২৩ প্রথম অধ্যায় ঃ মধুকর বংশ বর্ণন 0 শ্ৰীহট্টের ইতিবৃত্ত সমাগত হইয়াছিলেন বলিয়া তদ্বংশীয়গণ কীৰ্ত্তন করিয়া থাকেন। তিনি তীর্থ পর্যটনে আসিয়াছিলেন এবং চন্দ্রনাথ দর্শনান্তর পত্নীর সহিত “কামরূপ গমন” মানসে বরবক্র পার হইয়া এক বৃক্ষতলে শ্রাস্তিদূর করে উপবেশন করেন। পথশ্রমে তিনি অত্যন্ত কাতর ও ক্লান্ত হইয়াছিলেন, এবং অপরিচিত বিদেশে বিপন্ন হইয়া পড়িয়াছিলেন। দেহের অবসন্নতায় তাহার মনে হইয়াছিল, তিনি ততদূরে যাইতে সমর্থ হইবেন না। পক্ষান্তরে বহুদূরে ভাগীরথী রহিয়াছেন, যদি শেষদিন সমুপস্থিত হয়, গঙ্গদর্শনও ঘটিবে না। এইরূপ চিন্তায় আদিদেব ক্লিষ্ট হইলে মা কামাখ্যা আর স্থির থাকিতে পারিলেন না, বিপন্ন সন্তানের প্রতি করুণা হইল, করুণাময়ী তৎপ্রতি সেই স্থানে অবস্থানেরই প্রত্যাদেশ করিলেন, সেই স্থানে গঙ্গাদর্শনেই তাহার অভীষ্ট সিদ্ধ হইবে বর দিলেন। তাহাই হইল, দেবীর বরে ভাবুক ভক্তের নেত্রপথে গঙ্গার রূপপ্রভা প্রতিভাত হইল— বরবক্র-নীরে তাহার গঙ্গা দর্শন ঘটিল। তদবধিই এইস্থান বরগঙ্গা ইতি খ্যাতিলাভ করে। বরগঙ্গা নামের অন্য একটি কারণও আমরা পরে প্রদর্শন করিব। এই আদিদেবের ষষ্ঠ পুরুষে হিরণ্যগর্ভ জন্মগ্রহণ করেন, তাহার এই সুলক্ষণা কন্যা ছিল, উহার নাম চণ্ডীদেবী। বৎস গোত্রজ পাশ্চাত্য বৈদিক মধুকর মিশ্রের সহিত এই চণ্ডীদেবীর বিবাহ হইয়াছিল। মধুকর মিশ্র মধুকর মিশ্র কে ছিলেন ? মধুকর মিশ্রকে কেহ কেহ কান্যকুজ্জাগত বলিয়া লিখিয়াছেন। কেহ বলেন, তিনি পূৰ্ব্বোক্ত পঞ্চ গোত্ৰীয়ের একতম বৎস গোত্রীয় আনন্দের সন্তান আবার আমাদিগকে কেহ লিখিয়া জানাইয়াছেন যে, মধুকর মিথিলাগত এবং তিনি বিদ্যাপতির সময়ে আগমন করেন।" এই ত্ৰিবিধ উক্তির মূলে কোন প্রবল প্রমাণই প্রদর্শিত হয় নাই। কেহ কেহ মধুকর মিশ্রকে যাতপুরাগত দাক্ষিণাত্য বৈদিক বলিয়া লিখিয়াছেন। কিন্তু মধুকর বংশীয়গণ একবাক্যে আপনাদিগকে পাশ্চাত্য বৈদিক বলেন। ফলতঃ মধুকর মিশ্র সচরাচর মিথিলাগত বলিয়াই পরিকথিত হন। ৩ কামাখ্যা পীঠ খ্ৰীষ্টীয় ১৬শ শতাব্দীতে প্রকাশিত হন, কিন্তু স্থান মাহাত্মা পূৰ্ব্বাবধি পরিজ্ঞাত ছিল, প্রাচীন শাস্ত্র গ্রন্থাদিতে এই তীর্থ প্রসঙ্গ আছে। ৪. বুরুঙ্গার রামরত্ব ভট্টাচার্য কৃত “শ্রীচৈতন্যরত্নাবলী” মতে তিনি কানাকুজাগত। বৈদিককুলমঞ্জুরী ও কুলপঞ্জিকামতে তদীয় নবম পুরুষ উধের্ব রমানাথজাত হন, তিনি কন্যকুব্জবাসী ছিলেন। মধুকর রমানাথের বংশ জাত বলিয়া কনোজ ব্রাহ্মণ হইতেছেন। মধুকর মিশ্রের বুরুঙ্গা প্রভৃতি স্থানবাসী পরবৰ্ত্তিগণ স্বগুণে সাম্প্রদায়িক শ্রেণী ভুক্ত হন, তদৃষ্টে বোধ হয় ইটাবাসী কেহ কেহ ইহাদিগকে মিথিলাগত আনন্দের সন্তান বলিয়া আমাদিগকে লিখিয়া থাকিবেন । বস্তুতঃ বঙ্গীয় কুলগ্রস্থাদি দুষ্টি করিলেন উপেন্দ্র পিতা মধুকরকে আনন্দ-সন্তান বলা যায় না। মধুকর বিদ্যাপতির সময়েও এদেশে আসেন নাই, তিনি বিদ্যাপতির পূৰ্ব্ববৰ্ত্তী কালের লোক, সমসাময়িক মহেন। সচরাচর তিনি মিথিলাগত বলিয়া উক্ত হইলেও নিশ্চিত বলা যাইতে পারে না যে তিনি কোথা হইতে আসিয়াছিলেন। ৫. মধুকর মিশ্র পাশ্চাত না দক্ষিণাত ? মধুকর পাশ্চাত কি দাক্ষিণাত বৈদিক, তদ্বিষয়ে যখন কোন আন্দোলন আলোচনা ছিল না, তখন শ্রীচৈতনা মহাপ্রভূর শ্রীহট্টাগমনের প্রমাণ সংগ্রহ কল্পে বৃত হইয়া আমবা একখানা হস্তলিখিত "শ্ৰীকৃষ্ণ চৈতন্যোদযাবলী” গ্রন্থ প্রাপ্ত হই। ওহিতে মধুক মিশ্রকে দাক্ষিণাত্য বৈদিক
