পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৪৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২১ জীবন বৃত্তান্ত 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত আলী আমজাদ খা শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ৩য় ভাঃ ৩য় খঃ ৯ম অধ্যায়ে পৃথিমপাশার জমিদার বংশের কথা বিবৃত করা গিয়াছে, এই বংশে ১৮৬৯ খৃষ্টাব্দে মৌলবী আলী আমজাদ খাঁর জন্ম হয়। তাঁহার পাঁচ বৎসর বয়সের পূৰ্ব্বে তদীয় পিতা আলী আহমদ খাঁর মৃত্যু হয়। পিতৃ বিয়োগের পর বালক আলী আমজাদ সুবিস্তৃত জমিদারীর অধিকার প্রাপ্ত হইলে, গবর্ণমেন্ট কর্তৃক তাহার পিতামহী “ওলী” সাব্যস্ত হন, এবং শ্রীহট্টের জজ সাবেহ “একজিকিউটার” নিযুক্ত হন। আলী আমজাদ খাঁর শিক্ষার বন্দোবস্ত শ্রীহট্টেই হয়, কিছু দিন তিনি গবর্ণমেন্ট স্কুলে অধ্যয়ন করেন। আলী আমজাদ বাল্যকালে বড়ই উদার ছিলেন। যাহারা তাহার সহপাঠী ছিলেন, তাহারা ইহা বিশেষ রূপেই জানেন। কিন্তু তিনি অধিক দিন শিক্ষায় ব্যাপৃত থাকিতে পারেন নাই, শীঘ্রই জমিদারী শাসনের গুরুভার তাঁহাকে নিজহস্তে গ্রহণ করিতে হয়। শিকার সংবাদ-আলী আমজাদ খা একজন উৎকৃষ্ট শিকারী ছিলেন। প্রায়শঃ জঙ্গলে শিকারে যাইতেন। একদা শিকারে গিয়া এক বৃহৎকায় মৃগের অনুসরণে দুর্ভেদ্যবনে প্রবিষ্ট হইয়া মৃগের প্রতি বন্দুক লক্ষ্য করিতেছেন, এমন সময় দেখিলেন যে এক ভীষণ ব্যাঘ্ৰ ঐ মৃগকে আক্রমণ করিতে চেষ্টা করিতেছেন, অমনি তিনি ৭টি কাটিজ পুরিপূরিত বন্দুক ফিরাইলেন ও প্রথমেই ব্যাঘ্রকে নিহত করিলেন। মৃগটি তদবসরে সম্মুখবত্তী নদী সন্তুরণ পূৰ্ব্বক পরপারে উঠিয়া পলায়নপর হইল, কিন্তু নিষ্কৃতি পাইল না, দুইটি গুলি চালনা করিয়া তিনি মৃগকেও বধ করিলেন। তিনি একদা মুর্শিদাবাদের নবাব-পুত্রের আহানে কথায় গিয়া শিকারে নবাব-পুত্রের মনস্তুষ্টি করিয়াছিলেন, ইহাতে র্তাহার প্রায় পঞ্চদশ সহস্র মুদ্রা ব্যয়িত হয়। ১৩১০ বঙ্গাব্দে ত্রিপুরাধিপতি স্বগীয় রাধাকিশোর মাণিক্য বাহাদুর কৈলাশহরে পরিদর্শনে শুভাগমন করেন, তৎকালে খা সাহেব কৈলাশহরের দরবারে উপস্থিত হইয়াছিলেন এবং মহারাজ সহ শিকারে গিয়া তাহাকে এতদৃশ তুষ্ট করেন যে, বিনীত ভাবে প্রার্থনা করিলে, প্রত্যাগমন কালে মহারাজ র্তাহার গৃহে যাইতে স্বীকৃত হন। ত্রিপুরা-পতির অভ্যর্থনা—মহারাজের অভিপ্রায় জ্ঞাত হইতে পারিয়া খাঁ সাহেব বিশেষ আনন্দিত হন ও কৈলাশহর হইতে লংলা পর্যন্ত দশমাইল পথের দুইধারে কদলীবৃক্ষ রোপণ করতঃ তাহার নিচে পূর্ণ কুম্ভ স্থাপন করিয়াছিলেন, প্রতিবৃক্ষের উপরে রক্তবর্ণ পতাকা উড়িতেছিল এবং স্থানে স্থানে বিচিত্র তোরণ বিনিৰ্ম্মিত হইয়াছিল। মঙ্গলসূচক উলুধ্বনি করার জন্য বিচিত্ৰবেশা সধবাগণকে প্রস্তুত রাখা হইয়াছিল। অভ্যর্থনার জন্য বাটিকাতে এক বৃহৎ কৃত্রিম বিশ্রামভবন বিনিৰ্ম্মিত হইয়াছিল, তাহার ভিতরে স্বর্ণ রৌপ্য-খচিত অপূৰ্ব্ব বস্ত্র, মূল্যবান আসবাব, সুদৃশ্য মখমল ও উজ্জ্বল চন্দ্ৰাতপাদি সুশোভিত হইয়াছিল। পথের উভয় পাশ্বে লোহিত ও নীলবর্ণ পরিচ্ছদ পরিহিত পাইক পংক্তি প্রহরীরূপে দণ্ডায়মান ছিল। হিন্দু মহারাজকে হিন্দুভাবে গ্রহণের জন্য তদ্ব্যতীত বহু সংখ্যক সংকীৰ্ত্তনের দল সমুপস্থিত রাখা হইয়াছিল। নির্দিষ্ট সময়ে সেই উচ্চ সংকীৰ্ত্তন ও রমণী-কণ্ঠ নিঃসৃত উলুধ্বনির মধ্য দিয়া সপার্ষদ মহারাজের শকট ধীরে অগ্রসর হইয়াছিল। খাঁ সাহেব স্বয়ং পথপ্রদর্শক রূপে অগ্রে অগ্রে সুন্দর অশ্বারোহণে গমন করিতেছিলেন। শকট যথা নির্দিষ্ট স্থানে দণ্ডায়মান হইলে তিনি অশ্ব হইতে অবতরণ পূবর্বক নিজ কৰ্ম্মচারিগণসহ মিলিত হইয়া মহারাজকে পটমণ্ডপে লইয়া যান।