পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৪৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৭ জীবন বৃত্তান্ত 0 শ্ৰীহট্টের ইতিবৃত্ত তাহারা বিবিধ মতবাদের সৃষ্টি করিয়া, লোকের ভ্রান্তি উৎপাদিত করিয়াছিল বলিয়া জ্ঞাত হওয়া যায়। অনেকে অনুমান করেন, বৈষ্ণব ধৰ্ম্মাশ্রিত যে সকল উপধৰ্ম্ম বঙ্গভূমে পরিলক্ষিত হয়, তন্মধ্যে কোন কোনটি ইহাদের কাহার কাহারও কত্ত্বক কল্পিত হইয়া থাকিবে। শ্ৰীমহাপ্রভু চন্দ্রশেখর আচাৰ্য্যরত্বের গৃহে কৃষ্ণলীলা নাটকাভিনয় করিযাছিলেন, এই অভিনয়ে শ্ৰীমহাপ্রভুর শিক্ষানুসারে অদ্বৈতকে কৃষ্ণ সাজিতে হইয়াছিল। পরে এই ঘটনা হইতে, র্তাহার শিষ্যগণ মধ্যে কেহ কেহ “অদ্বৈত গোবিন্দ” বলিয়া একটা মতের সৃষ্টি করেন, ইহারা অদ্বৈতকে স্বয়ং ভগবান বলিয়া ধাৰ্য্য করিয়াছিলেন; কিন্তু ইহারাও অদ্বৈত কর্তৃক পরিবজ্জিত হন; তাহাতেই এই অভিনব মত বিলুপ্ত হইয়া যায়। একথা এস্থলে উল্লেখ করার উদ্দেশ্য এই যে, ইহাতে অদ্বৈতের মাহাত্ম্য অনেকটা উপলব্ধি হইবে, তাহার মহিমায় শিষ্যবৰ্গ কীদৃশ আকৃষ্ট ছিলেন এবং তাহাকে কিরূপ উচ্চভাবে দর্শন করিতেন, এতদ্বারা তাহা বুঝা যায়। শ্ৰীমহাপ্রভু নবদ্বীপে ভক্তবর্গ সহ যে যে লীলা করেন, তাহার প্রায় প্রত্যেকটিতে অদ্বৈতের যোগ ছিল, যাহারা গৌরলীলা অধ্যয়ন করিয়াছেন, ইহা তাহদের অবিদিত নহে। শেষ কথা শ্ৰীমহাপ্ৰভু সন্ন্যাস গ্রহণ করিযা প্রথমেই শান্তিপুরে অদ্বৈত গৃহে উপনীত হইয়াছিলেন। অদ্বৈত হারানিধি পুনপ্রাপ্ত পৰম হৰ্ষিত হন। অদ্বৈত-গৃহে তৎক্ষণাৎ ভক্তবর্গে পরিপূরিত হইয়া উঠিয়াছিল, মহামহোৎসব আরম্ভ হইয়াছিল। শ্ৰীমহাপ্রভুকে লইয়া ভক্তগণ তখন হরিসঙ্কীৰ্ত্তন আরম্ভ করিয়াছিলেন সেই কীৰ্ত্তনে অদ্বৈত কত্ত্বক বিদ্যাপতি কৃত একটি সুন্দর পদগীত হইয়াছিল, পদটি এই— “কি কহব রে সখি, আনন্দ ওর, চিরদিনে মাধব মন্দিরে মোর।” ইত্যাদি। শান্তিপুরে কযেক দিন ভক্তের আনন্দ বিধান করিয়া শ্রীগৌরাঙ্গ অবশেষে নীলাচলে গমন কবেন। অন্যান্য ভক্তবর্গসহ অদ্বৈত প্রতিবর্ষে নীলাচলে গিয়া তাহার সহিত সম্মিলিত হইতেন ও রথোৎসবের পরে চলিয়া আসিতেন। একবার অদ্বৈত শ্ৰীমহাপ্রভুকে বড়ই উত্যক্ত করিয়াছিলেন। শ্ৰীমহাপ্ৰভু সহজ অবস্থায় কখনও এরূপ ভাব প্রকাশ করেন নাই যে, তিনি অবতার। অবতার বলিয়া দৈবাৎ কেহ বলিয়া ফেলিলে তিনি বড়ই বিরক্ত হইতেন, তাই ভক্তগণ ভয়ে একথা মুখে আনিতেন না। নীলাচলে একদিন অদ্বৈত তাহাই করিয়া বসিলেন। শ্রীচৈতন্য বিষয়ক সঙ্গীত করিতে তিনি ভক্তবর্গকে অনুরোধ করিলেন, ভক্তবর্গ এই কঠিন অনুরোধ রক্ষা করিতে ভীত হইলেও বৃদ্ধ ঋষিকল্প অদ্বৈতের বাক্য তাহার লঙঘন করিতে না পারিয়া প্রস্তুত হইলেন; বিশেষতঃ অদ্বৈতের এই কথাটি সকলেরই মনের কথা ছিল। অদ্বৈত স্বয়ংই হর্ষে সঙ্গীত রচনা করিয়া দিলেন। তাহাই শ্রীগৌরাঙ্গ বিষয়ক আদি সঙ্গীত, অতএব শ্রীগৌরাঙ্গ বিষয়ক সঙ্গীতের আদি রচয়িতাও শ্রীহট্টবাসী। শ্রীগৌরাঙ্গ বিষয়ক সে সঙ্গীতটি এস্থলে উদ্ধত করা হইল— S “শ্রীচৈতন্য নারায়ণ করুণা সাগর। দীন দুঃখিতের বন্ধু, মোরে দয়া কর।”