পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৩৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃতীয় ভাগ- পঞ্চম খণ্ড L৷ শ্ৰীহট্টের ইতিবৃত্ত ৩৪৮ ছিলেন । কাশীতে অবস্থিতি কালে রাঢ়ীয় সম্প্রদায়ের রাঘব বেদোদ্ধার করিয়া সামবেদের স্থলে যজুবেৰ্বদীয় বলিয়া গণ্য হন। শ্রীহট্টের বৈদিক ব্রাহ্মণবর্গের সহিত সম্মিলিত হইবার জন্যেই তিনি ইহা করিয়াছিলেন এবং তজ্জন্য “বেদোদ্ধারী রাঘব” নামে খ্যাত হন। রাঘবের দেহত্যাগ রাঘব বা রাঘবানন্দের বেদান্তরত্ন উপাধি ছিল। তাহার পুত্র তিনজন; ইহাদের নাম বিষ্ণুদাস, রামনাথ ও বংশীবদন । ইহারা যখন শিশু, সেই সময় বাণিয়াচঙ্গাধিপতি গোবিন্দ বা হবিব খার সহিত বিজয় সিংহের বিবাদ উপস্থি হয এবং হবিব খাঁ কত্ত্বক বিজয় নিহত হন। এ বৃত্তান্তও পূৰ্ব্বাংশে বর্ণিত হইয়াছে। বিজয় সিংহ যে গুপ্ত ঘাতকের করে নিহত হন, তাহাকে মৃত্যুর পূৰ্ব্বে বলিয়াছিলেন— “তোমার প্রভুকে আমার একটি অনুরোধ জানাইও, সে অনুরোধটি এই যে, আমার গুরুদেবকে তিনি যেন আমার সম্পত্তির কিয়দংশ প্রদান করেন।” ঘাতক স্বীকার করিল এবং কৰ্ত্তব্য পালন পূৰ্ব্বক রাজগুরুকেও নিহত করার জন্য ধাবিত হইল। রাঘবের নিকট যখন সে উপস্থিত হইল, তাহার অভিপ্রায় বুঝিতে পারিয়া রাঘব তখন নিজ ইষ্টমন্ত্র জপের জন্য একটু সময় চহিলেন। ঘাতক স্বীকৃত হইল ও অস্ত্র হস্তে পাশ্বেই দাঁড়াইয়া রইল। রাঘব বদ্ধাসনে উপবিষ্ট হইয়া নাসা দৃষ্টি সহকারে ইষ্টমন্ত্র জপ করিয়া সমাধিযোগে তনুত্যাগ করিলেন; ঘাতকের অস্ত্র তাহার অঙ্গ স্পর্শ করিতে পারিল না। ঘাতক তথা হইতে আগমন করিয়া, রাজার অন্তিম অনুরোধ ও রাঘবের দেহত্যাগের কথা হবিব খাঁর গোচর করিল। কিসমত আতুয়াজান ও শিক সোনাইতার নামকরণ পিতৃহত্যার সংবাদ প্রাপ্তমাত্র বাজকুমারগণ এবং তাহাব আত্মীয়স্বজনবর্গ বাজবাড়ী পরিত্যাগপূৰ্ব্বক পলাযন করিয়াছিলেন, ইহা পাঠক পূৰ্ব্বাংশে পাঠ করিয়াছেন। যখন রাঘবেরও মৃত্যু সংবাদ প্রচারিত হইল, তখন রাঘবের ভৃত্য সাচারাম দাস রাঘবের পত্নী ও পুত্রত্ৰয সহ পলায়ন করিয়া রায়পুরের উত্তরে এক বন মধ্যে আশ্রয় গ্রহণ করিয়াছিল, ও পরে তথা হইতে তাঁহাদের মাতুলালয় পঞ্চখণ্ডে চলিয়া যায়। এদিকে হবিব খা, বিজয়ের অধিকৃত আতুয়াজান পরগণার দশপণ অংশ নিজ কৰ্ম্মচারী পালি গ্রামের চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে রাখিলেন; (সেই দশপণ অংশই কিসমত আতুয়াজান নামে খ্যাত হয়, এবং বাকি ছয়পণের শিকি বা চতুর্থাংশ বিজয়সিংহের অন্তিম অনুরোধ অনুসারে, রাঘবের পুত্রত্রয়কে দিবার অভিপ্রায়ে ঘোযণা প্রচার করিলেন। রাঘবের পুত্রত্ৰয় তখন মাতুলালয়ে; এ সংবাদ তাহারা পাইলেন না। রাঘবের পুত্রত্ৰয় এই সম্পত্তি গ্রহণের জন্য উপস্থিত না হওয়ায়, কৃষ্ণানন্দ নামক এক ব্যক্তি আপনাকে রঘবের ভ্রাতৃ-পরিচয়ে উক্ত শিকি অংশ (চতুর্থাংশ) গ্রহণ করিলেন, উহাই শিকি বা শিক সোণাইতা পরগণায় পরিণত হয়। সাচারামের কার্য্য ও সাচায়নি গ্রাম প্রভুভক্তি পরায়ণ সাচারাম দেশের অবস্থা অবগত হইবার জন্য পঞ্চখণ্ড হইতে এক সময় তথায় উপস্থিত হইয়া জানিতে পারিল যে, দেশে শান্তি স্থাপিত হইয়াছে এবং কৃষ্ণানন্দ নামক