পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৩৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃতীয় ভাগ-চতুর্থ খণ্ড 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ৩৩২ কলিকাতার টেরেটি বাজারে তাহার বিস্তুত কারবার ছিল। র্তাহার মাতৃশ্ৰাদ্ধে মুক্তহস্তে দান করিয়া তিনি যশস্বী হন, তখন দেশে দুর্ভিক্ষ ছিল, দুর্ভিক্ষের সময়ে এরূপ দানবহুল শ্রাদ্ধ ব্যাপার এতদঞ্চলে তাহার স্মৃতি চির জাগরূপ রাখিয়াছে। বহুলাবাসী আমাদের বিবরণ প্রদাতা স্বগীয় কৃষ্ণচন্দ্র দাস বি.এ সুদূর কাশ্মীর রাজ্যে যিনি রাজমন্ত্রীর আফিসে সুপারিন্টেণ্ডেণ্ট পদে নিযুক্ত ছিলেন, বৃদ্ধ পিতামহ এস্থান বাসী হন, তাহার নাম তুলসী দত্ত। কবিরাজী ব্যবসায়ী তুলসী দত্ত নবাবী গোষ্ঠীতে বিবাহ করিয়া এদেশে থাকিয়া যান। উক্ত গোষ্ঠীর কোনও মহাজনের জেলা বাখরগঞ্জের অন্তর্গত নলচিঠিতে কারবার ছিল, যশোর নিবাসী তুলসীদত্তও সেইখানে কবিরাজী করেন। মহাজন কোনও রোগীর চিকিৎসার্থ তাহাকে এদেশে লইয়া আসেন। এই বিবাহ লইয়া ঢাকার নবাব সেরেস্তায় অসবর্ণ বিবাহের অভিযোগ হইয়াছিল, শ্রীহট্টের চিরাচরিত প্রথার সমর্থনে অভিযোগ পণ্ড হইয়া যায়। তুলসীদত্তে অনন্তর বংশীয়েরা উচাইল গ্রাম হইতে উঠিয়া আসিয়া কিছুকাল ভদ্রগৃহ বা ভাদিগিরা গ্রামে বাস করেন ও পরে বহুলায় আসিয়া বাসস্থাপন করেন। ভদিগিরায় (অধুনালুপ্ত) এক শাখা “উত্তম কৃপারামের” গোষ্ঠীনামে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। শ্রীহট্টের ইতিবৃত্তের পূৰ্ব্বাংশে ১ম ভাগের ৮ম অধ্যায়ে ধৰ্ম্ম “প্রকরণে” জগন্মোহিনী” সম্প্রদায়ের উল্লেখিত হইয়াছে। স্বগীয় অক্ষয়কুমার দত্ত কৃত উপাসক সম্প্রদায় গ্রন্থের প্রথম ভাগে বৈষ্ণবধৰ্ম্মাশ্রিত এই অভিনব সম্প্রদায়ের বিবরণ বিবৃত হইয়াছে। মাছুলিয়া এই সম্প্রদায়ের আদি স্থান, দ্বিতীয় স্থান জলসুখা, তৃতীয় ও প্রধান স্থান বিথঙ্গল। তদ্ব্যতীত ঢাকা জেলার ফরিদাবাদ চতুর্থ ও শেষ স্থান। আরও আটটি স্থানে এই সম্প্রদায়ের আখড়া স্থাপিত হয়, ইহার ময়মনসিংহের রিভিন্ন অংশে অবস্থিত। ধৰ্ম্মাবলম্বীগণ ব্রাহ্মবাদী; প্রতিমা পূজায় তাহাদের স্পৃহা নাই; “গুরুসত্য” বলিয়া গুরুকেই প্রত্যক্ষ দেবতাস্বরূপ স্বীকার করেন। ইহারা স্ত্রত্যাগী, ধৰ্ম্মে তুলসী ও গোময়ের বিশেষত্ব স্বীকৃত হয় না ।” প্রায় চারিশত বৎসর পূৰ্ব্বে বাঘাসুরাবাসী জগন্মোহন নামক এক সিদ্ধপুরুষ এক নূতন সম্প্রদায়ের সৃষ্টি করেন। জগন্মোহনের গুরু মুরারি রামানন্দী সম্প্রদায়ী একজন শুদ্ধ বৈষ্ণব ছিলেন। জগন্মোহনের প্রচারিত মত অভিনব হইলেও কাজেই এই নূতন ধৰ্ম্ম বৈষ্ণব ধৰ্ম্মাশ্রিত বলিয়া প্রচারিত হয়। ৬ সম্প্রতি ইহার কতক ব্যববহার চলিত হইয়াছে। ৭. লবনীদাস কৃত জগন্মোগন ভাগবতে জগন্মোহনের জন্মস্থান চন্দ্রদ্বীপ বলিযা লিখিত আছে। কিন্তু স্মরণাতীতকালে বাঘাসুরাতে তদ্বংশীয়ের বাস। বাঘাসুরার পূৰ্ব্বনাম চন্দ্রদ্বীপ ছিল কি না বিচাৰ্য্য। জগন্মোহন চরিত বর্ণনা করিয়াছে ইহাই দৃষ্ট হয়। এস্থলে তিনি শ্রীচৈতন্য ভাগবতে অনুকরণে এইগ্ৰন্থ লিখিয়াছেন এবং শ্রীচৈতন্যের জন্মস্থান নবদ্বীপের অনুকরণে জগন্মোহনের জন্মস্থানকে চন্দ্রদ্বীপ লিখিয়াছেন। ইহার একটা কারণও ছিল। বাঘাসুরার অতি সন্নিকটে চন্দ্রপুর বা চান্দপুর নামক তৎকালপ্রসিদ্ধ পল্লীর নামেই তিনি চন্দ্রদ্বীপ নাম ব্যবহার করিয়াছেন দেখা যায়। আবার তিনি জগন্মোহনের পুত্র শ্যাম ও সুদামকে সরাইলবাসী বলিয়াছেন। অতএব তাহার বর্ণিত চন্দ্রদ্বীপ যদি সরাইলের মধ্যে হয়, তাহা হইলেও জগন্মোহনকে শ্রীহট্টবাসী বলা যায়। জগন্মোহনের সময় সরাইল শ্রীহট্টের অন্তর্গত ছিল।