পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৪৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুর্থ ভাগ 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ১০ প্রত্যেক ব্রাহ্মণ সন্তানেব বেদ অধ্যয়ন একান্ত কৰ্ত্তব্য মনে করিযা ধৰ্ম্মনিষ্ঠ কুবেরাচার্য বেদ অধ্যয়নের জন্য পুত্রকে আদেশ করেন। পিতৃ-আদেশে অদ্বৈত তখন বেদাধ্যায়নে নিযুক্ত হন। শান্তিপুরের নিকটে অধুনালুপ্ত পূৰ্ণব্যাপ্তি নামক স্থানে শান্তদ্বিজের চতুষ্পাঠীতে তখন চারি বেদেবই অধ্যাপনা হইত কমলাক্ষ উহার গৃহে গিয়া বেদ অধ্যয়নে নিযুক্ত হইলেন ও অল্পকাল মধ্যেই অদ্ভুত স্মৃতিশক্তিপ্রভাবে সকলকে চমকিত করিলেন। তিনি একবার মাত্র যাহা অধ্যয়ন করিতেন, তাহা আর ভুলিতেন না, এজন্য সকলে তাহাকে “শ্রীতিধর” বলিত। কিছুদিন মধ্যেই কমলাক্ষ বেদশাস্ত্রে উপযুক্ততা লাভ করিলে অধ্যাপক তাহাকে “বেদপঞ্চানন’ উপাধি দিয়া বিদায় দিলেন। এই সময় কুবেরাচার্যোব গৃহে মাধবেন্দ্র পুরী নামক পরম পণ্ডিত এক যতী অতিথি রূপে আগমন করেন। তৎকালে আর্য্যাবৰ্ত্তে জ্ঞান-চর্চার বাহুল্য লক্ষিত হইত, ভক্তির আলোচনা বড় ছিল না, মাধবেন্দ্রই এদেশে ভক্তির বীজ স্থাপন করেন। অদ্বৈত গৃহাগত এই মাধবেন্দ্র পুরীর নিকটে বৈষ্ণব মন্ত্রে দীক্ষিত হন। তীর্থটান অদ্বৈতের দীক্ষা গ্রহণেব কিছুকাল পরে, নবতি বর্ষ বয়সে কুবের দেহত্যাগ করিলেন। অদ্বৈত-জননী পতিব্ৰতা লাভাদেবীর প্রাণপাখী দেহ-পিঞ্জর ছাড়িয়া তৎক্ষণাৎ পতিব অনুসরণ করিলে, পতিব সঙ্গে সঙ্গেই তাহার পরলোক গমন ঘটিল। লোকে ধন্য ধন্য করিয়া এক চিতাতেই উভয়ের দেহ অগ্নিসাৎ কবিল। অদ্বৈত যথারীতি পিতৃকৃত্য সমাপনান্তর পিণ্ডদানোদেশে গয়াধ্যমে গমন করিলেন। গয়াতে বিষ্ণুপদে পিণ্ডসমপনাস্তব তিনি তীর্থ টানে বহির্গত হইলেন। প্রথমেই তিনি রেমুণাতে গোপীনাথ দর্শন কবিয়া নাভিগষাতে গমন পূৰ্ব্বক পিণ্ডদান করিলেন। তথা হইতে শ্ৰীক্ষেত্রে গিয়া জগন্নাথ দর্শন করিলেন। জগন্নাথ দর্শনে তাহার যে অপূৰ্ব্ব ভাবোদয় হয়, বাল্যবধি যোগৈশ্বৰ্য্যশালী ও মুক্ত পুরুম হইলেও, তাহার পক্ষেও ইহা অসাধারণ বলিয়াই বোধ হইয়াছিল। তিনি কৃষ্ণপ্রেমে অনেকক্ষণ মুচ্ছিত হইয়া পড়িসাছিলেন। সে মৃচ্ছা যে ভঙ্গ হইবে, ইহা কেহই মনে করিতে পারে নাই । শ্ৰীক্ষেত্রে হইতে সেতুবন্ধ তীর্থ দর্শনোদেশে দক্ষিণ মুখে তিনি যাত্রা করেন। দক্ষিণে কাঞ্চিপুর এক প্রধান তীর্থ, ইহার উত্তরাংশ শিবকাঞ্চী এবং দক্ষিণাংশ বিষ্ণুকাঞ্চী নামে খ্যাত, এতদশনান্তে আরও দক্ষিণদিগ্বন্তী কাবেবী-তীরে তিনি উপস্থিত হন ও কাবেরী নদীতে স্নান করিয়া দক্ষিণ মথুর (মাদুরা) তীর্থে গমন করেন। তাহার পর অদ্বৈত সেতুবন্ধে উপনীত হন। লঙ্কা হইতে প্রত্যাবৰ্ত্তন কালে লক্ষ্মণ ধনুর অগ্রভাগ দ্বারা সেতুর একটি স্থান ভাঙ্গিয়া দিলে, সেই স্থান ধনুতীর্থ নামে খ্যাত হয়, অদ্বৈত এস্থানেও স্নান করেন । তাহার পর তিনি রামেশ্বর শিল দর্শনে গমন কবেন । রামেশ্বর মধবাচারী বৈষ্ণব সন্ন্যাসীগণ সঙ্গে তাহার মিলন হয়। ইহাদের নিকট শাণ্ডিলা সূত্রে ও নারদ সূত্রে ভক্তিপ্তত্ত্বব্যাখ্যা শ্রবণে তিনি পরম আনন্দ লাভ করেন। এই স্থানে তিনি মধবাচার্যের ভাষ্য এবং শ্ৰীমদ্ভাগবত শ্রবণ করেন। অদ্বৈত ‘শ্রুতিধর” ছিলেন, শ্রবণ মাত্র যে কোন বিষয় আর ভুলিতেন 8 "কুবেৰ কহে পড এবে বেদ চালি খান। অবশ্য পাইবা তাহে ব্ৰহ্মানুসন্ধান ।”—অদ্বৈত প্রকাশ। ইহা দক্ষিণাতে চেঙ্গলপু ও জেলায় অবস্থিত, কাঞ্চিপুরের বক্তমান নাম কাঞ্জিভেরাম।