পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৪৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অদ্বৈত-প্ৰভু ধৰ্ম্ম ও শিক্ষা প্রসঙ্গ বৈষ্ণব জগতে বিখ্যাত অদ্বৈতাচার্য্যের জন্মস্থান শ্রীহট্টের অন্তর্গত লাউড়ের নবগ্রামে। ১৪৩৪ খৃষ্টাব্দে মাঘ মাসে অদ্বৈতের জন্ম হয়; তাহার পিতার নাম কুবেরাচাৰ্য্য, এবং মাতার নাম লাভাদেবী। অদ্বৈতের পিতৃদত্ত নাম কমলাক্ষ। অদ্বৈতাচার্য শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু প্ৰবৰ্ত্তিত বৈষ্ণব ধৰ্ম্মের মূল-স্তম্ভ স্বরূপ ছিলেন। অদ্বৈত আর নিত্যানন্দ, বৈষ্ণব গ্রন্থাদিতে “প্রভু” শব্দে সংজ্ঞিত হইয়াছেন। শ্রীহট্টের ইতিবৃত্তের পূৰ্ব্বাংশে অদ্বৈত প্রভুর কাহিনী স্থানে স্থানে আলোচিত হইয়াছে।’ অদ্বৈত শিশুকালাবধি মেধাবী ছিলেন। পিতাপুত্রে মধ্যে মধ্যে যে সকল কথাবাৰ্ত্ত হইত, তাহাতেই তাহার প্রমাণ পাওয়া যায়। একদা নবগ্রামের রাজপূজিত কালীদেবীর সম্মুখে বলি প্রদান হইতে দেখিয়া, কমলাক্ষ ব্যথিত হন। ছাগ শিশুর চীৎকার ও মৃত্যু যন্ত্রণা দৃষ্টে কমলাক্ষের কোমল চিত্তে অসহ্য ক্লেশ উপস্থিত হয়, তাহাতেই তিনি তীব্রভাবে ইহার অবিধেয়তা সম্বন্ধে তর্ক উপস্থিত করিয়াছিলেন, তাহার মতে বলিতে মাযের পূজাই হয় না। যিনি জগন্মাতা, তিনি সন্তান-শোণিত ব্যতীত কি তৃপ্তি লাভ করিতে পারেন না ?’ ভক্তিশ্রদ্ধাতেই মার আরাধনা সিদ্ধ হয়—বলিতে নহে। বলির অনুকূলে দুইচারিটি কথা বলিতে গিয়া কুবেরাচাৰ্য্যকে শেষে নিরস্ত হইতে হইয়াছিল। কুবেরাচাৰ্য্য পুত্রের প্রতিভা দর্শনে প্রীত হইয়া তাহাকে শিক্ষার্থে শান্তিপুরে প্রেবণ কবিয়াছিলেন। ঐ সময় তাহার বয়স দ্বাদশ বৎসর মাত্র হইয়াছিল। তিনি দেশেই সাহিত্য ও অভিধান সমাধা করিয়াছিলেন; শান্তিপুরে গিয়া দর্শন শাস্ত্রে অধ্যয়ন করিতে আরম্ভ করেন। পুত্রকে বিদেশে বিদায় দিয়া পিতামাতা অত্যন্ত বিচ্ছেদ-কাতর হইয়া পড়েন, তখন কোন প্রকারেই তাহারা আর দেশে তৃষ্টিতে না পারিয়া পুত্রের নিকট গমন করেন। সেই সময় কমলাক্ষের ষড় দর্শন সমাধা করিবার বড় বাকি ছিল না; পুত্রের এইরূপ কৃতিত্ব দর্শনে কুবের অতিশয় আনন্দিত হন। ১ কুবেরাচাৰ্য্য কাহিনী এবং নরসিংহ নাড়িয়াল কাহিনী পূৰ্ব্বাংশ দ্রষ্টব্য। ২ পূবর্বাংশে—১ম ভাঃ ৯ম অধ্যায় “পুণ্যতীর্থ” প্রসঙ্গ এবং ২য় ভাঃ ৩য খঃ ১ম অধ্যায দ্রষ্টব্য। এ স্থলে বহু বিস্তব অদ্বৈত-চরিত হইতে প্রধানতঃ শ্রীহট্ট সংসৃষ্ট এবং প্রধান প্রধান ঘটনাগুলিই বর্ণিত হইতেছে। ৩ “প্রাণি হিংসাযজ্ঞে যেই হয় উল্লাসিত। সে দেবীর উপাসনা না হয় উচিত। তেহো যদি জগন্মাতা জগৎ তাব পুত্র। সন্তান বধিতে কিবা আছে যুক্তি শাস্ত্র?”—অদ্বৈত প্রকাশ।