পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৩৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৩১ ষষ্ঠ অধ্যায় : পুনঃ বিবিধ বংশ কথা L শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত কালারাম বেকিটেকা বাজারের নিকট একটা ঘাট বসান, ইহা “কালারামের ঘাট” নামে খ্যতা আছে ঐ স্থান এক্ষণে মৎস্য বিক্রয়ের এক প্রধান আড্ডা। তিনি কয়েকটি হাট বসাইয়াছিলেন বলিয়া কথিত আছে। কালারামের পুত্র রাম দাস, তৎপুত্র চান্দরাম, তাহার পুত্রের নাম জগৎরাম, তৎপুত্র আদিত্য রাম, তাহার পুত্রের নাম শ্যামরায়, শ্যামরায়ের পুত্র প্রসাদরাম, ইহার উৎসবরাম নামে এক পুত্র হয়; ইনি সাধারণতঃ উছব পাল নামে খ্যাত ছিলেন। ইহার সময় হইতেই এই পাল বংশীয়গণ “চৌধুরী” উপাধি ধারণ করিয়া আসিতেছেন। উছব পাল একজন ক্ষমতাশালী ব্যক্তি ছিলেন, তিনি অকমণবর্গকে ঋণদান করিয়া অনেক অর্থ উপাৰ্জ্জন করেন, এবং তাহাতে তরফ পরগণার অনেক তালুক ক্রয় করিয়া জমিদার শ্রেণীতে গণ্য হন। র্তাহার প্রতাপে অনেক দুষ্ট লেক দমিত হইয়াছিল। তিনি নিজগৃহে বিষ্ণুমন্দির প্রতিষ্ঠিত করিয়া শ্রীধর বিগ্রহ স্থাপন করেন এবং খোয়াই নদীতীরে “গোবিন্দগঞ্জ” নামে একটি বাজার বসান। সেই স্থানে তিনি একটি বিদ্যালয় সংস্থাপন করিয়া যশস্বী হন। প্রায় বিশতি সহস্র মুদ্রা আয়ের ভূসম্পত্তি বাখিযা ১২৬৯ বাংলায় তিনি মৃত্যুমুখে পতিত হন। তাহাব পুত্র হবগোবিন্দ অতি পাৰ্ম্মিক ও সদগুণসম্পন্ন ব্যক্তি ছিলেন, হবিগঞ্জে তিনি “চৌধুলী বাজার’ নামে একটি বাজার বসাইয়াছিলেন; উহা এক্ষণে একটি প্রধান বাজাপে পরিণত হইযাছে। গোপায়ার মধ্য ইংরেজী স্কুল প্রতিষ্ঠা তাহার আর এক কীৰ্ত্তি । ৩৫ বৎসব মাত্র বয়সে পুত্র হরকুমার পাল চৌধুরীকে নাবালক অবস্থায় রাখিযা অবস্থায় রাখিয়া প্রাণত্যাগ করেন । হবকুমাবও একজন উপযুক্ত জমিদাররূপে গণ্য হন, তাহার পুত্র শ্রীযুক্ত জিতেন্দ্রকুমান পাল চৌধুপা বৰ্ত্তমান আছেন। গোপায়া স্কুলের পণ্ডিত শ্রীযুক্ত নীলকান্ত চক্ৰবৰ্ত্তী মহাশয় হইতে এই বিবপণ প্রাপু ত ওয়া গিয়াছে। বহুলার বংশ বিবরণ তরফ পরগণায় হবিগঞ্জেব সন্নিকটবৰ্ত্ত বহুল প্রাচীন গণ্ডগ্রাম। বদ্ধমান জেলায কাটােয় অঞ্চলে পীঠস্থানের অধিষ্ঠাত্রী দেবী “বহুলা”। কোনও সাধক দেবীর নামে গ্রামের নামকরণ, করিয়াছিলেন কিনা, অথবা গ্রামের বিস্তুতি-সমৃদ্ধি লক্ষ্য করিয়া ইহার নাম “বহুলা” হয় কিনা, তাহা এক্ষণে জানিবার উপায় নাই। তবে গ্রামের প্রসিদ্ধি বহুকাল হইতে। তরফের ‘আনন্দপুর” মহালেব অধিকারী আনন্দরাম দত্তের নিবাস এই গ্রামে ছিল। পরে এই দত্তরংশ মোসলমানধৰ্ম্ম গ্রহণ করিয়া মোসলমান সমাজভুক্ত হইয়া যান। এই বংশের সুবিদ্বান মৌলবী সাহেব আব্দুল রহিম বীরভূমের তদানিন্তন পাঠান বংশীয় নবাবের শিক্ষকতা করিয়া যথেষ্ট যশঃ ও অর্থ অজ্জন করেন। পরে ইহারা “চৌধুরী” উপাধি ধারণ করিয়া এক ঘর বহুলা গ্রামেই স্থায়ী হইয়াছেন। অপর এক ঘর পুটিজুরীর অন্তর্গত ও বাদেশর দৌলতপুরে উঠিয়া যান। ইহারা বলিয়া থাকেন ইহাদের পূৰ্ব্বপুরুষ ও রিচির দত্তচৌধুরীগণ একই বংশীয়। বহুলার এই দত্তবংশের সঙ্গে সঙ্গে তাহাদিগের পুরোহিত বংশও মোসলমান ধৰ্ম্ম গ্রহণ করেন, কিছুদিন পূৰ্ব্ব পর্যন্তও তাহারা মোসলমান হইয়াও “ঠাকুর” পদবীতে অভিহিত হইয়াছিলেন। “গোপাল রায়”, “সুবল গৌরাঙ্গ”, “লাখুউদ্ধব”, ভঙ্গুবাঞ্ছী নামীয় তালুকের অধিকারীগণও সকলেই এ গ্রাম নিবাসী। গ্রামের অগ্রণী দত্তজগণ পুরোহিত সহ মোসলমান ধৰ্ম্ম গ্রহণ করায় ভগ্নোৎসাহে অন্যান্য বিশিষ্ট হিন্দুগণ মধ্যে অনেকে এ গ্রাম ত্যাগ করিয়া স্থানান্তর বসতি করেন। বহুলা গ্রামবাসী অন্যতর বংশোদ্ভব পরলোকগত সদাশয় রামদুলাল দাসের নাম বিশেষ উল্লেখযোগ্য,