পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৪৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৩ জীবন বৃত্তান্ত 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত লোকটি দেখিতে পাইল যে, তাহার পককদলী কাচা হইয়া গিয়াছে! এই ঘটনার পর হইতে ইনি “ঠাকুর কাচা” নামে খ্যাত হন, এবং তদবধি লোকেও তাহাকে সিদ্ধ পুরুষ বলিয়া জানিতে পারে। একদা শ্রীহট্টের জনৈক ধনী সওদাগর এক ভীষণ দুর্ভিক্ষে তণ্ডুল বিতরণ পূৰ্ব্বক পুরস্কার স্বরূপ শ্রীহট্টের নবাবি প্রাপ্ত হইয়াছিলেন; কথিত আছে তিনি উহা স্বয়ং গ্রহণ না করিয়া শ্রীহট্টের অতি সন্ত্রান্ত বংশীয় এক উপযুক্ত ব্যক্তিকে ঐ পদ প্রদানের প্রস্তাব করিলে তিনি ঐ পদ প্রাপ্ত হন।" পূৰ্ব্বোক্ত সওদাগরের পূৰ্ব্বপুরুষ বৈদ্যজাতীয় ছিলেন, পরে তিনি সাহুবংশে বিবাহ করিয়া বণিগৃত্তি অবলম্বন করিয়া ছিলেন। সওদাগরের প্রতি কৃতজ্ঞতা বশতঃই হউক, অথবা মূলে বৈদ্য ও কায়স্থ জাতীয় কয়েক প্রধান ব্যক্তি কোন সামাজিক বিবাদ মূলে স্বসমাজ হইতে পৃথক হইয়া, এই সম্প্রদায় ভুক্ত হইয়া, উক্ত নবাব শ্রীহট্টীয় সাহু-সম্প্রদায়কে পুনঃ পূৰ্ব্ব উপযুক্ত স্থানে স্থাপনের চেষ্টা করিয়াছিলেন বলিয়া জনশ্রুতি আছে। একসময় উক্ত নবাব ১০৮ মূৰ্ত্তি কালী পূজার অনুষ্ঠান করিয়াছিলেন, তৎকালে পূৰ্ব্বোক্ত সঙ্কল্প কার্য্যে পরিণত করার উদ্যোগ হইয়াছিল বলিয়া কথিত আছে। জনশ্রুতি যে, এই কার্যের পূৰ্ব্ব সূচনা, স্বরূপ সিদ্ধ পুরুষ ঠাকুর কাচাকে একজন কালী পূজা করিবার অধিকার দেয়া হয়। ঠাকুর কাচা তান্ত্রিক সিদ্ধ পুরুষ ছিলেন এবং অত্যন্স কাল মধ্যে পূজা সমাধা করিয়া লন। তাঁহার পূজা সিদ্ধ হয় নাই বলিয়া আপত্তি উঠিয়াছিল; প্রবাদ এই যে তৎশ্রবণে কাচা দেবীর আবির্ভাবের প্রমাণ প্রদর্শনার্থ একটি ধান্য লইয়া মৃন্ময়ী প্রতিমার উরুদেশে একটি রেখাপাত করিলে তাহা হইতে শোণিত নির্গত হয়। কাচা ঠাকুরও নবাবকে আশীৰ্ব্বাদ প্রদান ব্যতিরেকেই চলিয়া আসেন। অতঃপর নবাবেরও পতন ঘটিয়াছিল। কাশীনাথ বালিরাশি পরগণার শঙ্করসেনা গ্রামে ১৭৯৮ খৃষ্টাব্দে কাশীনাথের জন্ম হয়, তাহার পিতার নাম সৰ্ব্বান্দ শৰ্ম্মা। কাশীনাথ বাল্যবধিই বিষয় বিরাগী ছিলেন, ধৰ্ম্মে তাহার মন একেবারে বসিত না বলিয়া তিনি বিবাহে সম্মত ছিলেন না, কিন্তু আত্মীয়বর্গ সৰ্ব্বদাই তাহাকে বিবাহের জন্য অনুরোধ করিতেন; তাহাদের অনুরোধ এড়াইতে না পারিয়া চল্লিশ বৎসর বয়সে তিনি বিবাহ করেন, কিন্তু স্ত্রীর প্রতি কিছুতেই আশক্তি জন্মিল না। তিনি নারী জাতিকে জগন্মাতার প্রতিরূপা জ্ঞান করিতেন, সুতরাং পরিণীতা পত্নীর সহিত দৈহিক সম্বন্ধ ছিল না। তিনি র্তাহাকে “মা” বলিয়া ডাকিতেন। ঈদৃশ উচ্চাঙ্গের সাধক কাশীনাথের কিছুতেই গৃহে আবদ্ধ করিয়া রাখিতে পারে নাই। কাশীনাথ প্রসিদ্ধ নিৰ্ম্মাই শিবের বাড়ীতে গিয়া সাধনায় প্রবৃত্ত হন। সেই স্থনে তিনি শব সাধনায় সিদ্ধি লাভ করে। বালিশিরার তরফদার বংশীয় চাদ তৎকালে তাহার “উত্তর সাধক” হইয়াছিলেন। তিনি নিজেই নিৰ্ম্মাই পূজা করিতেন। হরের আরাধনায় তিনি বাকসিদ্ধ হইয়াছিলেন, ২৭ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত পূৰ্ব্বাংশ ২য় ভাঃ ২য খঃ ৪ৰ্থ অধ্যায এবং উত্তবাংশ ৩য ভাঃ ২য় খঃ ৪ৰ্থ অধ্যায় দ্রষ্টব্য। শ্রীহট্টের নবাব হরকিষুণ দাস মনসুব উলমুলক বাহাদুব ঐ পদে নিযুক্ত হইযাছিলেন। ২৮ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত পূৰ্ব্বাংশ ১ম ভাঃ ৯ম অধ্যায় দেখ।