পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৪৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৫ জীবন বৃত্তান্ত 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত নবদ্বীপ-প্রবাসী শ্রীহট্টের শ্রীবাস, শ্রীরাম, শ্রীপতি, শ্রীনিধি, চন্দ্রশেখর, মুরারিগুপ্ত, জগদীশ প্রভৃতি একত্রিত হইতেন। শ্রীহট্টের জগন্নাথ মিশ্রের জ্যেষ্ঠ পুত্র বিশ্বরূপও আসিতেন ও অদ্বৈতের ব্যাখ্যান শুনিয়া তৃপ্তিলাভ করিতেন।” অদ্বৈতের এই কাণ্ড দর্শনে পণ্ডিতবর্গ অবজ্ঞার হাসি হাসিতেন, কিন্তু অদ্বৈতের নিষ্ঠা ও বিশ্বাস, তদীয় বাক্যের দৃঢ়তা ও জীবনের লক্ষ্য বিচার করিয়া তাহারা বিস্মিত হইয়া যাইতেন। যাহা হউক, নবদ্বীপে অদ্বৈতের অনুরাগীর দল ক্রমশঃই বদ্ধিত হইয়া উঠিযাছিল। যে বিশাল ভক্তি-প্রবাহে একদিন শান্তিপুর ডুবুডুবু হইয়াছিল, নবদ্বীপ ভাসিয়া গিয়াছিল, যে স্রোত গৌড় বঙ্গ আপ্লাবিত কবিঘা সাগর তীরে পৌছিয়াছিল, তাহার উৎপত্তি ভূমি এই অদ্বৈত সভা বলা যাইতে পারে। অদ্বৈতের আরধনার ফল তাহার নবদ্বীপ আগমনের কিছু কাল পরেই তিনি প্রাপ্ত হন; তাহার বৈষ্ণব সভা সংস্থাপনের— তাহার গীতা ও ভাগবত বিচারের ফল কিছুকাল পরেই তিনি প্রাপ্ত হন। জগন্নাথ মিশ্রের দ্বিতীয় পুত্র বিশ্বম্ভর মিশ্র-যিনি শ্ৰীমহাপ্ৰভু অথবা শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য নামে পশ্চাৎ খ্যাত হন, তাহার আবির্ভাবেই অদ্বৈতের মনোরথ পূর্ণ হয়। উপসংহারে আমরা তাহার অমৃত-বর্মী লীলাকথা প্রকীৰ্ত্তনে লেখনী পবিত্র করিব। নানা দিন্দেশ হইতে স্রোতস্বতী সমূহ দ্রুতগতি ধাবিত হইয়া সরিৎপতিসঙ্গমে যেমন আত্মচরিতার্থতা লাভ কবে, বিভিন্ন স্থান হইতে ভক্ত বর্গ আগমন পূৰ্ব্বক তদ্রুপ শ্ৰীমহা প্রভুর সহিত সম্মিলিত হইয়া নবদ্বীপধামকে ভক্তিতরঙ্গে ডুবাইয়া দিয়া ছিলেন, অদ্বৈত ইহাদের মধ্যে অন্যতম এবং তিনিই প্রধান حـ- ا ছিলেন। শ্ৰীমহাপ্রভু ও অদ্বৈতের সম্মিতি বহু বিস্তুত লীলাকথা বর্ণনের একান্ত স্থানাভাব। জ্ঞান ব্যাখ্যা অদ্বৈতের জ্ঞানব্যাখ্যা একটি প্রসিদ্ধ ঘটনা। শ্ৰীমহাপ্রভু বৃদ্ধ-তপস্বী অদ্বৈতাচার্যাকে গুরুবৎ ভক্তি করিতেন, সময় সময় পদধূলি গ্রহণ করিতেও কুষ্ঠিত হইতেন না; ইহাতে অদ্বৈত মরমে মরিয়া যাইতেন। অদ্বৈতাদি ভক্তবর্গ শ্ৰীমহাপ্রভুর ভগবত্ত্বা সত্য কি না, তদ্বিষয়ে কঠোর পরীক্ষা করিয়াছিলেন। যাহাব অতিবিত্ত পরীক্ষা কবা যাইতে পারে না, তদ্রুপ পরীক্ষা করিয়া তাহদের দৃঢ় বিশ্বাস জন্মিযাছিল যে, শ্রীগৌরাঙ্গ মনুষ্য নহেন। সুতরাং বয়সে বালক হইলেও শ্রীগৌরাঙ্গকে বৃদ্ধ অদ্বৈত আন্তরিক শ্রদ্ধা কবিতেন পদধূলি লইতে তাহার শতবাব ইচ্ছা হইত, কিন্তু লৌকিক ব্যবহারে পারিতেন না। এদিকে শ্রীগৌরাঙ্গ বিপরীত ব্যবহার করিয়া বসিতেন। ইহাতে অদ্বৈতের অন্তব ব্যথিত না হইবার কথা কি ? এইরূপ ব্যবহার পরে অদ্বৈতের অসহ্য হইয়া উঠিল—ভগবানের উপর ভক্তের অভিমান হইল। অভিমানের উত্তেজনায় তিনি মনে করিলেন—“দেখিব কেমন ভগবান! তিনি যে ভক্তিবাদের পক্ষপাতী, জ্ঞানবাখ্যা করিয়া ভক্তির প্রাধান্য উড়াইয়া দিব, আমি তাহাতে দোষ দিব, ইহাতে তিনি শাস্তি করেন কি না দেখিব। আমি দণ্ড হইতেই চাহি দণ্ড ব্যক্তি পূজাহ নহে; সুতরাং দণ্ড প্রাপ্তিই আমার অভীষ্ট সিদ্ধিব উপায ।” ২১ ইহল কাহিনী পশ্চাৎ উল্লেখ করা যাইবে । ২২ "এবে জ্ঞানবাদ আমি করিব প্রচার । যাহাতে প্রভুব হয় ক্রোধের সঞ্চার।