণ। অপরের বংশধর হৈলা আগরী। বৈশ্যকুলে জাত সভাই নানা গুণধারী। সেই হৈতে আগরবালা বলিত সকলে।" বঙ্গের জাতীয় ইতিহাস বৈশ্যকাণ্ড ধৃত বাক্য।