পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সতের কামার—বঙ্গে ইহাদের মধ্যে তিন সমাজ দৃষ্ট হয়। এদেশে ইহারা দত্ত, দেব, দাস প্রভৃতি উপাধি ধারণ করিতে দেখা যায়। কুমার—ইহাদের উৎপত্তি সম্বন্ধে এক উপন্যাস শুনিতে পাওয়া যায়। দেবাদিদেব মহাদেবের বিবাহ কালে, প্রথানুসারে ঘট স্থাপন করা হইলে, তদুপরি শিবের দৃষ্টিপাত হওয়ায়, তৎক্ষণাৎ তাহা হইতে এক পুরুষের উদ্ভব হয়; রুদ্র অংশে উদ্ভূত হওয়ায় সেই পুরুষ “ঘটরদ্র” নামে খ্যাত হন। কুম্ভকারগণ ইহারই বংশসস্তুত বলিয়া প্রকাশ। প্রাচীন গ্রন্থাদিতে “ঘটখপর” বলিয়া ইহাদের উল্লেখ দেখা যায়, এবং ব্যবহারেও কুমারগণ আপনাদিগকে এদেশে “রুদ্রপাল” বলিয়া লিখাইবার প্রমাণ পাওয়া যায় । গোয়ালা—শ্ৰীহট্টে অতিশয় অল্প সংখ্যক আছে। ইহাদের ব্যবসায় দধি, দুগ্ধ বিক্রয়। কৃষি ব্যবসায়ও তাহদের মধ্যে আছে। পশ্চিম বঙ্গে কৃষি ব্যবসায়ীরা পল্লবগোপ ও দুগ্ধাদি বিক্রেতাগণ আহিরীগোপ নামে খ্যাত। পূৰ্ব্বাঞ্চলে রাজশাহীতে কতক আহিরীর বাস আছে। ব্রজের গোপরাজ নন্দ এবং এই বংশীয় ছিলেন। তাতি—র্তাতিদের মধ্যে বঙ্গের বসাকগণ প্রসিদ্ধ । ইহারা দে, দত্ত, দাস, শীল, গুই ইত্যাদি উপাধিধারী। ঢাকা, মুর্শিদাবাদ, শান্তিপুর প্রভৃতি স্থানের তাতিগণ বস্ত্রবয়নে বঙ্গের গৌরবের সামগ্রী। শ্রীহট্টে ইহাদের সংখ্যা যৎসামান্য। তেলী—ইহাদের উৎপত্তির উপাখ্যানটির বড়ই সুন্দর। কথিত আছে, একদা দেবাদিদেব মহাদেবের সুমধুর সঙ্গীত শ্রবণে ভগবান বিষ্ণু ঘৰ্ম্মাক্ত হইয়া উঠিলে, সেই স্বেদবারি হইতে গঙ্গার উদ্ভব হইল, প্রজাপতি গঙ্গাদেবীকে স্বীয় কমণ্ডলু মধ্যে ধারণ করিয়া, বিষ্ণুদেহ মাৰ্জ্জন করিলে, নারায়ণ-দেহ হইতে একটি তিল বহির্গত হয়। ব্ৰহ্মা মনোহর পাল নামক মুনিকে সেই তিল রক্ষার ভার দেন; তজ্জন্য তিনি তিলী বা তেলী নামে খ্যাত হন। কথিত আছে যে, তৈলিকগণ সেই পাল-ঋষি বংশীয় বলিয়া পাল নামে খ্যাত। বঙ্গে ইহাদের মধ্যে চারিশ্রেণী আছে, তন্মধ্যে অনেক বড় বড় জমিদার ও প্রতিপত্তিশালী লোক বিদ্যমান। শ্রীহট্টেরও ইহাদের মধ্যে সম্পন্নব্যক্তির অভাব নাই। নাপিত—কথিত আছে, সৃষ্টির আদিতে ভগবতীর ইচ্ছা ক্রমে হাড়োদাস ও ব্রহ্মদাস নামে দুইজন দৈবপুরুষের উদ্ভব হয়, এই দৈবপুরুষদ্বয়ের সন্তানই নরসুন্দর বা নাপিত নামে খ্যাত। বঙ্গে ইহাদের প্রামাণিক, শীল, রক্ষিত, নরসুন্দর ইত্যাদি খ্যাতি দৃষ্ট হয় এবং প্রধান ও সামাজিক নামে দুইটি শ্রেণী আছে। শ্রীহট্টে তাহারা নাই বা নাউ ও চন্দ্র বা চন্দ্রবৈদ্য নামে পরিচিত। বারুজী—বারুই জাতি নবশায়ক জাতির অন্তর্গত বলিয়াই খ্যাত। কিন্তু অনেক জাতি তত্ত্বজ্ঞ ব্যক্তি ইহাদিগকে বৈশ্য বলিযাই উল্লেখ করেন। তাহারা নিজেও যে তাহা অনুমোদন করেন, শিক্ষিত বারুজী মধ্যে (পশ্চিম বঙ্গে) “বৈশ্য বারুজী সভা” তাহার প্রমাণ। ইহাদের ভদ্র, মিত্র, দত্ত, নন্দী, দেব, রাহা, রক্ষিত ইত্যাদি পদবী থাকায় কেহ কেহ ইহাদের মূল কায়স্থ বলিয়া অনুমান করেন। ইহাদের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন সমাজ আছে। শ্রীহট্টের বহু বারুজী কায়স্থ সমাজের অন্তর্ভুক্ত হইয়া পড়িয়াছে বলিয়া অনেকের বিশ্বাস। ময়রা—ইহাদের মধ্যে দুই বিভাগ; এক বিভাগ হলিফ বা কৃষিজীবী, অপরের মিষ্টান্ন প্রস্তুত করিয়া থাকে। দাস, নদী, কুণ্ডু, রায় ইত্যাদি উপাধি ইহাদের মধ্য দৃষ্ট হয়। শ্ৰীহট্টে ইহাদের সংখ্যা অতি সামান্য।